ছয় দফা দাবিতে আন্দোলনরত সরকারি ও বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা সারা দেশের একযোগে কাফন মিছিল করছেন।
শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) জুমার নামাজ শেষে রাজধানীর তেঁজগাওয়ে মিছিল করেন ঢাকা পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীরা।
দুপুর ২টার দিকে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের হল মসজিদ প্রাঙ্গণ থেকে কাফন মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি তেজগাঁও আর্দশ স্কুল অ্যান্ড কলেজের রোড ধরে মহাসড়কে জোরালো মিছিল নিয়ে সাত রাস্তা হয়ে দক্ষিণ গেটে অবস্থান নেন তারা।
এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ‘কারিগরি ছাত্র আন্দোলন, বাংলাদেশে’র মিডিয়া সেল সম্পাদক (অস্থায়ী) মো. সাব্বির আহমেদ সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে কাফন মিছিলের বিষয়টি জানানো হয়। এতে বলা হয়, শুক্রবার সারা দেশের সব পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট বাদ জুমা একযোগে ‘৮৭ এর কাফন আন্দোলন’ এর ন্যায় কাফনের কাপড় মাথায় বেঁধে গণমিছিল করবে।
ছয় দফা দাবি আদায়ে আন্দোলনের অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার ঢাকাসহ সারা দেশে রেলপথ অবরোধ করার ঘোষণা দিয়েছিলেন এই শিক্ষার্থীরা। তবে সচিবালয়ে বৈঠকের আহ্বানের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীরা ‘রেলপথ ব্লকড’ কর্মসূচি শিথিল করেন।
বৃহস্পতিবার বিকেলে আন্দোলনরত পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধি দল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে জানান, তারা ‘সন্তুষ্ট’ হতে পারেননি। তারা কঠোর কর্মসূচি দেবেন এবং দাবি আদায়ে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
এর আগে গত বুধবার দিনভর তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তা মোড় অবরোধ করে রাখেন তারা। এদিন সারা দেশে পলিটেকনিকের সামনের সড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো—জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের অবৈধ পদোন্নতির রায় হাইকোর্ট কর্তৃক বাতিল করতে হবে। ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের পদবি পরিবর্তন, মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের চাকরিচ্যুত করতে হবে। ২০২১ সালে রাতের আঁধারে নিয়োগপ্রাপ্ত ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের নিয়োগ সম্পূর্ণভাবে বাতিল এবং সেই বিতর্কিত নিয়োগবিধি অবিলম্বে সংশোধন করতে হবে।
দ্বিতীয় দাবি, ডিপ্লোমা ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে যেকোনো বয়সে ভর্তির সুযোগ বাতিল করতে হবে। উন্নত বিশ্বের আদলে চার বছর মেয়াদি মানসম্পন্ন কারিকুলাম চালু করতে হবে এবং একাডেমিক কার্যক্রম পর্যায়ক্রমে ইংরেজি মাধ্যমে করতে হবে।
তৃতীয় দাবি, উপসহকারী প্রকৌশলী ও সমমান (১০ম গ্রেড) থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত থাকা সত্ত্বেও যেসব সরকারি, রাষ্ট্রীয়, স্বায়ত্তশাসিত ও স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের নিম্ন পদে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
চতুর্থ দাবি, কারিগরি সেক্টর পরিচালনায় পরিচালক, সহকারী পরিচালক, বোর্ড চেয়ারম্যান, উপসচিব, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, অধ্যক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সব পদে কারিগরি শিক্ষাবহির্ভূত জনবল নিয়োগ নিষিদ্ধ করতে হবে এবং তা আইনানুগভাবে নিশ্চিত করতে হবে। এই পদগুলোয় অনতিবিলম্বে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনবল নিয়োগ ও সব শূন্য পদে দক্ষ শিক্ষক ও ল্যাব সহকারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে।
পঞ্চম দাবি, স্বতন্ত্র ‘কারিগরি ও উচ্চশিক্ষা’ মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা ও ‘কারিগরি শিক্ষা সংস্কার কমিশন’ গঠন করতে হবে।
ষষ্ঠ দাবি, পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগের লক্ষ্যে একটি উন্নতমানের টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। পাশাপাশি নির্মাণাধীন চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (নড়াইল, নাটোর, খাগড়াছড়ি ও ঠাকুরগাঁও) পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য অস্থায়ী ক্যাম্পাস ও ডুয়েটের আওতাভুক্ত একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে আগামী সেশন থেকে শতভাগ সিটে ভর্তির সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।
এফপি/এমআই