নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ওয়েবসাইট থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ঐতিহ্যবাহী নির্বাচনী প্রতীক ‘নৌকা’।
বুধবার সকাল থেকে ইসির তালিকাভুক্ত নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর পাতায় দেখা যাচ্ছে, ‘আওয়ামী লীগ (নিবন্ধন স্থগিত)’ লেখার পাশে আর কোনো প্রতীক নেই।
ইসির আইটি শাখার সিস্টেম ম্যানেজার মো. রফিকুল হক বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, “ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে প্রতীকটি সরানো হয়েছে।”
আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যক্রম ইতোমধ্যেই স্থগিত রয়েছে। চলতি বছরের মে মাসে রাজনৈতিক সহিংসতা ও সাংবিধানিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে সরকারের নির্দেশনায় দলের নিবন্ধন সাময়িকভাবে স্থগিত করে ইসি। তবে প্রতীক হিসেবে ‘নৌকা’ তখনো ওয়েবসাইটে তালিকাভুক্ত ছিল।
গত ১৩ জুলাই জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠকে দাবি তোলে, নিবন্ধন স্থগিত দলের প্রতীক তফসিলভুক্ত থাকতে পারে না। একই দাবিতে তারা লিখিতভাবে নির্বাচন কমিশনে আপত্তি জানায়।
বৈঠক শেষে এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব জহিরুল ইসলাম মুসা বলেন, “নৌকা প্রতীক তালিকায় থাকা আইনগতভাবে অযৌক্তিক। আমরা আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো প্রস্তাব থেকে প্রতীকটি বাদ দেওয়ার যৌক্তিকতা তুলে ধরেছি।”
এরপর ১৫ জুলাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ফেসবুক পোস্টে প্রশ্ন তোলেন, “অভিশপ্ত নৌকা মার্কাটাকে আপনারা কোন বিবেচনায় আবার শিডিউলভুক্ত করতে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠালেন?”
এই মন্তব্য ও চাপের প্রেক্ষিতে বুধবার ইসি ওয়েবসাইট থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘নৌকা’ প্রতীকটি অপসারণ করা হয়।
বর্তমানে নির্বাচন কমিশনের তালিকাভুক্ত প্রতীক সংখ্যা ৬৯টি। এর মধ্যে ৫১টি রাজনৈতিক দলের জন্য এবং ১৮টি স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য সংরক্ষিত। নতুন তালিকা চূড়ান্ত হলে প্রতীকের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ১১৫টি। আইন মন্ত্রণালয়ে এই সংক্রান্ত একটি সংশোধনী প্রস্তাব ইতোমধ্যে পাঠানো হয়েছে।
নির্বাচনী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘নৌকা’ প্রতীকের অপসারণ শুধু একটি প্রতীক নয়, বরং বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি যুগের ইঙ্গিতবাহী সমাপ্তি।
নিবন্ধন স্থগিত আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক অঙ্গনে ফের সক্রিয় হতে পারবে কি না, কিংবা প্রতীক ফিরে পাবে কি না- তা নির্ভর করবে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও আদালতের রায়ে।
এ নিয়ে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি আওয়ামী লীগের স্থগিত নেতারা।
এফপি/রাজ