একই প্রতিষ্ঠানের দুই সহকারী শিক্ষকের বিরুদ্ধে সরকারি চাকরীর আচরণ বিধিমালা ভঙ্গের অভিযোগ এনে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবীতে প্রধান শিক্ষক বরাবর লিখিত আবেদন জানিয়েছে অন্য শিক্ষক ও কর্মচারীরা।
শেরপুরের নালিতাবাড়ী শহরের তারাগঞ্জ সরকারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ১৮ জন শিক্ষক-কর্মচারী গত ১ মে (বৃহস্পতিবার) এ অভিযোগ দাখিল করেন।
শিক্ষক-কর্মচারীদের এ অভিযোগের সূত্র ধরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সম্প্রতি তারাগঞ্জ সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক তৌহিদুল ইসলাম খোকনের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের গাছ কেটে আত্মসাত ও পুরনো টিন আত্মসাতের অভিযোগ এনে গত ৯ এপ্রিল শিক্ষা জেলা প্রশাসক বরাবর বেনামে অভিযোগ দায়ের করা হয়।
এদিকে ওই অভিযোগের তদন্ত নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে এলে অভিযোগকারী উল্লেখ না থাকায় পুনরায় আলী হোসেন ও মকিম উদ্দিন নামে দুই ব্যক্তি একই অভিযোগ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর করেন। পরে অভিযোগটি তদন্ত করতে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর কবীরকে দায়িত্ব দেওয়া হলে ঘটনার জট খোলে।
আলী হোসেন নামে কোন ব্যক্তির অস্তিত্ব পাননি তদন্ত কর্মকর্তা। তবে মোবাইল নম্বরের সাথে অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা হায়দার আলীর নম্বর মিলে যায়। এমন কোন অভিযোগ তিনি করেননি বলে তদন্ত কর্মকর্তাকে জানিয়ে দেন।
অন্যদিকে মকিম উদ্দিন তদন্ত কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে জানান যে, ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (কৃষি) মোস্তাফিজুর রহমান এবং সহকারী শিক্ষক (জীব বিজ্ঞান) রফিকুল ইসলাম তাকে অভিযোগপত্রে স্বাক্ষর দেওয়ার জন্য প্ররোচিত করে। তিনি বর্তমানে শারিরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ হওয়ায় না বুঝেই স্বাক্ষর করে ফেলেন। এমতাবস্থায় তিনি তার অভিযোগ লিখিত আকারে প্রত্যাহারের কথা উল্লেখ করেন।
এদিকে সরজমিনে অভিযোগের তদন্তে গেলে গাছ কেটে এবং টিন বিক্রি করে আত্মসাতের অভিযোগেরও কোন প্রমাণ পাননি তদন্ত কর্মকর্তা। এমতাবস্থায় গোপনে একই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক হওয়া সত্বেও সহকারী প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অভিযোগে মোস্তাফিজুর রহমান ও রফিকুল ইসলাম এই দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে সরকারী চাকুরী বিধিমালা লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়।
গত ১ মে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবী জানিয়ে প্রধান শিক্ষক বরাবর আবেদন করেন একই প্রতিষ্ঠানের অন্য ১৮ জন শিক্ষক-কর্মচারী।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হারুন-অর-রশিদ জানান, দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে চাকুরী বিধিমালা লঙ্ঘনের অভিযোগে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে অন্য শিক্ষক-কর্মচারী যে আবেদন জানিয়েছেন তা তদন্তাধীন। তদন্তসাপেক্ষে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর কবীর জানান, সহকারী প্রধান শিক্ষক তৌহিদুল ইসলাম খোকনের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছিল তার কোন সত্যতা পাওয়া যায়নি। অনেক আগে ওই সময় কমিটি সভা ডেকে লিখিতভাবে রেজুলেশন করে গাছ কেটে বিদ্যালয়ের আসবাবপত্র বানানো হয়েছিল। পুরনো টিনগুলো এখনো মজুত করা আছে। কাজেই আত্মসাতের বিষয়টি মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। তাছাড়াও অভিযোগকারী নিজেই অভিযোগ প্রত্যাহার করেছেন। আরেকজনের অস্তিত্বই পাওয়া যায়নি।
এদিকে এসব বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে সহকারী শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান জানান, তিনি সহকারী প্রধান শিক্ষক তৌহিদুল ইসলাম খোকনের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করেননি। বিষয়টি তার জানা নেই। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগের বিষয়টিও তিনি জানেন না বলে দাবী করেন। অপর সহকারী শিক্ষক রফিকুল ইসলামের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।
সহকারী প্রধান শিক্ষক তৌহিদুল ইসলাম খোকন জানান, প্রধান শিক্ষক অল্প কিছুদিনের মধ্যেই অবসরে যাবেন। নিয়মানুযায়ী ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে তার নাম আসবে। এমতাবস্থায় নানা অভিযোগে ফেলে তাকে অপসারণ করানো গেলে রফিকুল ইসলাম অথবা মোস্তাফিজুর রহমান এ দায়িত্ব পাবেন। এমন পরিকল্পনা করেই ওই দুই শিক্ষক তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে গিয়ে চাকুরী বিধিমালা লঙ্ঘন করেছেন।
এফপি/রাজ