Dhaka, Friday | 18 July 2025
         
English Edition
   
Epaper | Friday | 18 July 2025 | English
বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে স্টারলিংকের যাত্রা শুরু
হারিয়ে যাচ্ছে সুন্দরবন উপকূলে তালগাছ, রোপণে নেই আগ্রহ
জুলাইযাত্রা—কুবি ইতিহাসের এক ভয়াবহ অধ্যায়
আজ ফ্রি ১ জিবি ইন্টারনেট পাবেন যেভাবে
শিরোনাম:

আরাকান আর্মির আতঙ্কে নাফ নদ ও সাগরে যেতে ভয় জেলেদের

প্রকাশ: রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১:২৬ পিএম আপডেট: ২৩.০২.২০২৫ ১:২৮ পিএম  (ভিজিটর : ৩০)
ছবি সংগৃহীত

ছবি সংগৃহীত

মিয়ানমারের রাখাইনের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি গত এক সপ্তাহে রোহিঙ্গাসহ বাংলাদেশের ২৩ জেলেকে জিম্মি করে ধরে নিয়ে গেছে। এতে আতঙ্কে রয়েছেন কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তের জেলেরা। নাফ নদ ও সংলগ্ন সাগরে মাছ শিকারে যেতে ভয় পাচ্ছেন তারা। ঘাটে নৌযান নোঙর করে রেখেছেন অনেকে। দুঃচিন্তা বেড়েছে মাছ শিকারে যেতে না পারা ও জিম্মি জেলে পরিবারের সদস্যদের মাঝে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, একের পর এক জেলে অপহরণের ঘটনায় বাংলাদেশ-মিয়ানমার নাফ নদ সীমান্ত ঘেঁষা শাহপরীর দ্বীপের জেলেদের মাঝে ভীতি কাজ করছে। অনেকে অপহরণের ভয়ে নাফ নদ ও সাগরে নামছেন না। দ্বীপের জেটি ঘাট, মিস্ত্রিপাড়া ঘাট, দক্ষিণ পাড়া ঘাট ও পশ্চিম পাড়া ঘাটে সারি সারি নৌকা ও ট্রলার নোঙর করে রাখা হয়েছে। এসব ঘাটে ছোট-বড় মিলিয়ে কয়েকশ মাছ ধরার ট্রলার ও নৌকা রয়েছে। অন্যদিকে অপহরণের শিকার পরিবারের সদস্য কাঁদছেন। আবার অনেকে প্রিয়জনের জন্য নাফ নদ ও সাগর পাড়ে অপেক্ষা করছেন।

শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) বিকালে শাহপরীর দ্বীপ পশ্চিম পাড়ার বেড়িবাঁধের ব্লকে অপেক্ষা করছিলেন বৃদ্ধ নারী সালেহা বেগম (৫৫) ও আনোয়ারা বেগম (৪০)। তারা দুজনই শাহপরীর দ্বীপের মাঝর পাড়ার বাসিন্দা। বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) অপহৃতদের মধ্যে এই দুই নারীর ছেলে এবং নাতিও রয়েছেন।

বেড়িবাঁধে কেন বসে আছেন জানতে চাইলে কান্নাভেজা কণ্ঠে সালেহা বেগম বলেন, ‘আমার ১১ বছরে নাতি এক মাঝির সঙ্গে সাগরে মাছ শিকারে বের হয়। এখনও কোনও খোঁজখবর পাইনি। এখানে বসে তার জন্য অপেক্ষা করছি। এখন শুনেছি, তাদের মিয়ানমারে ধরে নিয়ে গেছে। কী হবে তাদের– কিছু বলতে পারছি না। খুব ভয়ে আছি।’

চোখের পানি মুছতে মুছতে তিনি বলেন, ‘অনলাইনে কাপড় অর্ডার দিয়েছিল সে। সেটার টাকার জোগাড় করতে সাগরে মাছ শিকারে যায় শ্রমিক হিসেবে। তার খুব শখ ঈদে অনলাইনের কাপড় পরবে। কিন্তু সে কি আর ফিরবে না? দ্রুত তাদের ফেরত আনার উদ্যোগ নিতে সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি।’

আনোয়ারা বেগম বলেন, ‘আমাদের পরিবারের আয়ের প্রধান উৎস আব্দুর রহমান। একদিন পার হয়ে গেছে, মিয়ানমার তাদের এখনও ছেড়ে দেয়নি। প্রায় সময় বাংলাদেশি জেলেদের ধরে নিয়ে যায় মিয়ানমার। কিন্তু এটির কোনও স্থায়ী সমাধান হয়নি। আমরা খুব আতঙ্কে আছি সে দেশের আরাকান আর্মি তাদের এখনও ছেড়ে দেয়নি।’   

