রাজধানীর উত্তরা দিয়াবাড়িতে অবস্থিত মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় দগ্ধ আরও এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২ জনে।
নিহত শিশুর নাম আইমান, বয়স ১০ বছর। শুক্রবার সকাল ৯টা ৩২ মিনিটে রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা. শাওন বিন রহমান জানিয়েছেন, আইমানের শরীরের প্রায় ৪৫ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল।
গত সোমবার (২১ জুলাই) দুপুর ১টা ১২ মিনিটের দিকে বিমানবাহিনীর একটি F-7 BGI মডেলের প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মাইলস্টোন স্কুলের হোস্টেল ভবনে বিধ্বস্ত হয়। দুর্ঘটনার সময় ভবনের নিচে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকরা অবস্থান করছিলেন। ঘটনায় মুহূর্তেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে এবং হতাহতের ঘটনা ঘটে।
সরকারি হিসাব অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৩২ জন। আহত অবস্থায় বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন আরও অন্তত ৫১ জন।
মাইলস্টোন স্কুল কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, নিহতদের মধ্যে ২০ জন শিক্ষার্থী, ২ জন শিক্ষক এবং ২ জন অভিভাবক রয়েছেন। বাকিরা প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারী ও উপস্থিত অভিভাবক।
বিধ্বস্ত বিমানটি প্রশিক্ষণরত অবস্থায় বীর উত্তম এ কে খন্দকার বিমান ঘাঁটি থেকে উড্ডয়ন করে। তবে কিছুক্ষণ পর যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে এটি বিধ্বস্ত হয়। বিমানটির পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলাম ঘটনাস্থলেই নিহত হন। তিনি শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত জনবহুল এলাকা এড়িয়ে বিমানটিকে নিরাপদ স্থানে নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন বলে জানায় বিমানবাহিনী।
ঘটনার পর সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ও র্যাব সদস্যরা দ্রুত উদ্ধারকাজ শুরু করেন। স্থানীয়রাও উদ্ধার ও আগুন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করেন। অধিকাংশ হতাহতকে দ্রুত বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়, যাদের মধ্যে অনেকের শরীরের ৩০ থেকে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত পুড়ে যায়।
ঘটনার পরপরই সরকার এক দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করে। জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয় এবং স্কুল-কলেজের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়।
এদিকে দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ নির্ণয়ে বিমান বাহিনীর পাশাপাশি বেসামরিক তদন্তকারীরাও কাজ করছেন। দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানোদের সম্মানে দেশের বিভিন্ন স্থানে শোক ও প্রতিবাদের কর্মসূচি পালিত হচ্ছে।
আইমানের মৃত্যু আরও একবার এই ভয়াবহ দুর্ঘটনার নির্মম বাস্তবতা সামনে এনেছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো ক্ষতিপূরণ ও দায়ীদের বিচারের দাবি জানাচ্ছে।
এফপি/রাজ