বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট যুদ্ধাপরাধ মামলায় জামায়াতে ইসলামীর সাবেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামকে মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস দিয়েছেন।
মঙ্গলবার (২৭ মে) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বিভাগ সর্বসম্মতভাবে এই রায় দেন। আদালত পর্যবেক্ষণে বলেন, মামলার বিচারিক প্রক্রিয়ায় মৌলিক ন্যায়বিচার উপেক্ষিত হয়েছে, যা গুরুতর বিচারিক ত্রুটি।
২০১২ সালের আগস্টে গ্রেপ্তার হওয়া আজহারুল ইসলাম ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ কর্তৃক মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, ১৯৭১ সালে রংপুর অঞ্চলে ১,২০০ জনকে হত্যা, ১৭ জনকে অপহরণ এবং ১৩ জন নারীকে ধর্ষণের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার। ২০১৯ সালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ট্রাইব্যুনালের রায় বহাল রাখে। তবে ২০২০ সালে তিনি রিভিউ আবেদন করেন, যা ২০২৫ সালের মে মাসে শুনানি শেষে আদালত খালাসের রায় দেন।
রায়ের পর বুধবার (২৮ মে) সকালে তিনি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাকে একটি কালো গাড়িতে করে শাহবাগ চত্বরে আনা হয়, যেখানে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে তাকে গণসংবর্ধনা দেওয়া হয়। সংবর্ধনা মঞ্চে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি বলেন, “আমি প্রায় ১৪ বছর কারাগারে থাকার পর আজ সকালে মুক্তি পেলাম। আমি এখন মুক্ত, আমি এখন স্বাধীন। এই স্বাধীন দেশে স্বাধীন নাগরিক এখন।”
তিনি আরও বলেন, “যাদের ফাঁসির কাষ্ঠে ঝোলানো হয়েছে, বিচারের নামে তাদের হত্যা করা হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারা যেখানে যে পর্যায়ে জড়িত, তাদের সবাইকে আইনের আওতায় এনে বিচার করা হোক। তা না হলে খারাপ সংস্কৃতি চালু থাকবে, এখান থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।”
আজহারুল ইসলামের খালাসের রায়কে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলো এই রায়ের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছে। রংপুরে জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে বামপন্থীদের সংঘর্ষে অন্তত পাঁচজন আহত হয়েছেন।
এই রায় বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থায় একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এটি যুদ্ধাপরাধ মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তির প্রথম খালাসের ঘটনা। রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে বিচার ব্যবস্থার স্বচ্ছতা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার দাবি আরও জোরালো হয়েছে।
আজহারুল ইসলামের মুক্তি ও তার বক্তব্য দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। বিচার ব্যবস্থার সংস্কার এবং অতীতের বিচার প্রক্রিয়াগুলোর পুনর্মূল্যায়নের দাবি এখন আরও জোরালোভাবে উঠছে।
এফপি/রাজ