পেপ গার্দিওলা শুধু ফুটবল কোচ নন, তিনি একজন চিন্তাবিদও। তার কৌশল, দর্শন, মাঠে খেলোয়াড়দের অবস্থান নিয়ে জ্যামিতিক বিশ্লেষণ সবসময়ই আলাদা। তবে তার ফুটবল দর্শনের সঙ্গে মাঠের ধারে তার এক সাধারণ অভ্যাসও বেশ নজর কাড়ে। সেটা তার থুতু ফেলা।
গার্দিওলার থুতু ফেলার অভ্যাস সাধারণ কিছু নয়। ম্যাচ চলাকালে তার মুখে থুতু একপাশ থেকে অন্যপাশে ঘোরে। যেন তিনি নিজেই বলের মতো নিজের থুতুকে ঘোরাচ্ছেন, বারবার পুনঃপ্রক্রিয়া করছেন। শেষমেশ এটি ছোট, ভারি, এবং নিখুঁত গোলাকার আকার নেয়। এটি কোনো সাধারণ থুতু নয়—গার্দিওলার মনোযোগ, ধৈর্য এবং নিখুঁততার প্রতীক।
গার্দিওলার ফুটবল দর্শন সহজ নয়। মাঠকে ২০ অংশে ভাগ করে, প্রতিটি অংশই জয়ী হওয়ার কৌশল। তার দল কেবল গোল করতে চায় না, চায় প্রতিটি জায়গায় প্রতিপক্ষকে পেছনে ফেলতে। এ কারণেই ম্যানচেস্টার সিটি বারবার শীর্ষে উঠে আসে।
কিন্তু এই জটিল পদ্ধতির কারণেই যখন দল সমস্যায় পড়ে, তা দ্রুতই বড় সংকটে রূপ নেয়। সাম্প্রতিক সময়ে ৩২ ম্যাচ অপরাজিত থাকার পর টানা চার ম্যাচে পরাজয়—এটাই তার প্রমাণ। গার্দিওলার দল যারা বলের দখলে অপ্রতিদ্বন্দ্বী, তারাই হঠাৎ বল থেকে দূরে সরে গিয়ে বারবার লং বল খেলছে।
ম্যানচেস্টার সিটি বর্তমানে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের পয়েন্ট তালিকায় ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে। গত রবিবার তারা লেস্টার সিটির বিপক্ষে তারা ২-০ গোলের জিতেছিল। সেটা ছিল তাদের ৫ ম্যাচ পর জয়। সবশেষ ১৪ ম্যাচে তাদের দ্বিতীয় জয়। এই জয়ের আগে, তারা টানা ৫ ম্যাচে পরাজিত হয়েছিল।
গার্দিওলার কৌশলের মূলভিত্তি নিখুঁত পরিকল্পনা। তবে ফুটবল মাঠ সবসময় পরিকল্পনা মেনে চলে না। সাম্প্রতিক ম্যাচগুলোতে দেখা গেছে, পরিকল্পনা কাজ না করলে পুরো সিস্টেম ভেঙে পড়ে। তার ফুটবল দর্শন সাফল্যের মূল কারণ হলেও, এই জটিল পদ্ধতি অনেক সময় তার দলের জন্য চাপ হয়ে দাঁড়ায়। নিয়মিত জয়ের অভ্যাস থাকা দল হঠাৎ ছন্দ হারালে সেটা শুধরানো কঠিন হয়ে পড়ে।
গার্দিওলা একজন জিনিয়াস, কিন্তু তার দর্শন সবসময় তার দলের জন্য ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে না। মাঠের ধারে তার থুতু ফেলার অভ্যাস যেমন তার অজান্তেই চলে, তার কৌশলের জটিলতাও অনেক সময় তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। তবে গার্দিওলার ইতিহাস বলে, এই ধরনের পরিস্থিতি সামলানোর ক্ষমতা তার রয়েছে।
আগামী দিনগুলোতে দেখা যাবে, পেপ গার্দিওলা এই সংকট কাটিয়ে তার দলকে আবার জয়ের পথে ফেরাতে পারে কিনা।
এফপি/এমআই