গত ১৩ নভেম্বর পিপি হিসাবে যোগদানের পর থেকে জামালপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আনিসুজ্জামানের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ দলীয় আসামিগণদের জামিন করে দেওযার চুক্তি এবং বিভিন্ন থানায় মামলা নেয়া ও না নেয়া কর্মকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে আদালতের ৪৯ জন সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) অনাস্থা প্রস্তাব দিয়েছেন।
রবিবার সকালে ৪৯ জন সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটরদের (এপিপি) স্বাক্ষরিত লিখিত অভিযোগ থেকে এই তথ্য জানা গেছে।
লিখিত অভিযোগে বলা হয় তিনি পিপি হিসাবে যোগদানের পর থেকে আওয়ামী লীগ দলীয় আসামিগণদের জামিন করে দেওয়ার জন্য চুক্তি নেন। তার জুনিয়র ও বন্ধু আইনজীবিদের মাধ্যমে জামিনের আবেদন করিয়ে থাকেন। কোর্টে আসামিদের বিরুদ্ধে শুনানী চলাকালে আসামির পক্ষের আইনজীবিকে জামিনের বিভিন্ন বিষয় উপস্থাপন করার জন্য কানে কানে পরামর্শ দেন। যা উপস্থিত আইনজীবিরা প্রত্যক্ষ করেন। আদালতের বিজ্ঞ বিচারক তাকে রাষ্ট্রপক্ষে তার বক্তব্য উপস্থাপন করার জন্য বললে তিনি নমনীয়তা প্রকাশ করেন।
তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় মামলা নেয়া এবং না নেয়ার সুপারিশের অভিযোগ রয়েছে। যা পিপি পদে থেকে সম্পূর্ণ বেমানান।
তিনি গত ১ মে ১টি মামলা রেকর্ড করার জন্য বকশীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার(ওসি) সাথে আপত্তিকর ভাষায় কথাবার্তা বলেন। এক পর্যায়ে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তাকে যে ভাষা সম্বাোধন করেছেন তাতে আইনজীবিদের সম্মান ক্ষুন্ন হয়েছে।
পিপি আনিসুজ্জামানের আচার আচরণ,কথাবার্তা আপত্তিকর। তিনি প্রায় সময় সিনিয়র আইনজীবিদের সর্ম্পকে বিরূপ ও অসৌজন্যমূলক মন্তব্য করেন। এ ছাড়া সহকারি পাবলিক প্রসিকিউটরদের তুচ্ছ তাচ্ছিল করেন।
এই সব অভিযোগে আনিসুজ্জামানকে পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) পদে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে নৈতিক অধিকার হারিয়েছেন বিধায় তাকে এই পদ থেকে অপসারণের দাবি করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ১ মে একটি মামলা রেকর্ড না করায় জামালপুরের বকশীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার শাকের আহমেদকে আওয়ামী লীগের ‘দোসর’ আখ্যা দিয়ে চাকরি ছেড়ে দিতে বলেন জামালপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আনিসুজ্জামান। এ সংক্রান্ত একটি অডিও রেকর্ড সামাজিকমাধ্যমে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে আদালতের এপিপি, পিপি এবং জেলা আইনজীবী সমিতির নেতৃবৃন্দ জরুরী বৈঠক করেন।
আনিসুজ্জামান পিপি পদে দায়িত্বের পাশাপাশি বকশীগঞ্জ পৌর বিএনপির সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
গত ২৭ এপ্রিল মারধরের অভিযোগে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আশিকুর রহমান তুলন বাদী হয়ে থানায় ১৬ জনের নাম উল্লেখ করে একটি লিখিত অভিযোগ দেন।
এদিকে, বিষয়টি মিমাংসা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় বিএনপির পক্ষ থেকে। আশিকুর রহমান তুলনের থানায় দেওয়া অভিযোগটি মামলা রুজু না করায় ক্ষুব্ধ হয়ে বকশীগঞ্জ পৌর বিএনপির সভাপতি আনিসুজ্জামান গত বৃহস্পতিবার রাতে বকশীগঞ্জ থানার ওসি খন্দকার শাকের আহমেদের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলেন। এ সময় মামলা নিতে অস্বীকৃতি জানালে ওসিকে চাকরি ছেড়ে দিতে বলেন বিএনপি নেতা আনিসুজ্জামান।
মোবাইলে ওসিকে চাকরি ছেড়ে দেওয়ার কথোপকথনের একটি অডিও রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। গত শুক্রবার দুপুরে পৌর বিএনপির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন ডেকে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন বিএনপি নেতা আনিসুজ্জামান।
এফপি/রাজ