কুমিল্লা নগরীতে ভুল চিকিৎসার কারণে এক প্রবাস ফেরত ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী রোগীর স্বজনেরা।
শনিবার (২২ নভেম্বর) রাতে নগরীর পশ্চিম বাগিচাগাঁও এলাকায় কুমিল্লা ডায়বেটিক হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে। পরে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে হাসপাতালে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এবং স্বজনরা ভাঙচুরের চেষ্টা করলে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
নিহত মো. ইয়াছিন বরুড়া উপজেলার আগানগর এলাকার মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে। তিনি শনিবার সকালে বিদেশ থেকে বাড়িতে ফেরেন। তিন মাস আগে একই হাসপাতালে তার পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলিতে অস্ত্রোপচার হয়েছিলো। দেশে ফিরে পায়ের ওই স্থানে পুনরায় ব্যথা অনুভব করলে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যান।
স্বজনদের অভিযোগ, সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক ডা. মিঠুকে দেখানোর পর তিনি তাৎক্ষণিকভাবে আরেক দফা অপারেশন প্রয়োজন বলে জানান। পরিবারের সম্মতিতে দুপুর তিনটায় অপারেশন সম্পন্ন হয়। পরে মো. ইয়াছিনকে অপারেশন থিয়েটার থেকে হাসপাতালের কেবিনে পাঠানো হয়।
স্বজনরা জানান, কেবিনে আনার পর ইয়াছিন অস্বস্থি বোধ করতে থাকেন। বিষয়টি ডিউটিরত নার্সকে জানালে তিনি দুই শত টাকা দাবি করেন এবং এর বিনিময়ে একটি ব্যাথানাশক ‘প্যাথিডিন মরফিন' ইনজেকশন ও ঘুমের ইনজেকশন একসঙ্গে রোগীর শরীরে প্রয়োগ করেন। ইনজেকশন পুশ করার পর মুহূর্তের মধ্যেই রোগী নিস্তেজ হয়ে পড়েন। স্বজনরা ডাকাডাকি করলে নার্সরা রোগীর অবস্থা বুঝতে পেরে তার সব নথিপত্র ঔষধসহ নিয়ে সরে পড়েন। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীকে অন্য হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়া হলে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, রোগী অনেক আগেই মারা গেছেন।
নিহতের স্ত্রী মোসা. রহিমা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, আমার স্বামী দেশে ফিরেই দেরী না করে হাসপাতালে আসে। তারা কোনো পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাড়াই অপারেশনের সিদ্ধান্ত দেয়। অপারেশনের পরও ব্যথা কমেনি। পরে নার্সরা আমাদের দিয়ে ওষুধ আনিয়ে ও নিজেরা ২০০ টাকা নিয়ে একটি এন্টিবায়োটিক ব্যাথানাশক ভুল ইনজেকশন পুশ করে। সেটাই আমার স্বামীর মৃত্যু ঘটিয়েছে। আমি তদন্ত সাফাক্ষে এর সুষ্ঠ বিচার চাই।
মো. ইয়াছিনের চাচাতো ভাই নূর নবী বলেন, বিদেশ থেকে ফিরেই তাকে হাসপাতালে আনা হয়। কোনো ধরনের শারীরিক পরীক্ষা ছাড়াই তাকে অপারেশন করানো হয়েছে। এরপর ভুল ইনজেকশন দেওয়ার কারণে তিনি মারা যান। এটি সুস্পষ্ট চিকিৎসাগত গাফিলতি।
এদিকে, সরেজমিনে দেখা যায়, স্বজনরা হাসপাতালে উত্তেজনা সৃষ্টি করে এবং ভাঙচুরে তেড়ে যায়। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট কয়েকজন ব্যক্তিকে স্বজনদের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা করতে দেখা যায় ও একপর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা হয়। আলোচনায় সিদ্ধান্ত হয়, আগামী সোমবার দুই পক্ষ বসবে, সেখানে সিদ্ধান্ত জানানো হবে। পরে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের রফাদফার আশ্বাসে লাশ নিয়ে বাড়ি ফিরে যায় স্বজনেরা।
এ বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চাইলে, কুমিল্লা ডায়াবেটিক হাসপাতালে ট্রেজারার নূরে আলম ভূঁইয়া বলেন, আমরা রোগী পক্ষকে নিয়ে বসেছি। রোগীর পক্ষকে আমরা বলেছি তাদের যেটা ইচ্ছা সেটাই হবে। পরে রোগীর স্বজনরা ময়নাতদন্ত করতে রাজি হয় নি, তারা ইনসাফ চেয়েছেন। তাই আমরা রোগীর স্বজনদের বলেছি সোমবার তাদেরকে নিয়ে বসবো। প্রশাসনের লোকজন থাকবেন। সেখানে সিদ্ধান্ত হবে।
কুমিল্লা ডায়াবেটিক হাসপাতালের সাধারণ সম্পাদক মো. মোস্তাক মিয়া বলেন, আমি দূরে আছি। তবে, আমাদের কর্তৃপক্ষ রোগীর স্বজনদের সাথে আলাপ করলে তারা বলেছে পোস্টমর্টেমের প্রয়োজন নেই। আমরা এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। এতে ডাক্তার যদি দোষী হয়, তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কোতওয়ালী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মহিনুল ইসলাম বলেন, আমরা খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ পাঠিয়েছি। পুরো বিষয়টি যাচাই করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা ডেপুটি সিভিল সার্জন রেজা মো. সারওয়ার আকবর বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। কিন্তু, অফিশিয়ালি কোনো লিখিত অভিযোগ পাই নি। লিখিত অভিযোগ পেলে আমি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
এফপি/অ