মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় মাধ্যমিক স্তরের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করনের উদ্যোগ নিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। এজন্য অনলাইন ব্যাংকিং সেবা পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। এ পদ্ধতির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে স্কুলে জমা দেয়া যাবতীয় নগদ অর্থের লেনদেন বন্ধ হচ্ছে।
অতীতে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বেশিভাগের ক্ষেত্রেই অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া যেত। এসব অভিযোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের বিরুদ্ধেই ছিল। আর্থিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেতন, ভর্তি ফিসহ বিভিন্ন খাতের টাকা এখন থেকে আর নগদ লেনদেন হবেনা। শিক্ষার্থীরা ঘরে বসেই অনলাইনে টাকা ব্যাংকে জমা দিতে পারবে।
সম্প্রতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মহিউদ্দিনের উদ্যোগে উপজেলার সকল মাধ্যমিক স্কুল ও কলেজের প্রধানদের নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক করার পর এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সেই সিদ্ধান্তের পর সোনালী ব্যাংকের অনলাইন ‘সোনালী সেবা’র মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে যাবতীয় বেতন ফি, চার্জ আদায়ের জন্য সোনালী ব্যাংক পিএলসির পক্ষ থেকে অফার লেটার উপজেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের কাছে পাঠানো হয়। পরে সোনালী ব্যাংক পিএলসি কুলাউড়া শাখায় চুক্তি সম্পাদন করার জন্য সম্মতি প্রদান করে দিলদারপুর উচ্চ বিদ্যালয়, উত্তর কুলাউড়া উচ্চ বিদ্যালয়, ভূকশিমইল মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজ, গজভাগ মোহাম্মদ আলী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, ছকাপন উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, নয়াবাজার কৃষ্ণ চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, শাহ সুন্দর উচ্চ বিদ্যালয়, তেলিবিল উচ্চ বিদ্যালয়, রাউৎগাঁও উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, টিলাগাঁও আজিজুন্নেছা উচ্চ বিদ্যালয়, আলী আমজদ উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, শাহজালাল উচ্চ বিদ্যালয়, কানিহাটি বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়, কুলাউড়া রেলওয়ে উচ্চ বিদ্যালয়, রাজনগর উচ্চ বিদ্যালয়, মাস্টার শরাফত আলী উচ্চ বিদ্যালয়। সোনালী ব্যাংক পিএলসি বরমচাল ফুলেরতল বাজার শাখায় চুক্তি করে বরমচাল উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, ভাটেরা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, সিঙ্গুর, শ্রীপুর ও জালালাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়। এছাড়া মহতোছিন আলী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ প্রাইম ব্যাংক কুলাউড়া শাখায় চুক্তি সম্পাদন করে। কুলাউড়ায় স্কুল-কলেজ মিলে মাধ্যমিক স্তরে মোট ৪০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তন্মধ্যে ২২টি প্রতিষ্ঠান ব্যাংকের সাথে চুক্তি সম্পাদন করে।
বরমচাল উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ মো. ফজলুল হক বলেন, ইউএনও স্যারের এই উদ্যোগটি শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। কুলাউড়ায় সর্বপ্রথম আমাদের প্রতিষ্ঠান এই অনলাইন সেবার আওতায় এসেছে। এই সেবার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা ঘরে বসে তাদের ইউনিক আইডি ও প্রতিষ্ঠানের ইআইএন দিয়ে ব্যাংকের সফটওয়্যারে প্রবেশ করে অনলাইনে বিকাশ, নগদ, উপায়, ডাচবাংলাসহ বিভিন্ন মাধ্যমে মাসিক বেতন, ভর্তি, সেশন ফি, পরীক্ষা ফিসহ চার্জ জমা দিতে পারবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন বলেন, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে বিভিন্ন সময় অভিযোগ এসেছিল। গত নভেম্বর মাসে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নীতিমালা অনুসারে সকল শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান প্রধানদের নিয়ে কয়েক দফায় বৈঠকে বসি। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেতন, ফি, চার্জসহ প্রাপ্ত অর্থ সরাসরি স্কুলে জমা না দিয়ে অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে জমা দেবার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। যেসকল প্রতিষ্ঠান আগ্রহী ছিল তাদেরকে সোনালী ব্যাংক অফার লেটার দিয়েছে। তারপর স্কুলগুলো সম্মতি দিলে ব্যাংকের সাথে চুক্তি সম্পাদন করা হয়। গত বুধবার থেকে পরীক্ষমূলকভাবে এই কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে অনেক প্রতিষ্ঠানে অনলাইন সেবা চালু হয়েছে। আশা করছি পর্যায়ক্রমে সকল প্রতিষ্টান এই পদ্ধতির আওতায় আসবে। এতে প্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে।
জেলা প্রশাসক মো. ইসরাইল হোসেন বলেন, কুলাউড়ার ইউএনও’র উদ্যোগটি খুবই চমৎকার। এই উদ্যোগটি অনুকরণীয় হয়ে থাকবে। জেলার সব উপজেলায়ও এই পদ্ধতি চালু করা হবে। এই পদ্ধতির মাধ্যমে শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে বলে মনে করি।
এফপি/এমআই