বরগুনায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। প্রতিদিন বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা, রোগীর চাপে নাজেহাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
২৫০ শয্যার বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে এখন প্রতিদিনই ভর্তি হচ্ছেন ৬০ থেকে ৭০ জন ডেঙ্গু রোগী। জায়গার অভাবে অনেককে মেঝে, করিডর ও সিঁড়ির পাশে বিছানা পেতে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।
সর্বশেষ শুক্রবার বরগুনা সিভিল সার্জন অফিস থেকে জানা যায়, ২৪ ঘণ্টায় জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ৭০ জনের বেশি। বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি আছেন ২৫১ জন। চলতি বছরে জেলায় মোট ২,৭১১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। বরগুনা জেনারেল হাসপাতালেই মৃত্যু হয়েছে ৬ জনের, জেলায় এ পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা ২৩।
হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় চিকিৎসা সেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. তাসকিয়া সিদ্দিকী জানান, “২৫০ শয্যার হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ২০০-এর বেশি ডেঙ্গু রোগী থাকে। আমাদের এখানে আইসিইউ নেই, প্লাটিলেট পুশ করার ব্যবস্থাও নেই। পরিস্থিতির অবনতি হলে আমরা রোগীকে বরিশাল বা ঢাকায় পাঠাতে বাধ্য হচ্ছি।”
হাসপাতালে ভর্তি রোজিনা নামের এক রোগী বলেন, “ভর্তি হয়েছি পাঁচ দিন, এখনও উন্নতি নেই। বিছানা নেই, মশারি নেই, চারপাশে নোংরা। নিজেরাও রোগী, যারা সেবা দেন তারাও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।”
নাসিমা বেগম নামের আরেক রোগী বলেন, “স্বামীকে ভর্তি করতে এসে আমিও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হই। এখন দুজনই রোগী। ওষুধ-পথ্য কিনতে হচ্ছে বাইরে থেকে।”
স্থানীয় বাসিন্দা টোকোন মিয়া বলেন, “পৌরসভার নালায় পানি জমে আছে, ড্রেন পরিষ্কার হয় না। মশার উপদ্রব ভয়াবহ। এর দায় পৌরসভার গাফিলতির।”
এদিকে আইইডিসিআর-এর এক গবেষণা বলছে, বরগুনার মানুষ সুপেয় পানির জন্য বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করেন। এসব সংরক্ষিত পানির পাত্রেই জন্ম নিচ্ছে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার লার্ভা। বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব পাত্র ঢেকে না রাখলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। আক্রান্তদের অবশ্যই মশারির ভেতরে রাখতে হবে, যাতে অন্যরা সংক্রমিত না হয়।
বরগুনা জেলা স্বাস্থ্য অধিকার ফোরামের সভাপতি হাসানুর রহমান ঝন্টু বলেন, “পানি জমা রাখার পাত্র ঢেকে রাখতে হবে, বাসা-বাড়ি ও আশপাশ পরিষ্কার রাখতে হবে। একা প্রশাসনের পক্ষে কিছু করা সম্ভব না- জনসচেতনতা জরুরি।”
বরগুনায় বর্তমানে ডেঙ্গু এক ভয়াবহ মহামারির রূপ নিয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন ও সাধারণ জনগণের যৌথ উদ্যোগ ছাড়া এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ অসম্ভব হয়ে উঠছে। স্বাস্থ্যখাতের সংকট, পরিবেশের দুরবস্থা আর নাগরিক উদাসীনতা মিলে ডেঙ্গুকে করে তুলেছে আরও প্রাণঘাতী।
সতর্কতা ও করণীয়
আক্রান্তদের অবশ্যই মশারির ভেতরে রাখা
পানি জমে থাকার স্থানগুলো নিয়মিত পরিষ্কার
বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের পাত্র ঢেকে রাখা
জরুরি ভিত্তিতে মশক নিধন অভিযান চালানো
হাসপাতালের আইসিইউ ও ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিত করা
পরিস্থিতি সামাল দিতে হলে এখনই প্রয়োজন দ্রুত ও সমন্বিত ব্যবস্থা। সময় ক্ষেপণ মানেই নতুন বিপদ।
এফপি/রাজ