ওসমানীনগরে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সেক্রেটারি ইমরান হোসেন এর বিরুদ্ধে সরকারি ভূমির উপর অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাছাড়া তার আত্মীয় আলী হায়দর সহ তাদের দ্বারা সরকারি দু’টি যাত্রী ছাউনি দখল করে ক্যারম খেলার আসর বসানো এবং বাজারের পাবলিক টয়লেট দখল করে হোটেল এবং অপর জনৈক ব্যক্তিকে দিয়ে সরকারি ভূমিতে স’মিল বসানোরও অভিযোগ রয়েছে।
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার সকালে স্থানীয় তিন ইউনিয়নের অর্ধ শতাধিক লোকের স্বাক্ষরিত একটি অভিযোগ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে প্রদান করা হয়েছে। দুপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খসরুপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহসিলদারকে ঘটনাস্তলে পাঠিয়ে ঘর নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। সরকারি ভূমিতে স্থাপনা নির্মাণ ও অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে ফুসে উঠেছে স্থানীয়রা।
লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সেক্রেটারি ইমরান হোসেন সাদীপুর ইউনিয়নের খসরুপুর বাজারে কুশিয়ারা নদীর তীরে সরকারি ভূমির উপর অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ কাজ শুরু করেন। তাছাড়া তার নেতৃত্বে দীর্ঘদিন ধরে পথের পাশে দু’টি যাত্রী ছাউনি দখল করে ক্যারম খেলার আসর বসিয়েছেন। আলী হায়দর নামের তার অপর এক আত্মীয় সরকারি টয়লেট ও টিউবওয়েল দখল করে রেখেছেন। সরকারি ভূমিতে একটি স’মিল পরিচালনাও করা হচ্ছে।
সরকারি ভূমিতে নতুন করে ঘর নির্মাণ হচ্ছে জেনে স্থানীয় লোকজন নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখতে আপত্তি জানান। কিন্তু এলাকার লোকজনের আপত্তির তোয়াক্কা না করে ঘর নির্মাণ অব্যাহত রাখলে স্থানীয় সাদীপুর, পশ্চিম পৈলনপুর ও পূর্ব পৈলনপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের প্রায় অর্ধ শতাধিক লোকজন ঘর নির্মাণ, সিএনজি স্ট্যান্ড সংলগ্ন স্থানে দু’টি যাত্রী ছাউনিতে ক্যারম বোর্ড খেলার নামে জুয়ার আসর, ইমরান হোসেনের আত্মীয় আলী হায়দার এর দখলে থাকা পাবলিক টয়লেট ও টিউবওয়েল দখল মুক্ত, সরকারি ভূমি দখল করে অবৈধ কলোনী ও সরকারি ভূমিতে স্থাপিত স’মিল উচ্ছেদ ও রাস্তার পাশে রাখা অবৈধ বালু ব্যবসা বন্ধ করতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেন।
ঘটনার পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে খসরুপুর ইউনিয়নের তহসিলদার ঘটনাস্থলে গিয়ে ঘর নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার কথা বলে এসেছেন।
লিখিত অভিযোগকারি মো. নিজাম উদ্দিন সিদ্দিকী বলেন, সরকারি ভূমির উপর সাবেক এম.পি এম. ইলিয়াছ আলী দু’টি যাত্রী ছাউনির প্রজেক্ট দেন। বিগত ১৭ বছর স্বেচ্ছাসেবক লীগ সেক্রেটারী ইমরান ও তার ফুফাতো ভাই আলী হায়দর এসব দখল করে রেখেছে। সে ইদানীং নতুন করে সরকারি ভূমিতে আরেকটি ঘর নির্মাণ শুরু করছে। পাবলিক টয়লেট ও টিউবওয়েলও দখল করে রেখেছে। আমরা এসব অবৈধ দখল উচ্ছেদ এবং সরকারি ভূমিতে ঘর নির্মাণ বন্ধ চাই।
আসাব উদ্দিন কালা বলেন, আমরা এলাকাবাসি সরকারি ভূমি উদ্ধার ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ চাই।
ফয়েজ আহমদ বলেন, এলাকার স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী ও পথচারিদের জন্য স্থাপিত দু’টি যাত্রী ছাউনি দখল করে প্রতিনিয়ত ৩০/৩৫জন যুবক ক্যারমের নামে জুয়া খেলে। এখান থেকে বখাটেরা ছাত্রীদের টিজ করে, এটা বন্ধ করা দরাকার।
এমদাদুর রহমান বলেন, সরকারি ভূমিতে নতুন ঘর নির্মাণ বন্ধসহ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা প্রয়োজন।
অভিযুক্ত আলী হায়দর বলেন, আমি কোন সরকারি টয়লেট দখল করিনি। টয়লেটটি পুরাতন হয়ে নদীর পলি উঠে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। এখানে কোন টিউবওয়েলও নেই।
উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন বলেন, সরকারি ভূমিতে ঘর নির্মাণসহ অবৈধ দখল, রাস্তায় বালু সংরক্ষণ, ক্যারম খেলার সাথে আমার কোন ধরনের সংশ্লিষ্টতা নেই। সরকার অভিযান চালিয়ে এগুলো উচ্ছেদ করুক এবং জরিমানা আদায় করে রাষ্ট্রিয় কোষাগারে জমা নিলে ভাল হয়।
খসরুপুর ভূমি অফিসের তহসিলদার শীতল চন্দ্র দত্ত বলেন, সরকারি জায়গায় ঘর হচ্ছে জেনে ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের নিষেধ করে এসেছি। পুরাতন স্থাপনার বিষয়ে সরকার সিদ্ধান্ত নেবেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন বলেন, অবৈধ দখল ও সরকারি ভূমিতে ঘর নির্মাণ হচ্ছে মর্মে স্থানীয়দের একটি অভিযোগ পেয়ে তহসিলদারকে পাঠিয়েছি। প্রতিবেদন আসলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এফপি/রাজ