Dhaka, Friday | 7 November 2025
         
English Edition
   
Epaper | Friday | 7 November 2025 | English
এইচএসসির সোয়া ৪ লাখ খাতা পুনর্নিরীক্ষণের ফল প্রকাশ ১৬ নভেম্বর
সারাদেশে কোটি টাকার তোলাবাজিতে অতিষ্ঠ প্রাথমিক শিক্ষকরা
পাঁচ ব্যাংকের শেয়ার লেনদেন স্থগিত
আজকের বাজারে সোনার ভরি কত?
শিরোনাম:

উপজেলা ভূমি অফিসের পক্ষপাত মূলক আচরণ

নাজিরপুরে শতাধিক অবৈধ ভবনের বিপরীতে নির্দিষ্ট কয়েক ব্যবসায়ীকে হয়রানির চেষ্টা

প্রকাশ: শুক্রবার, ৭ নভেম্বর, ২০২৫, ৪:৫১ পিএম  (ভিজিটর : ৩৭)

পিরোজপুর জেলার মধুমতি নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা একটি শান্ত নিরিবিল জনপদের নাম নাজিরপুর উপজেলা। প্রকৃতি যেন উজার করে দিয়ে সাজিয়েছে এই গ্রামীন জনপদটি। কিন্তু রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সাথে সাথে সেই সৌন্দর্য হারিয়ে এখন পরিনত হয়েছে ‘বিল্ডিং শহর’। নদী ভরাট ও সরকারি জমি দখল করে পাকা বাড়ি নির্মাণের উৎসব শুরু হয়েছে উপজেলা সদরে।

নাজিরপুর সদর উপজেলার দিকে তাকালেই দেখা যায় সারি সারি বিল্ডিং। চোখে দেখা এই দোতলা-তিনতলা বাড়ির সারিতে লুকিয়ে আছে এক ভয়ঙ্কর সত্য। অধিকাংশ ভবনের নিচেই সরকারি জমি! কেউ পৌরসভার জায়গা দখল করেছেন, কেউ আবার নদী ভরাট করে গড়ে তুলেছেন দোকান, মার্কেট, টিনশেড বাড়ি। স্থানীয়দের ভাষায়, ‘নাজিরপুরে সরকারি জমি মানে যেন যার যার ভাগ।’

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পরবর্তীতে নাজিরপুর উপজেলা সদরে বিশেষ কয়েকজন ব্যবসায়ীর দোকানপাট দখল লুটপাট হবার পরেও নানারকম ভুয়া অভিযোগের ভিত্তিতে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সেই সকল চান্দিনা ভিটির বরাদ্দ বাতিলের জন্য গোপনে উদ্যোগ নিয়েছে নাজিরপুর উপজেলা ভূমি অফিস। আর এসব বিষয় নিয়েই এখন বাজারে চলছে কানাঘুষা।

নাজিরপুর সদর বাজারে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, নাজিরপুর বেড়িবাঁধ সংলগ্নচর গলিতে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক বিশ্বনাথের দোতলা ভবন, ছাদ দেওয়া, তার উপর আবার টিনের ছাউনি। তার পাশে সাতকাসমিয়ার মফিজুলের দোতলা বাড়ি, টিনে ঢেকে রাখা। পাশের ভিটিতেই সাংবাদিক আকরাম আলী ডাকুয়ার জায়গায় ঠান্ডু হাজরার দোতলা ভবন। তার ঠিক পরেই হোটেল প্রদীপ, চার ভিটির উপরে দোতলা বিল্ডিং, রাস্তার দেড়-দুই ফুট অংশ গিলে নিয়েছে বলেও অভিযোগ স্থানীয়দের।

সরকারি জমি যেন পারিবারিক সম্পত্তি
নাজিরপুর কাঁচা বাজার সংলগ্ন সড়কের পাশে পানু ফরাজী দোকান তুলেছেন সরকারি জায়গা ঘেঁষে। তার পাশে আওয়ামী লীগের সাবেক উপজেলা সভাপতি আব্দুল মালেক বেপারী অন্তত ছয়টি ভিটির উপরে দোতলা পাকা ভবন গড়ে তুলেছেন।

