কুমিল্লা সদর উপজেলার কোতয়ালী থানাধীন ৬নং জগন্নাথপুর ইউনিয়নের কালিকাপুর মৌজায় অবস্থিত মেসার্স বিএমবি ব্রিকস পরিবেশ ধ্বংস করে অবৈধভাবে ইট পোড়ানোর কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে, যা হাইকোর্টের সরাসরি নির্দেশনার সম্পূর্ণ অবহেলা ও অমান্য করার শামিল।
হাইকোর্ট ইতোমধ্যে পরিবেশ আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে বিএমবি ব্রিকস এর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে নির্দেশ দিলেও, এর কোনো প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না।
জানা যায়, গত ২০ অক্টোবর বিচারপতি কাজী জিনাত হক ও বিচারপতি আইনুন নাহার সিদ্দিকা সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ শুনানি শেষে এ আদেশ প্রদান করেন।
জনস্বার্থে দায়ের করা রিট আবেদনে উল্লেখ করা হয়, ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ (সংশোধনী ২০১৯) এবং পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ এর বিধি লঙ্ঘন করে কোনো পরিবেশ ছাড়পত্র ছাড়াই বিএমবি ব্রিকস অবৈধভাবে ইটভাটা স্থাপন ও পরিচালনা করছে। এতে আশপাশের স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও বসতবাড়ির পরিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় এলাকাবাসী।
রিটকারীর পক্ষে শুনানিতে অংশগ্রহণ করেন এডভোকেট একলাছ উদ্দিন ভূঁইয়া। তিনি জানান, স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ও প্রবাসী ইউকে নাগরিক কাজী আল মামুনসহ অনেকে বিভিন্ন সময়ে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে অভিযোগ জানালেও কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় দীর্ঘদিন ধরে এই অবৈধ ইটভাটা পরিচালনা করে পরিবেশের অপূরণীয় ক্ষতি সাধন করা হচ্ছে।
রিটে বিবাদী করা হয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, প্রয়োগ শাখার পরিচালক, চট্টগ্রাম বিভাগের পরিচালক, কুমিল্লার জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, কোতয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং মেসার্স বিএমবি ব্রিকসের প্রোপ্রাইটর মো. আজাদ হোসেনকে।
কালিকাপুর গ্রামে কৃষক নুরুল ইসলাম বলেন, ইটভাটার জন্য প্রতি বছরই আমরা কৃষি ফসল ফলাতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। এখন আমের মুকুল আসার সময়। ইটভাটার ধোঁয়ার কারণে আমের মুকুল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অনেক স্থানে ফসল উৎপাদন কমে আসে এসব ইটভাটার কারণে। আমরা চাই হাইকোর্টের আদেশের দ্রুত বাস্তবায়নের মাধ্যমে মেসার্স বিএমবি ব্রিকস বন্ধ করে পরিবেশের সুরক্ষার জন্য প্রশাসন উদ্যোগ নিবে।
জানতে চাইলে স্থানীয় বাসিন্দা (লন্ডন প্রবাসী) কাজী আল মামুন বলেন, আমাদের গ্রামের ২০০ মিটার দূরত্বের মধ্যে মেসার্স বি, এম. বি ব্রিকস নামে একটি ব্রিক ফিল্ড গড়ে উঠেছে। ব্রিক ফিল্ডের কালো ধোঁয়া ও মাটি বহনকারী বড় বড় ট্রাক চলাচল করায় ধুলাবালির কারণে এলাকার জনগনের স্বাভাবিক জীবন যাপনে ব্যাপক প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হচ্ছে। এই ইটভাটার ধোঁয়া ও কালো ছাই আশপাশের কৃষিজমি, বসতবাড়ি ও শিশুদের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। দিনের পর দিন এই অনিয়ম চললেও প্রশাসনের নীরবতা রহস্যজনক বলে মনে করছেন অনেকে। আমরা হাইকোর্টের নির্দেশের বাস্তবায়ন চাই।
মেসার্স বিএমবি ব্রিকসের প্রোপ্রাইটর মো. আজাদ হোসেন বলেন, আমি পরিবেশ অধিদপ্তরের কাগজ এখনো হাতে পাইনি, বাকী সব কাগজ আমার আছে। এখনও আমি ইট প্রস্তুত করছি। এলাকার কিছু মানুষ আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে হাইকোর্টে রিট করেছে, আমিও পাল্টা রিট করেছি।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) কুমিল্লা অঞ্চলের সাধারণ সম্পাদক আলী আকবর মাসুম বলেন, অবৈধ ইটভাটা বন্ধে আমরা বছরের পর বছর আন্দোলন করে আসছি। তবে আমাদের সে আন্দোলন খুব একটা কাজে আসে না। সম্প্রতি সরকার ইটভাটা বন্ধে কঠোর হয়েছে। আমরা এটাকে সাধুবাদ জানাচ্ছি। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে যারা এটা বাস্তবায়ন করবে, তারা সেভাবে করছে বলে মনে হচ্ছে না। তারা লোক দেখানো কিছু অভিযান পরিচালনা করে, হয়তো কিছু জরিমানা করে, কিন্তু আবারও চালু হয়ে যায়।
কুমিল্লা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোসাব্বের হোসেন মুহাম্মাদ রাজীব বলেন, হাইকোর্টের রিটের বিরুদ্ধে মেসার্স বিএমবি ব্রিকসের প্রোপ্রাইটর মো. আজাদ হোসেন ১০-১২ দিন আগে আরেকটি পাল্টা রিট করেছে। এ রিটের নিষ্পত্তি হওয়া পর্যন্ত আমাদেরকে অপেক্ষা করতে হবে। তিনি আরও বলেন, যারাই অবৈধভাবে ইটভাটা চালাচ্ছে সবগুলো বন্ধ করে দেয়া হবে। পরিবেশ অধিদপ্তর নতুন করে কোন ইটভাটার প্রতিষ্ঠানকে ছাড়পত্র দিচ্ছে না। পরিবেশের ক্ষয়ক্ষতি হলে অবশ্যই ব্রিকস ফিল্ডের বিরুদ্ধে আমরা অভিযান করব।
এফপি/অ