নৌঘাটের জেলেরা জানান, মাদকের পাশাপাশি রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ রোধে নাফ নদে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা গত ১৩ ফেব্রুয়ারি তুলে নেওয়া হয়েছে। প্রায় ৮ বছর পর জেলেদের শর্ত দিয়ে তিন মাসের জন্য নাফ নদে মাছ শিকারে অনুমতি দেওয়া হয়। এতে জেলেদের মাঝে আনন্দের জোয়ার বয়। কিন্তু কয়েকদিন যেতে না যেতে আরাকান আর্মি জেলেদের ধরে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় আবার হতাশা দেখা দিয়েছে। শর্ত মেনে জেলেরা মাছ শিকার করছে, এরপরও ধরে নিয়ে যাচ্ছে। তবে জেলেরা নাফ নদ ও সাগরের জলসীমানা অতিক্রম করার কারণেও এ ধরনের ঘটনা ঘটছে।

এ বিষয়ে কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, ‘দীর্ঘ দিন পর জেলেদের মাছ ধরার সুযোগ হয়েছে। ফলে তাদের সর্তক থাকতে হবে, যাতে বাংলাদেশের জলসীমানা অতিক্রম না হয়। অধিকাংশ জেলে সীমানা অতিক্রমের কারণে আরাকান আর্মিও সুযোগ নিচ্ছে। তাই আমাদের জেলেদের খুব সর্তক থেকে মাছ শিকার করতে হবে। পাশাপাশি তারা সীমানা অতিক্রম করছে কিনা সে দিকে নজরদারি রাখা দরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের।’   

বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) শাহপরীর দ্বীপের ঘোলারচর এবং নাফ নদের নাইক্ষ্যংদিয়া এলাকা থেকে মাছ ধরার চারটি নৌকাসহ ১৯ জেলেকে ধরে নিয়ে যায় আরাকান আর্মি। তার আগে ১০ ফেব্রুয়ারি নাফ নদের মোহনা থেকে আরও চার বাংলাদেশি জেলেকে ধরে নিয়ে যায় তারা। তবে এখনও কাউকে ছেড়ে দেয়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপ নৌঘাটে সাধারণ সম্পাদক আবদুল গফুর বলেন, ‘বৃহস্পতিবারও ১৯ জেলেকে ধরে নিয়ে যাওয়ার খবর পেয়েছি। তাদের মধ্য আমার ঘাটে দুই নৌকার ১০ জেলে রয়েছে। তাদের পরিবারে কান্না থামছে না। নাফ নদ ও সাগর থেকে আরাকান আর্মি জেলেদের ধরে নিয়ে গেলেও এটার কোনও সমাধান হচ্ছে না। তাই জেলেরা খুব ভয়ে আছে। এ কারণে আমার ঘাটের অনেকের নৌকা মাছ শিকারে যায়নি। তাদের মধ্যে দুঃচিন্তায় রয়েছে। কেননা এখানকার মানুষ মাছ শিকারে যেতে না পারলে না খেয়ে থাকতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘জেলেরা যাতে নির্ভয়ে মাছ শিকারে যেতে পারে, সে জন্য সরকারের সু-দৃষ্টি কামনা করছি।’ 

এ বিষয়ে টেকনাফ উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, ‘ধরে নিয়ে যাওয়া জেলেদের ফেরত আনতে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি সব জেলে যাতে বাংলাদেশ জলসীমানা অতিক্রম না করে সে জন্য সর্তক করা হয়েছে।’

টেকনাফ-২ ব্যাটালিয়ন বিজিবি অধিনায়ক লে. কর্নেল আশিকুর রহমান বলেন, ‘কীভাবে জেলেদের দ্রুত ফেরত আনা যায় সে বিষয়ে আমরা কাজ করছি।’

এফপি/এমআই
সর্বশেষ সংবাদ  
সর্বাধিক পঠিত  
YOU MAY ALSO LIKE  
Editor & Publisher: S. M. Mesbah Uddin
Editorial, News and Commercial Offices: Akram Tower, 15/5, Bijoynagar (9th Floor), Ramna, Dhaka-1000
Call: 01713-180024, 01675-383357 & 01840-000044
E-mail: news@thefinancialpostbd.com, ad@thefinancialpostbd.com, hr@thefinancialpostbd.com
🔝