সপ্তম দিনে গড়াল ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান সংঘাত। পাল্টাপাল্টি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় মৃত্যু ও ধ্বংসের মিছিল বাড়ছে। দুই দেশের সামরিক দফতর থেকেই এসেছে জবাবি হুমকি। আর পুরো পরিস্থিতিকে আরও অস্থির করে তুলছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়ে ধোঁয়াশা।
বৃহস্পতিবার ভোরে ইরানের রাজধানী তেহরানের আকাশে সক্রিয় হয় দেশটির প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। সরকারি ঘনিষ্ঠ বার্তা সংস্থা SNN জানিয়েছে, একাধিক ড্রোন ধ্বংস করা হয়েছে রাজধানীর আকাশসীমায়। এছাড়া, দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় শহর মাশহাদ থেকে আটক করা হয়েছে ১৮ জন কথিত ‘চর’। স্থানীয় কর্তৃপক্ষের দাবি, এরা ইসরায়েলের পক্ষে আক্রমণাত্মক ড্রোন তৈরিতে যুক্ত ছিল।
অন্যদিকে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা ইরান থেকে উৎক্ষেপণকৃত দুটি ড্রোন ভূপাতিত করেছে। শত্রুপক্ষের এই আক্রমণের জেরে ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চল ও জর্ডান উপত্যকায় সতর্কতা সংকেত বাজানো হয়।
গত এক সপ্তাহে ইসরায়েলের ধারাবাহিক বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইরানের সামরিক কাঠামো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নষ্ট হয়েছে বেশ কয়েকটি পারমাণবিক স্থাপনা। নিহত হয়েছেন শতাধিক ইরানি সেনা ও বেসামরিক নাগরিক। দেশটির সামরিক সূত্রগুলো বলছে, শীর্ষ পর্যায়ের সামরিক নেতৃত্ব ‘প্রায় নিশ্চিহ্ন’ হয়ে গেছে।
এর জবাবে, ইরান চালিয়েছে পাল্টা হামলা। তাদের ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলায় ইসরায়েলে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ২৪ জন বেসামরিক নাগরিক। বেশ কয়েকটি শহরে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনও নির্ধারণ করা হয়নি।
এরই মধ্যে পরিস্থিতি নিয়ে মুখ খুলেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, “ইরানের পারমাণবিক ক্ষমতা, ক্ষেপণাস্ত্র ভাণ্ডার ও প্রধান কার্যালয়গুলোর উপর একযোগে হামলা চালিয়ে হুমকি নির্মূল করছে ইসরায়েল।”
তবে সবচেয়ে বেশি নজর কাড়ছে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এখনও পরিষ্কার করে বলেননি, ওয়াশিংটন সরাসরি এই যুদ্ধে যুক্ত হবে কিনা। হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, “আমি ইরানে হামলা করতেও পারি, আবার নাও করতে পারি। কেউ জানে না আমি কী করব।”
তবে পরে আরেকটি বক্তব্যে ট্রাম্প জানান, ইরানের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা ওয়াশিংটনে আলোচনার জন্য আগ্রহ দেখিয়েছেন। যদিও তিনি ইঙ্গিত দেন, আলোচনার সময় সম্ভবত ইতোমধ্যেই পার হয়ে গেছে। তার আগের এক বক্তব্যে ইরানকে “নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ”-এর আহ্বান জানিয়ে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন তিনি।
এই প্রেক্ষাপটে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, “ইরানিরা কখনোই আত্মসমর্পণ করবে না। যুক্তরাষ্ট্র যদি হস্তক্ষেপ করে, তাহলে তাদের যে ক্ষয়ক্ষতি হবে, তা কখনো পুষিয়ে নিতে পারবে না।”
বিশ্লেষকদের মতে, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ এখন আর শুধুই মধ্যপ্রাচ্যের সীমায় আবদ্ধ নেই। যেকোনো সময় এটি রূপ নিতে পারে পূর্ণমাত্রার আঞ্চলিক বা এমনকি বৈশ্বিক সংঘাতে- বিশেষ করে যদি যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি অংশ নেয়।
অন্যদিকে, যুদ্ধ পরিস্থিতির প্রভাব পড়ছে বিশ্ববাজারেও। তেলের দাম ওঠানামা করছে, ডলার শক্তিশালী হচ্ছে, আর বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বাড়ছে অনিশ্চয়তা।
এখন বিশ্বজুড়ে নজর রয়েছে ওয়াশিংটন, তেহরান ও তেল আবিবের পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে। এই উত্তেজনার মধ্যে, পরিস্থিতি শান্ত করতে জেনেভায় আগামীকাল (২০ জুন) এক জরুরি বৈঠক বসতে চলেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের তত্ত্বাবধানে।
এফপি/রাজ