অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত প্রেস বিজ্ঞপ্তি দ্রুত বাস্তবায়নের দাবিতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা বিক্ষোভ সমাবেশ ও সংবাদ সম্মেলন করেছেন।
আজ (৩ ডিসেম্বর) বুধবার, শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলা পরিষদ চত্বরে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে বক্তারা সহকারী শিক্ষকদের অবিলম্বে আপাতত ১১তম গ্রেড প্রদান, দীর্ঘদিনের উচ্চতর গ্রেড সংক্রান্ত জটিলতা নিরসন, শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতি, কর্মস্থলে দায়িত্ব পালনকালে আহত শিক্ষকদের রাষ্ট্রীয়ভাবে চিকিৎসা, এবং পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে নিহত শিক্ষকদের পরিবারকে শতভাগ পেনশন প্রদানসহ ৫ দফা দাবি উপস্থাপন করেন।
শিক্ষক সমাজ দেশের মেরুদণ্ড, অথচ ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত না হওয়ায় তারা বারবার বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন। অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিশ্রুত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে আর দেরি হলে সারাদেশের শিক্ষকরা কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবেন।
শিক্ষক সমিতি শরীয়তপুর জেলা শাখা সাংগঠনিক সম্পাদক আল ইসলাম বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয় ও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে দীর্ঘদিনের অপেক্ষা আর সহ্য করা যাচ্ছে না।
প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নে শিক্ষকরা নিবেদিতভাবে কাজ করে যাচ্ছেন, কিন্তু তাঁদের ন্যায্য দাবি এখনো বাস্তবায়ন না হওয়ায় শিক্ষকদের মধ্যে চরম হতাশা তৈরি হয়েছে। আমরা চাই ১১তম গ্রেডসহ অন্য সব বৈষম্য দূর করে দ্রুত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হোক।
জাজিরা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি সভাপতি মোঃ গিয়াস উদ্দিন বলেন, সহকারী শিক্ষকরা দেশের ভবিষ্যৎ গড়ে তুলছেন, আর সেই দায়িত্ব পালনকারী মানুষগুলোর পেশাগত নিরাপত্তা, সম্মান ও প্রাপ্য সুবিধা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রেরই দায়িত্ব। আপাতত ১১তম গ্রেড প্রদান এবং উচ্চতর গ্রেড সমস্যার সমাধান ছাড়া শিক্ষকদের আর কোনো বিকল্প নেই। আমাদের দাবি ন্যায়সঙ্গত, এবং তা দ্রুত বাস্তবায়ন না হলে সারাদেশে আরও কঠোর আন্দোলন গড়ে উঠতে পারে।
জাজিরা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি সাধারণ সম্পাদক সিএম এনামুল হক বলেন, আমরা আন্দোলন করতে চাই না, কিন্তু বারবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা বাস্তবায়ন না করায় শিক্ষকরা বাধ্য হচ্ছেন রাস্তায় নামতে। আহত শিক্ষকরা রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা সুবিধা পাবেন এবং দায়িত্ব পালনকালে নিহত শিক্ষকদের পরিবার শতভাগ পেনশন পাবে এটা কোনো অনুগ্রহ নয়, এটি তাঁদের অধিকার। সরকার দ্রুত বাস্তবায়ন-পর্যায়ে না গেলে আমরা আরও বৃহত্তর কর্মসূচির দিকে যাব।
সহকারী শিক্ষক ইসরাত জাহান নীলা বলেন, শিক্ষকরা দেশের শিশুদের হাতে কলমে ভবিষ্যৎ তুলে দিচ্ছেন। অথচ তাঁরা নিজেরাই বঞ্চনার শিকার। আমরা চাই সম্মানজনক বেতন- গ্রেড, যাতে সম্মানের সঙ্গে পরিবার চালাতে পারি এবং মনোযোগ দিয়ে শিক্ষার্থীদের উন্নয়নে কাজ করতে পারি। সরকারের উচিত দ্রুত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করে শিক্ষক সমাজের দীর্ঘদিনের কষ্ট দূর করা।
সহকারী শিক্ষক এনামুল হক বলেন, “সহকারী শিক্ষকদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের আন্দোলন আজ নাগরিক আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। আমরা যা দাবি করছি—তা বৈষম্য দূরীকরণ এবং পেশাগত মর্যাদা পুনরুদ্ধারের দাবি। আমাদের আশা, সরকার শিক্ষকদের কণ্ঠস্বর শুনবে এবং আর দেরি না করে সমাধান দেবে।”
সহকারী শিক্ষক মোস্তফা কামাল আকাশ বলেন, আমরা মাঠে থেকে দেশ গড়ার কাজ করি, কিন্তু আমাদের গ্রেড সমস্যা বছরের পর বছর ঝুলে আছে। সহকারী শিক্ষকদের আপাতত ১১তম গ্রেড প্রদান ও শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতি নিশ্চিত করা দ্রুত সময়ের দাবি। সরকারের প্রতি আহ্বান—শিক্ষকদের ন্যায়সঙ্গত দাবিকে গুরুত্ব দিন এবং স্থায়ী সমাধান দিন।
কর্মসূচিটি আয়োজন করে প্রাথমিক শিক্ষক দাবী বাস্তবায়ন পরিষদের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি, জাজিরা, শরীয়তপুর।
এফপি/জেএস