বাংলাদেশ এখন যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলনামূলক বেশি দামে গম আমদানি করছে। কারণ রাশিয়ান গমের দাম কম হলেও যুক্তরাষ্ট্রের বাজার ও দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত বাণিজ্য চুক্তি রক্ষা করাকে গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার।
গতকাল রোববার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক শীর্ষ কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে এসব তথ্য জানান।
বর্তমানে মার্কিন ও রাশিয়ান গমের দামের পার্থক্য প্রতি টনে ৭৫ থেকে ৮০ ডলার। বাংলাদেশ প্রতি টন আমেরিকান গম ৩০৮ ডলার দরে কিনছে, যেখানে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি টন রাশিয়ান গম বিক্রি হচ্ছে ২২৬ থেকে ২৩০ ডলারে।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, শনিবার চট্টগ্রাম বন্দরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে কেনা ৫৭ হাজার টন গমের প্রথম চালান এসে পৌঁছেছে। এটি ৪ লাখ ৪০ হাজার টন গম কেনার চুক্তির অংশ।
চলতি বছরের শুরুতে খাদ্য অধিদপ্তর ও যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি দপ্তরের মধ্যে স্বাক্ষরিত এক সমঝোতা স্মারকের আওতায় এই গম কেনা হয়েছে।
এর আগে ট্রাম্প প্রশাসন বাংলাদেশের ওপর শুল্কহার ৩৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশে আনে। বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি বাড়াতে রাজি হওয়ার পর এই শুল্ক কমানো হয়। যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের উদ্দেশ্য ৬ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি কমানো।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে বছরে ৮ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ এবং ৬ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করে।
সরকার বাণিজ্য চুক্তির আওতায় ৩৫ লাখ টন গম আমদানি করতে সম্মত হয়েছে। চুক্তির খসড়া উভয় পক্ষই ইতোমধ্যে অনুমোদন দিয়েছে, এখন কেবল আনুষ্ঠানিক স্বাক্ষর বাকি আছে।
বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, 'বাংলাদেশের মূল লক্ষ্য হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের ৮ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি বাজার রক্ষা করা, যা এ বছর শেষে ১০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাতে পারে।'
তিনি আরও বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বড় বাণিজ্য অংশীদার, রাশিয়ার তা নয়। তাই এই বাজারে কিছু সুবিধা দেওয়া যৌক্তিক।'
রাশিয়ায় বাংলাদেশের রপ্তানি এখনো ১ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেনি।
তিনি উল্লেখ করেন, সুবিধাজনক শুল্ক নীতির কারণে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানি দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে।
তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্রের গমে প্রোটিনের পরিমাণ ও মান দুই-ই রাশিয়ান গমের তুলনায় ভালো, তাই ঐতিহ্যগতভাবে মার্কিন গমের দাম কিছুটা বেশি।
তিনি আরও বলেন, ক্ষতিকর পোকা ও আর্দ্রতার কারণে রাশিয়ান গমের ১২ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত নষ্ট হয়ে যায়, ফলে কার্যকর গমের পরিমাণ কমে যায়।
তার ভাষ্য, এছাড়া রাশিয়া ও ইউক্রেনকে বাংলাদেশের জন্য গম সরবরাহের নির্ভরযোগ্য উৎস হিসেবে ধরা যায় না, কারণ দুই দেশের চলমান যুদ্ধে সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটতে পারে।
'যুদ্ধের কারণে যেকোনো সময় রাশিয়া বা ইউক্রেন থেকে সরবরাহ ব্যাহত হতে পারে, এমনকি জাহাজ ডুবির ঝুঁকিও আছে' বলেন বাণিজ্য সচিব।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, বেসরকারি খাত চাইলে রাশিয়া থেকে কম দামে গম আমদানি করতে পারে, তবে সরকারের উদ্যোগ মূলত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর অংশ।
সরকারের এ উদ্যোগের মধ্যে আরও আছে, বোয়িং বিমান ও এলএনজি কেনা, গম, তুলা ও সয়াবিনসহ অন্যান্য কৃষিপণ্য আমদানি বৃদ্ধি।
মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাসলিম শাহরিয়ার বলেন, 'আমরা দামের প্রতিযোগিতা বিবেচনা করেই গম আমদানি করি, তবে যুক্তরাষ্ট্রের গমের মান সাধারণত রাশিয়ার চেয়ে ভালো।'
তিনি যোগ করেন, মেঘনা গ্রুপ যুক্তরাষ্ট্র থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে সয়াবিন আমদানি করে, কিন্তু গমের ক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে কম আমদানি করে।
তিনি জানান, বর্তমানে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা থেকে সয়াবিন কিনতে শুরু করেছে চীন। ফলে মার্কিন সয়াবিনের দাম আগের চেয়ে কমে গেছে।
এফপি/অ