নাজিরপুর উপজেলা পরিষদের গেটের পাশেও যেন একই দৃশ্য। সাংবাদিক মোস্তফিজুর রহমান লাভলু প্রায় ৬টি ভিটি দখল করে তুলেছেন দোতলা মার্কেট। তার ঠিক উত্তরে ছোট ভাই বাবলুর ৮টি ভিটির উপরে আরেকটি দোতলা মার্কেট। সরকারি জায়গা কার নামে বন্দোবস্ত, কার নামে ইজারা-তা কেউ জানে না, জানতেও চায় না।

আওয়ামী, বিএনপি, জামায়াত-সব রঙের দখলদার!
পুরাতন ব্রিজ রোডে দলিল লেখক শাহাদাত মুহুরীর ছাদ দেওয়া ভবন। একই সড়কে আওয়ামী লীগ নেতা ও শেখমাটিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আতিউর রহমান চৌধুরী নান্নুর দোতলা বাড়ি।

মেইন সড়কের ওপর সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী নেতা আবুল হাসানাত খান পেয়ারার বাড়িটিও সরকারি জমির ওপর দাঁড়িয়ে। তার বিপরীতে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও ভাইস চেয়ারম্যান মুস্তাফিজুর রহমান রঞ্জু ও তার ভাই সাদেক শেখ ছয়টি ভিটি দখল করে দোতলা ভবন তুলেছেন-নিচে দোকান, উপরে পরিবার।

নাজিরপুর পুরাতন ব্রিজ রোডে রয়েছে নাজিরপুরের জামায়াত নেতা এবং ঢাকা জজ কোর্টের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর আবু সাঈদ মোল্লার পরপর দুটি দোতালা পাকা ভবন।

অন্যদিকে প্রেস ক্লাবের নামে বরাদ্দ পাওয়া আধা শতক জমির চারপাশেই নতুন গল্প, বিএনপি নেতা আবু সাঈদ খান প্রায় ছয় শতক সরকারি জমি দখল করে নিজে বসবাস করছেন, দোকান ভাড়া দিয়েছেন। ভবনের একাংশ নাকি বেড়িবাঁধের উপর চলে গেছে!

বাজারের ফার্নিচার গলি, হোটেল গলি—সব জায়গাতেই একই দৃশ্য। ডেকোরেটর সালামসহ কয়েকজন প্রথম তলায় ছাদ দিয়ে দ্বিতীয় তলায় টিনশেড তুলেছেন। নিচে দোকান, উপরে বসতি।

স্টেডিয়ামের পেছনে ‘ছাদ রাজনীতি’
নাজিরপুর স্টেডিয়ামের রাস্তার পাশে, প্রেস ক্লাব ভবনের পেছনে অন্তত চারটি দোতলা বাড়ি—সবগুলোই সরকারি জায়গায়। অতি সম্প্রতি জামাত ইসলামীতে যোগ দেয়া সাবেক জাতীয় পার্টি নেতা আলামিন খান, শেখমাটিয়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা আতিয়ার রহমান চৌধুরী এবং নাজিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিস কার্যালয়ের সাবেক কর্মকর্তা মৃগেন বড়ালের দোতলা বাড়ি রয়েছে এখানে।

নিচতলায় দোকান ভাড়া, উপরে পরিবার
নাজিরপুর উপজেলা ভূমি অফিসের ঠিক পিছনে সাবেক সংসদ সদস্য আউয়াল সাহেবের বিতর্কিত ভবনের পাশেই সাবেক সেনা কর্মকর্তা কাঞ্চনের দোতলা বাড়িও এখন আলোচনায়। পুরাতন ব্রিজ সড়কে বিএনপি নেতা হিরুয়ার রহমানের দোতলা ভবনের কাজও চলছে পুরোদমে।

