ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শাহ আজিজুর রহমান হল সংলগ্ন পুকুর থেকে সাজিদ আব্দুল্লাহ নামে এক শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৬টার দিকে মরদেহটি উদ্ধার করে পুলিশ। তার মৃত্যুকে ‘রহস্যজনক’ হিসেবে বিবেচনা করছেন শিক্ষার্থীরা।
তার মৃত্যুর ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকেই এটি নিছক দুর্ঘটনা নয় বলে সন্দেহ প্রকাশ করছেন। এদিকে লাশ উত্তোলনের পরপরই কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. সুতাপা রায় জানান আরো অনেক আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। পরে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়।
এদিকে মরদেহ নিয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানার এসআই (নিরস্ত্র) মো. রেজাউল করিম কর্তৃক প্রস্তুতকৃত সুরতহাল প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সাজিদ আব্দুল্লাহ'র নাক দিয়ে রক্ত বের হচ্ছিল তবে গায়ের তাপমাত্রা ছিল স্বাভাবিক। বাম হাতের কব্জির ওপর ও ডান পায়ের হাঁটুর নিচে চামড়া ছেড়ার মতো আঘাতের চিহ্ন ছিল। তবে বুক, পেট, পিঠ ও কোমর থেকে পা পর্যন্ত শরীরের অংশ স্বাভাবিক অবস্থায় ছিল। প্রতিবেদন অনুযায়ী, যৌনাঙ্গ ও শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি বলে নিশ্চিত করেন তার বন্ধু ইসমাইল এবং চিকিৎসক ডা. সেলিম।
সুরতহাল প্রতিবেদনে মৃত্যুর পর সাজিদ আব্দুল্লাহর মরদেহের গাঠনিক বিবরণও দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, মরদেহ উদ্ধারের সময় সাজিদ আব্দুল্লাহ'র মাথা, কপাল ও মুখমণ্ডল স্বাভাবিক ছিল। মুখে ছিল কালো দাঁড়ি ও গোঁফ। পরনে ছিল ট্রাউজার ও টি-শার্ট। তার উচ্চতা ছিল ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি, চুল কালো ও আনুমানিক ৮ ইঞ্চি লম্বা। চোখ বন্ধ অবস্থায় ছিল এবং এক হাত ছিল অর্ধমুষ্টিবদ্ধ।
গতকাল বিকেল পাঁচটার দিকে শাহ আজিজুর রহমান হল সংলগ্ন পুকুরে সাজিদ আব্দুল্লাহর মরদেহ ভেসে থাকতে দেখে শিক্ষার্থীরা। পরে বিকেল সাড়ে ৬ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও ইবি থানা পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতিতে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। সাজিদ বিশ্ববিদ্যালয়ের আল কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি শহিদ জিয়াউর রহমান হলের ১০৯ নং রুমে থাকতেন। তার বাড়ি টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল উপজেলায়। বাবার নাম মুহাম্মদ আহসান হাবিবুল্লাহ ও মায়ের নাম সুমাইয়া আক্তার। এদিকে সাজিদ আব্দুল্লাহর মৃত্যু নিয়ে অনেকের মনে উঠেছে নানা প্রশ্ন—কীভাবে তার মৃত্যু হলো? আদৌও তার সঙ্গে কোনো ঘটনা ঘটেছিল কিনা? এসব প্রশ্ন ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও প্রকৃত রহস্য উদঘাটনের দাবি জানিয়েছেন।
এদিকে পুকুর থেকে তার মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় জরুরি ভিত্তিতে পাঁচ সদস্যের একটি ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি গঠন করেছে কর্তৃপক্ষ। শুক্রবার (১৮ জুলাই) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. মনজুরুল হক স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে কমিটির বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
এফপি/এমআই