সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার বাংলাবাজার ইউনিয়নের আগুনরায়ের গাঁও গ্রামের প্রতিটি ঘরে যখন বিদ্যুতের আলো জ্বলছে, তখন একই গ্রামের ছয়টি পরিবার এক যুগ পার করেও রয়ে গেছে অন্ধকারে।
অবাক করার মতো হলেও বাস্তবতা হলো- যাদের উঠোন দিয়েই পল্লীবিদ্যুতের খুঁটি ও বৈদ্যুতিক তার গেছে, তাদের ঘরেই নেই বিদ্যুৎ সংযোগ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বিদ্যুতায়নের প্রায় ১২ বছর পার হয়ে গেলেও এসব পরিবার এখনো সৌরবিদ্যুতের টিমটিম আলো, মোমবাতি কিংবা হ্যারিকেনের ওপর নির্ভর করেই রাত কাটাচ্ছেন। বর্ষার দিনে সৌরবিদ্যুৎ ব্যাহত হলে তাদের রাত কাটে কুপি বাতির কষ্টসাধ্য আলোয়।
এই ছয়টি পরিবার টিনশেড ও আধাপাকা ঘরে বসবাস করেন। তারা বিদ্যুতায়নের কিছুদিন পর এখানে বসতভিটা গড়ে বসবাস শুরু করেন। আশপাশের ঘর থেকে তাদের দূরত্ব মাত্র ৫০ থেকে ৬০ মিটার। অথচ বিদ্যুৎ খুঁটি ও তার একই লাইনে থাকা সত্ত্বেও সংযোগ পাননি তারা। বিষয়টি নিয়ে উঠেছে বিদ্যুৎ বিতরণে ন্যায্যতা ও প্রশাসনিক তদারকির প্রশ্ন।
স্থানীয় বাসিন্দা বজলুর রহমান বলেন, ‘৬-৭ বছর ধরে জনপ্রতিনিধি ও পল্লীবিদ্যুৎ অফিসে ঘুরছি। কিন্তু কেউ বিদ্যুৎ দেয়নি। যারা এসেছিল, তারা বলেছিল ১.৫ থেকে ২ লাখ টাকা দিলে সংযোগ মিলবে। এত টাকা আমাদের মতো গরিব মানুষের পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়।’
অন্য এক বাসিন্দা হনুফা বেগম বলেন, ‘আমাদের উঠোন দিয়েই বৈদ্যুতিক খুঁটি গেছে, তারও গেছে, কিন্তু আলোটা যায়নি ঘরে। সন্ধ্যার পরে শিশুদের নিয়ে অনেক কষ্টে থাকতে হয়।’
পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী খাদিজা বেগম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলে, ‘পাশের ঘরে বিদ্যুৎ আছে, অথচ আমাদের ঘরে নেই। লেখাপড়ার সময় কষ্ট হয়। রাতে প্রচণ্ড গরমে ঘুমাতে পারি না, পড়তেও পারি না।’
এই বিষয়ে জানতে চাইলে দোয়ারাবাজার পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির এজিএম আব্দুর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। তারা যদি আবেদন করে, আমরা খতিয়ে দেখব।’
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) অরূপ রতন সিংহ বলেন, ‘বিষয়টি সত্যিই অদ্ভুত। পল্লীবিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে আমি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেবো।’
স্থানীয়দের দাবি, অবিলম্বে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ নিশ্চিত করা হোক, যাতে এসব পরিবারও দেশের উন্নয়নযাত্রায় সমানভাবে অংশ নিতে পারে।
এফপি/রাজ