এদিকে উপজেলা ভূমি অফিসের ঠিক পূর্ব পাশের পুরাতন ব্রিজ সড়কে সরকারি জমিতে ‘উন্নয়নের জোয়ার’। এখানে আছেন কৃষক লীগ নেতা ও চেয়ারম্যান আতিয়ার রহমান চৌধুরী নান্নু, বিএনপি নেতা সাঈদ ফরাজী, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সাহাদত হোসেন খান—সবাই ছাদ দেওয়া দোতলা ভবনের মালিক।

বিগত পাঁচ আগস্ট এর পরেই নাজিরপুর পুরাতন ব্রিজ সড়ক এবং ফার্নিচার গুলির মধ্যবর্তী স্থানে আটটি চান্দিনা ভিটির উপরে দোতলা ভবন গড়ে তুলেছে উল্লেখিত সাঈদ ফরাজী। আবার ৫ আগস্ট পরবর্তীতে নাজিরপুর উপজেলা সদরের তোহা বাজারের প্রায় ৩০ শতাংশ সরকারি জমি দখল করে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে সেখানে ঘর তুলে দলীয় কাজকর্মসহ বিভিন্ন ধরনের কাজে ঘরটি ব্যবহার করছে নাজিরপুর উপজেলা জামাত ইসলামী।

নাজিরপুর উপজেলা সদরে প্রায় দেড় শতাধিক এ ধরনের অবৈধ স্থাপনা থাকলেও নাজিরপুর উপজেলা ভূমি অফিস এবং উপজেলা প্রশাসন অজ্ঞাত কারণে নীরব ভূমিকা পালন করছে। তবে বিশেষ রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নে এবং প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে অতি সম্প্রতি বেশ কয়েকজন প্রকৃত ব্যবসায়ীকে তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে উচ্ছেদের জন্য নাজিরপুর উপজেলা ভূমি অফিস কর্তৃপক্ষ ঐ সকল ব্যবসায়ীদের নামে বরাদ্দকৃত চান্দিনা ভিটির বরাদ্দ বাতিলের উদ্যোগ নিয়েছে বলে বিশ্বস্ত একটি সূত্র জানায়। যার ফলে বাজারে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসারত থাকা ওই সকল ব্যবসায়ীরা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে জানিয়েছে ভুক্তভোগীরা।

নাজিরপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এস এম নুরেআলম সিদ্দিকী শাহীন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ধারাবাহিকভাবে নাজিরপুর বাজারে চান্দিনা ভিটির উপরে আধা পাকা এবং দোতলা ভবন গড়ে উঠেছে অনেকটা ভূমি অফিসের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায়। বিগত দিনে এসব বিষয় নিয়ে কোন প্রশ্ন না উঠলেও গত পাঁচ আগস্ট পরবর্তীতে শুধুমাত্র রাজনৈতিকভাবে প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে বিশেষ কয়েকজন ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ভূমি অফিস আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে কিন্তু বেশিরভাগ অবৈধ ভবন মালিকদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না যা সম্পূর্ণরূপে ভূমি অফিসের পক্ষপাত দুষ্ট আচরণ।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফুল আলম খান বলেন, ডিসিআর হচ্ছে স্বল্পমেয়াদি বন্দোবস্ত। শর্ত ভঙ্গ হলে তা বাতিলের সুযোগ আছে।

এ বিষয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) শপথ বৈরাগী বলেন, ‘আমি ১৬ অক্টোবর দায়িত্ব নিয়েছি। ডিসিআরের জমিতে পাকা ভবনের অনুমতি নেই। শর্ত ভঙ্গ হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এফপি/এমআই
সর্বশেষ সংবাদ  
সর্বাধিক পঠিত  
YOU MAY ALSO LIKE  
Editor & Publisher: S. M. Mesbah Uddin
Editorial, News and Commercial Offices: Akram Tower, 15/5, Bijoynagar (9th Floor), Ramna, Dhaka-1000
Call: 01713-180024, 01675-383357 & 01840-000044
E-mail: news@thefinancialpostbd.com, ad@thefinancialpostbd.com, hr@thefinancialpostbd.com
🔝