চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলা সদর বটতলী মোটর স্টেশনের পূর্বপাশের আমিরাবাদ ইউনিয়নস্থ জলদাশ পাড়ার জনগণ করুণ অবস্থায় জীবনযাপন করছেন।
পাড়াটি চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের সামান্য ব্যবধানে উপজেলার আমিরাবাদ ইউনিয়নের বোয়ালিয়া খালের তীরে অবস্থিত। এর আদি নাম ছিল ঢোম পাড়া। বিভিন্ন অনুষ্ঠিানে ঢোল-বাজনা বাজিয়ে পাড়ার লোকেরা তাঁদের ব্যয়ভার নির্বাহ করতেন।
পরবর্তীতে পূর্বের পেশার পাশাপাশি বিভিন্ন পুকুর ও দিঘীতে জাল দিয়ে মাছ শিকার করার পেশার সহিত জড়িত হওয়ায় পাড়াটি জলদাশ পাড়া নামে পরিচিতি লাভ করে। বর্তমানে পাড়ার লোকজন উল্লেখিত উভয় পেশার সাথে জড়িত থাকলেও প্রজন্মদের মধ্যে অনেকেই ভিন্ন ভিন্ন পেশায় জড়িত হয়ে পড়েন।
আয়তনের দিক দিয়ে পাড়াটি বড় নয়। স্বল্প আয়তনবিশিষ্ট এ পাড়ায় বর্তমানে শতাধিক পরিবার বসবাস করছেন। অধিকাংশ বাড়িঘর জরাজীর্ণ। অভাব-অনটন ও দারিদ্রতার নির্মম কষাঘাতে তাঁরা মানবেতর জীবন যাপন করে যাচ্ছেন। পাড়া সংলগ্ন পশ্চিম পাশে রয়েছে ভরাট রোয়ালিয়া খাল। অপর তিন পাশে রয়েছে অন্যজনের মালিকানাধীন জায়গা। তাই চলাফেরা করার জন্য পাড়ার লোকদের নিজস্ব কোন রাস্তা নেই। প্রতিনিয়ত অন্যের জায়গার উপর দিয়ে তাঁরা চলাফেরা করেন। কিন্তু বর্ষায় পাড়ার লোকজন ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন হন। বাণের পানির অথৈ জলে পুরো পাড়াটি প্লাবিত হয়। এমনকি বুক পরিমাণ পানিতে তাঁরা বন্দী হয়ে থাকেন। ওই সময় অনেকেই বিভিন্ন নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেয় এবং কেউ কেউ প্লাবিত বাড়িঘরের উপরে অবস্থান নিয়ে সময় অতিবাহিত করেন। মাতা-পিতা বিপাকে পড়েন অবুঝ শিশু সন্তানদের নিয়ে। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান সংকটে তখন তাঁরা একেবারে অসহায় অবস্থায় কালযাপন করেন।
গত ২৭ মে এলাকাটি পরির্দশনকালে তাঁদের উপরোক্ত করুণ পরিণতির কথা উক্ত প্রতিনিধির কাছে বর্ণনা করেন। ওই সময় একান্ত আলাপ হয় পাড়ার ঝন্টু জলদাশ ও পতাপ জলদাশের সাথে।
আলাপকালে তারা জানান, বিরাজমান ভয়াবহ ভোগান্তির কথা। বাসস্থান সংকটে তাঁরা যেমন দিশেহারা, এর চেয়ে বেশী ভোগান্তির শিকার যাতায়াত ব্যবস্থায়। তাঁদের পাড়ার সহিত সংযুক্ত নিজেদের কোন রাস্তা নেই। তাই যাতায়াত সমস্যাটাই তাঁদের জন্য খুবই মারাত্নক।
তারা আরো জানান, গত বছরের ভয়াবহ বন্যায় পুরো পাড়াটি বাণের পানিতে প্লাবিত হয়। পানিবন্দী অবস্থায় তারা সীমাহীন দূর্ভোগে সময় অতিবাহিত করেছেন। একই সময় পাড়ার ২০/২২ টি বসতবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছিল।
এখনো আর্থিক দূরাবস্থার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের লোকেরা বাড়িগুলো পুণরায় মেরামত করতে পারেননি। বিশেষ করে ময়লা-আবর্জনা ফেলার কারণে বোয়ালিয়া খালটি ভরাট হয়ে যায়। এ ব্যাপারে দেখার কেউ নেই। ভরাট বোয়ালিয়া খালের পানি প্রবাহ বাঁধাগ্রস্ত হওয়ায় তাদেরকে প্রতি বর্ষায় এহেন করুণ পরিণতির সম্মুখীন হতে হয় বলে উল্লেখ করেন। তাই তাঁরা এ ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের শুভদৃষ্টি দাবি করেছেন।
এ প্রসঙ্গে আমিরাবাদ ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম’র সহিত আলাপ করলে তিনি বলেন, খাল খনন ও সংষ্কার করার বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডের এখতিয়ারভুক্ত। তিনি এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের শুভ হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। তাঁর ইউনিয়ন পরিষদের এখতিয়ারভুক্ত বিভিন্ন সমস্যসমূহ নিরসনে তিনি সাম্ভাব্য সহযোগিতা দিয়ে যাবেন বলে উল্লেখ করেন।
এফপি/রাজ