জয়পুরহাটে চিরি নদীর ওপর সেতু নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে। এক বছরেই সেতুটি দেবে যাওয়াসহ বিভিন্ন অংশে ফাটল ধরেছে। এতে আশঙ্কা রয়েছে যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটার। চরম ঝুঁকির মধ্যে চলাচল করছেন হাজার হাজার মানুষ।
এদিকে ঠিকাদার বলছেন, এ কাজের অভিজ্ঞতা তাদের নেই। আবার কাজের বিল উত্তোলন নিয়ে রয়েছে নানা ধোঁয়াশা। বিএমডিএর (বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ) সহকারী প্রকৌশলী বলছেন, ঠিকাদারকে বেশির ভাগ বিল দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে একই অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী বলছেন, এ কাজে কোনো বিল দেওয়া হয়নি।
জানা গেছে, ২০২৪ সালের ২৫ মার্চ জেলার সদর উপজেলার উত্তরজয়পুর এলাকায় চিরি নদীর ওপর ৬৫ ফুট সাবমারজেডওয়্যার অ্যান্ড ফুটওভারব্রিজের নির্মাণকাজ শুরু করে রাজশাহীর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রফিক অ্যান্ড মীম ব্রাদাস। কাজের ব্যয় ধরা হয় ৭২ লাখ ৭৩ হাজার ৪৩৯ টাকা। ২০২৪ সালের ৭ জুন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কাজটি বুঝে নেয় বিএমডিএ। কাজ চলার সময়েও অভিযোগ তুলেছিলেন স্থানীয়রা। ওই সময় স্থানায়ীদের কথার তোয়াক্কা না করেই কাজ সমাপ্ত করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এর এক বছর যেতে না যেতেই সেতুটির বিভিন্ন জায়গায় দেখা দিয়েছে ফাটল এবং দেবে গেছে পিলার। এতে চরম ঝুঁকির মধ্যেই চলাচল করছেন নদীর দুই পারের হাজারও মানুষ।
উত্তর জয়পুর গ্রামের বাসিন্দা গোলাম হোসেন বলেন, ‘জনগণের টাকায় সেতুটি নির্মাণ করা হলো। তারা কেন জোড়াতালি দিয়ে সেতুটি নির্মাণ করল। নির্মাণের এক বছর না যেতেই সেতুতে ফাটল ধরা শুরু হয়েছে। এ কারণে চলাচল করা অনেক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। কখন যেন ভেঙে পড়ে। আমাদের সুবিধার জন্য সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছিল, কিন্তু সুবিধা তো দূরের কথা, মরার ফাঁদ হয়ে গেছে। তাই নতুন করে সেতুটি নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি।’
একই গ্রামের ইব্রাহিম হোসেন বলেন, ‘সেতুটির মাঝখানের পিলারসহ বিভিন্ন জায়গায় ফাটল ধরায় সেতুটি একটু দেবে গেছে। দুই পাশের রেলিংয়ের অনেক জায়গাতেও ফাটল ধরেছে। পুরো সেতুটিই ঝুঁকিতে আছে। কৃষকরা পণ্য নিয়ে যেতে ভয় পাচ্ছেন। ছেলেমেয়েরা প্রতিদিন স্কুলে যাতায়াত করে। এখন আমাদের চলাচল করা খুবই ঝুঁকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
পারুল বেগম বলেন, ‘সেতুর নির্মাণকাজের সময় গ্রামবাসী প্রতিবাদ করেছিলেন। ঠিকাদার ঠিকঠাকভাবে কাজ করেননি। এমন অবস্থার জন্য ঠিকাদার ও যারা কাজ করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।’
ফরহাদ নামে আরও একজন বলেন, ‘ঠিকাদার কাজ না করে জনগণের টাকা তারা খাবে। আর রড-সিমেন্ট কম দিয়ে পাথর, বালু দিয়ে সেতু করবে। এ কারণে সেতুর এ অবস্থা। ঠিকভাবে পিলারের কাজ করেনি, পিলার দেবে যাচ্ছে। যেকোনো সময় পিলার ভেঙে যেতে পারে।’
ঠিকাদার আতাউর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে মোবাইল ফোনে তিনি বলেন, ‘বালুমাটিতে সেতুটি করা উচিত হয়নি। এ কাজের অভিজ্ঞতা আমাদেরও নাই, অফিসেরও নাই। আমরা সেতুটি মেরামত করে দিতে চেয়েছি, কিন্তু স্থানীয়রা নতুনভাবে করে দিতে বলছে। এটা কী করে সম্ভব? এ কাজের ৪৫ লাখ টাকা বিল পেয়েছি, আরও টাকা বকেয়া রয়েছে।’
বিএমডিএর সহকারী প্রকৌশলী ইকবাল হোসেন বলেন, ‘ইতোমধ্যে ঠিকাদারকে ৫৭ লাখ ৭৩ হাজার ৫২ টাকা বিল দেওয়া হয়েছে। অবশিষ্ট বিল দেওয়ার আগে নির্মাণকাজে ত্রুটির অভিযোগ আসে। এ জন্য অবশিষ্ট বিল স্থগিত করা হয়েছে। যতদিন পর্যন্ত কাজের ক্রটি সমাধান করা হবে না, ততদিন পর্যন্ত বিল দেওয়া হবে না।’
তবে ঠিকাদারকে বিল দেওয়ার কথা অস্বীকার করছেন বিএমডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী কাজী আশেকুর রহমান। তিনি বলেন, ‘সেতুটির দেবে যাওয়ার কারণে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। এ কাজে ঠিকাদারকে কোনো বিল দেওয়া হয়নি। যদি সেতু নির্মাণে কেউ গাফিলতি করে, তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঠিকাদার হোক বা তদারকির দায়িত্বে যারা ছিলেন, কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।’
এফপি/রাজ