যুবলীগ নেতা সাইফুল ইসলাম বাবু'র কিশোরী কন্যা ৯ম শ্রেনীর মাদ্রাসা ছাত্রী নিহা'র পালিয়ে যাওয়া নিয়ে ঘটনার সুত্রপাত। এর আগেও একাধিকবার পালিয়ে ছিল এই মেয়ে। আর সেই ঘটনার জের ধরে কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার এরশাদ ডিগ্রী কলেজের নিরিহ,তরুন, মেধাবী, দরিদ্র শিক্ষার্থী তুহিন (১৯) কে মসজিদের সামনে থেকে অপহরন শেষে দফায় দফায় নির্যাতন,ড্রিল মেশিন দিয়ে শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত,সর্বশেষ যানবাহন আটকে হাসপাতালে নিতে বাঁধার, শেষ পরিনতি ৭ দিন চিকিৎসা শেষে অকালে মৃত্যুবরণ।
ঘটনার পর যা হয়, এলাকাবাসীর, তুহিনের সহযোগীসহ নিজ এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে বিচারের দাবীতে মানব বন্ধন,প্রশাসন থেকে কেউ কেউ এসে পরিবারকে শান্তনা,বিচারের আশ্বাস। তবে যার যায়,সেই বুঝে! তার মা ফেরদৌসী আক্তার সাংবাদিকদের বলেন, মৃত্যু শয্যায় তুহিন তাকে বলেছিল,মা তুমি কেন আগে আসোনি,আসলেতো আমাকে এত নির্যাতন সইতে হতো না। কান্নায় বাকরুদ্ধ মা তখন কোন প্রতিউত্তর দিতে পারেনি। এদিকে ঘটনার দশ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো অপরাধীরা ধঁরা-ছোঁয়ার বাইরে। অনেকের আশঙ্কা হয়তো পালিয়ে বিদেশ চলে গেছে,নয়তো চলে যাওয়ার অপেক্ষায় আছে।
কুমিল্লা বুড়িচং উপজেলার পীরযাত্রাপুর ইউনিয়নের বাহেরচর গ্রামের মোসলেহ উদ্দীনের ছেলে তুহিন। গত ২০ অক্টোবর ২০২৫ ইং সন্ধ্যায় মাগরিবের নামাজ পড়তে বাড়ির পাশের মসজিদে যায়। সেখান থেকেই একই ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের চিহ্নিত সন্ত্রাসী ,যুবলীগ রাজনীতির সাথে জড়িত স্থানীয় নেতা বিল্লাল হোসেন ঠিকাদারের কর্মী সাইফুল ইসলাম বাবু তার কয়েকজন সহযোগীসহ একটি প্রাইভেট কারে এসে অপহরণ করে গোবিন্দপুর গ্রাম সংলগ্ন গোমতী নদীর পাশে তার মালিকানাধীন “প্যারাডাইস বায়োফ্লক” নামের মাছের ঘেরে নিয়ে যায়। সেখানে কয়েক দফা নির্যাতনের পর তুহিনের মোবাইল ফোনে বাবা মোসলেহ উদ্দীন ও মা ফেরদৌসী আক্তারকে ডেকে নেয়। এরপর বাবা-মা'র সামনে চলে আবারো নির্যাতন। একসময় বাবু তুহিনের মা-বাবা'র কাছ থেকেও তাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়।
উত্তেজিত হয়ে বাবু বলে, তোদের কেটে মাছের ঘেরে ফেলে দিব,প্রয়োজনে ২/৪ লাখ টাকা খরচ করবো। একপর্যায়ে তাদের ছেড়ে দিলেও কোন যানবাহন করে তুহিনকে হাসপাতালে নিতে বাধা সৃষ্টি করে। পরে প্রথমে বুড়িচং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স,কুমিল্লা সদর হাসপাতাল, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হয়ে তুহিনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ৭ দিন বাঁচা-মরার সংগ্রামে হার মানে কলেজ ছাত্র তুহিন। স্থানীয় ও নিহতের পরিবার সুত্র জানায়, তুহিনকে মারার ঘটনায় যখন তার মা বুড়িচং থানায় সাইফুল ইসলাম বাবু, তার পুত্র নাফিজ উদ্দিন একই ইউনিয়নের শ্রীপুর গ্রামের জহিরুল ইসলাম ও আব্দুল আলীমসহ অজ্ঞাত কয়েকজনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করে,সে সময় পুলিশ উল্টো তুহিনের দু'বন্ধু মেহেদি ও তানভীর হোসেনকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায়।
নিহত তুহিনের মা ফেরদৌসী আক্তার জানান, আমরা তুহিনকে উদ্ধারে বাবু'র মাছের ঘেরে যাওয়ার পর তুহিন যেমন নির্যাতন থেকে বাঁচতে কাকুতি-মিনতি করে,আমরাও কান্নাকাটি করি। আমাদের সামনে সে অজ্ঞান হলে তাকে পানি ছিটিয়ে জ্ঞান ফেরার পর আবারো নির্যাতন করেছে। এরকম বেশ ক'বার সে অসুস্থ হলেও বাবু'র মন গলেনি। তিনি আরো বলেন, মুমুর্ষূ তুহিন আমাকে বলে,তোমরা কেন আগে আসোনি,আগে আসলেতো আমাকে এত মার খেতে হতো না। এছাড়াও মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত ঘাতক বাবু ও তার সন্ত্রাসীবাহিনীর সদস্যরা আমাদের নানাভাবে হুমকী দিয়েছে।সর্বশেষ গত ২৭ অক্টোবর তুহিন মারা যাওয়ার পর অপরাধীরা আড়ালে চলে যায়।
স্থানীয় এলাকাবাসী নাম পরিচয় গোপন রাখার শর্তে বলেন, পুলিশ আন্তরিক হলে ঘটনার পরপরই অপরাধীদের গ্রেফতার বা আটক করতে পারতো। এদিকে তুহিনের মৃত্যুতে তার সহপাঠিসহ উপজেলার সাধারন মানুষ ফুসে উঠেছে। তারা প্রতিদিনই বিচারের দাবীতে বিক্ষোভ,মানববন্ধন করছে। পুলিশের গাফিলতির অভিযোগও করছেন এলাকাবাসী। ২৯ অক্টোবর বেলা ১১ টায় সর্বস্তরের মানুষের উপস্থিতিতে বাহেরচর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে জানাযা'র নামাজ শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দান করা হয়।
এব্যাপারে বুড়িচং থানার ওসি আব্দুল আজিজ বলেন মামলার আসামীরা খুবই চতুর। এখনো কোন আমামী আটক হয়নি, আমরা এবং ডিবি চেষ্টা করছি।
এফপি/অ