ইরান থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের বীরসেবা শহরে আঘাত হানার পর শুক্রবার ভোরে সেখানে আন্তঃনগর রেল চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। হামলায় বীরসেবা রেলস্টেশন এবং সোরোকা মেডিকেল সেন্টার আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।
ইসরায়েলের জরুরি সেবা সংস্থা মেগান ডেভিড অ্যাডম জানায়, হামলার সময় শহরজুড়ে সতর্কসংকেত বাজানো হয়। বীরসেবায় ভোররাতে একাধিক বিস্ফোরণ হয়। সাময়িক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে, তবে এখন পর্যন্ত কোনো মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। আহত হয়েছেন অন্তত ৭১ জন, যাদের মধ্যে অধিকাংশই হালকা আঘাত পেয়েছেন বা আতঙ্কজনিত সমস্যায় ভুগছেন।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানায়, মৃত সাগর অঞ্চলে আরও দুটি ইরানি ড্রোন প্রতিহত করা হয়েছে। এর আগেও ওই এলাকাতেই একটি ড্রোন গুলি করে নামানো হয়েছিল। হামলার পর শহরের একটি হাসপাতালের একটি সার্জিকাল ইউনিট আংশিকভাবে খালি করে রোগীদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়।
ইরানের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সাঈদ খতিবজাদে বলেছেন, “এই যুদ্ধ আমেরিকার নয়। যুক্তরাষ্ট্র যদি ইসরায়েলের পক্ষ নিয়ে সরাসরি যুদ্ধে জড়ায়, তবে পুরো অঞ্চলে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসবে।” তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যদি এতে জড়িয়ে পড়েন, তাহলে তিনি ইতিহাসে এমন এক প্রেসিডেন্ট হিসেবে পরিচিত হবেন যিনি এমন যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন, যা তার নিজের নয়।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হামলার অনুমোদন দিলেও, এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেননি। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে তিনি আরও দুই সপ্তাহ সময় নিয়েছেন।
অন্যদিকে, জার্মানি, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা জেনেভায় ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসছেন। বৈঠকের উদ্দেশ্য হলো, ইরানকে বোঝানো যে তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শুধুমাত্র বেসামরিক উদ্দেশ্যে সীমিত রাখা জরুরি। এই বৈঠকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কূটনৈতিক প্রধান কায়া কালাসও অংশ নিচ্ছেন।
ইতোমধ্যে অস্ট্রেলিয়া তেহরানে তাদের দূতাবাসের কার্যক্রম স্থগিত করেছে এবং কূটনৈতিক কর্মকর্তাদের সরিয়ে নিয়েছে। দেশটি ইরান ত্যাগ করতে চাওয়া নাগরিকদের সহযোগিতার জন্য আজারবাইজান সীমান্তে কনসুলার কর্মী পাঠাচ্ছে।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার এবং বাহরাইনের যুবরাজ সালমান বিন হামাদ আল খলিফা এক যৌথ বৈঠকে মধ্যপ্রাচ্যের চলমান উত্তেজনা প্রশমনের আহ্বান জানিয়েছেন।
ইসরায়েলি প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজগ বলেছেন, “যুক্তরাষ্ট্র যদি না-ও জড়ায়, আমরা জানি কীভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে। অতীতেও আমরা সেটা করেছি।”
এদিকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, ইরানের গিলান প্রদেশের কোলেশ তালেশান গ্রামের একটি শিল্প এলাকায় হামলার প্রস্তুতি চলছে এবং সেখানকার বাসিন্দাদের দ্রুত অন্যত্র সরে যেতে বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত ইরান পরমাণু চুক্তি থেকে ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র একতরফাভাবে বেরিয়ে আসে। ট্রাম্প প্রশাসনের সেই সিদ্ধান্তের পর থেকেই ইরান ও পশ্চিমা দেশের সম্পর্ক ক্রমেই উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই উত্তেজনা কেবল সামরিক দিক থেকেই নয়, কূটনৈতিকভাবে পুরো অঞ্চলকেই একটি গভীর অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এখন দেখার বিষয়, আগামী দুই সপ্তাহে কূটনৈতিক সমাধান আদৌ সম্ভব হয় কি না।
এফপি/রাজ