খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) উদ্ভুত পরিস্থিতি সমাধান গেল দুই মাসেও হয়নি, বরং পরিস্থিতি কোন পথে যাচ্ছে সেটি নিয়েই চিন্তিত সচেতন মহল। শিক্ষার্থীরা তাদের ৬ দফা দাবি থেকে ভিসির পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করছে। বিক্ষোভ মিছিল, অবস্থান কর্মসূচি ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে তারা।
বুধবার খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) উপাচার্য মুহাম্মদ মাছুদের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের এক দফা দাবির বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে মৌন মিছিল, মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
এক দফা দাবির পক্ষে শিক্ষার্থীরা বলছেন, কুয়েট ভিসি শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। ভিসি ব্যর্থতার দায় নিতে অস্বীকার করেছেন, পানির লাইন-ইন্টারনেট অফ করে দিয়ে হল থেকে শিক্ষার্থীদের বের করে দিয়েছে, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলার ইন্ধন দিয়েছেন, ভিসি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার করেছে। সেহেতু আমরা ছয় দফা থেকে এক দফা দাবি ঘোষণা করেছি। এই ভিসিকে অপসারণ করা এখন আমাদের একমাত্র দাবি। একই সাথে নতুন ভিসির অধীনে নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটির মাধ্যমে তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।
অন্যদিকে ভিসির পাশে দাড়িয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। উপাচার্যকে হয়রানি করছে দাবি করে এর প্রতিবাদ জানিয়েছেন তারা। কুয়েটে সংঘটিত অনাকাঙ্খিত ঘটনা ও উদ্ভূত পরিস্থিতিতে করণীয় বিষয়ে ভাইস-চ্যান্সেলর সঙ্গে মতবিনিময় সভাও করেছেন তারা।
শিক্ষকরা বলেছেন, বর্তমান সময়ে ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করার জন্য কিছু মহল তৎপর রয়েছে। এ সকল দুষ্কৃতকারীদের অবিলম্বে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসার দাবি জানিয়েছেন তারা। গত ১৮ ও ১৯ ফেব্রুয়ারি ছাত্র-শিক্ষক যে মর্মান্তিক হামলা ও হেনস্থার স্বীকার হয়েছে তার বিচার এবং তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী দোষীদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসার দাবি জানান তারা।
এ দিকে বৃহস্পতিবার সকালেও কুয়েটের ভিসির পক্ষে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে কুয়েতের কর্মচারী ও কর্মকর্তারা।
শিক্ষকরা সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা এবং শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর বিষয়ে সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তকে সামনে রেখেই সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করার আহবান জানান। একইসঙ্গে সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তকে অবমূল্যায়ন করে শিক্ষার্থীরা তালা ভেঙে হলে প্রবেশ করায় উপস্থিত শিক্ষকরা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এছাড়া হলের তালা ভেঙে প্রবেশ বিশ্ববিদ্যালয় তথা দেশের আইনের লংঘন বলে জানিয়েছেন কুয়েট প্রশাসন। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আরও দায়িত্বশীল আচরণ প্রত্যাশা করেছেন তারা। এছাড়া শিক্ষার্থীদের নামে দায়েরকৃত মামলা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং দ্রুত মামলা প্রত্যাহারের বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের দিক নির্দেশনা দেন। আর শিক্ষার্থীদের যেকোন প্রয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন পাশে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবিতে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়। এতে শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। এ ঘটনার পর ২৫ ফেব্রুয়ারি পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত একাডেমিক কার্যক্রম ও আবাসিক হলগুলো বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।
এর আগে সোমবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০১তম (জরুরি) সিন্ডিকেট সভায় সংঘর্ষে জড়িত থাকার অভিযোগে ৩৭ শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে আগামী ২ মে থেকে সব আবাসিক হল শিক্ষার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া ও ৪ মে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর সিদ্ধান্ত হয়। তবে গতকাল কুয়েটের দাপ্তরিক কর্যক্রম শুরু হয়েছে।
এর আগে, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় শতাধিক মানুষ আহত হন। পরদিন প্রশাসনিক ভবনসহ সব একাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা। ওই দিন দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় কুয়েটে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়। ২৫ ফেব্রুয়ারি সব আবাসিক হল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এদিকে আবাসিক হলগুলো খুলে দেওয়ার দাবিতে কুয়েটের শিক্ষার্থীরা ১৩ এপ্রিল বিকেল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিলে আন্দোলন আবারও দানা বাঁধতে থাকে। গত সোমবার রাতেও শিক্ষার্থীরা দ্বিতীয় দিনের মতো প্রশাসনিক ভবনের সামনে খোলা আকাশের নিচে রাত্রি যাপন করেন। সর্বশেষ মঙ্গলবার দুপুরে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের এক দফা দাবি ঘোষণা করেন এবং তালা ভেঙে হলে প্রবেশ করেন।
এফপি/এমআই