বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট জামায়াতে ইসলামীর নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডাদেশ বাতিল করেছে।
আজ (২৭ মে ২০২৫) এই রায়ের ফলে তিনি মুক্তি পাওয়ার পথে আর কোনো আইনি বাধা নেই। এটি বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার ইতিহাসে প্রথমবারের মতো, যখন মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত একজন ব্যক্তি আপিল বিভাগের রায়ে খালাস পেলেন।
২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (ICT-1) আজহারুল ইসলামকে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন রংপুর অঞ্চলে সংঘটিত গণহত্যা, ধর্ষণ, অপহরণ ও নির্যাতনের দায়ে ৬টি অভিযোগের মধ্যে ৫টিতে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয়। এরপর ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে তিনি আপিল করেন। ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখে। তবে ২০২০ সালের জুলাইয়ে আজহারের আইনজীবীরা ১৪টি যুক্তির ভিত্তিতে রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করেন।
২০২৫ সালের ২৭ মে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বেঞ্চ আজহারুল ইসলামের মৃত্যুদণ্ডাদেশ বাতিল করে তাকে খালাস দেন। আদালতে আজহারের পক্ষে আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির এবং রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাডভোকেট গাজী এইচ তামিম উপস্থিত ছিলেন। আদালত রায়ে উল্লেখ করেন যে, অভিযোগগুলো প্রমাণে সাক্ষ্য-প্রমাণের ঘাটতি রয়েছে এবং বিচারিক প্রক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখা হয়নি।
রায়ের পর জামায়াতে ইসলামীর নেতারা আদালতে উপস্থিত ছিলেন এবং এই রায়কে ‘বিচার বিভাগের স্বাধীনতার বিজয়’ হিসেবে উল্লেখ করেন। তবে মানবাধিকার সংগঠন ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সংগঠনগুলো এই রায় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছে।
এই রায় বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। তবে এই রায় ভবিষ্যতে যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়ার ওপর কী প্রভাব ফেলবে, তা সময়ই বলে দেবে।
এফপি/রাজ