রামু উপজেলা (কক্সবাজার) শাখার জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আহ্বায়ক কমিটিতে সদ্য ঘোষিত তালিকায় একজন বৌদ্ধ ভিক্ষুর নাম অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় এলাকায় তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। কমিটিতে নাম থাকা ভিক্ষু প্রজ্ঞাবিনয় স্থবির দাবি করছেন, তিনি রাজনৈতিক দল এনসিপির সঙ্গে কোনোভাবে যুক্ত ছিলেন না এবং বিষয়টি সম্পূর্ণ অজ্ঞাতভাবে ঘটেছে। কিন্তু এনসিপি নেতারা বলেন, ভিক্ষু নিজে ইচ্ছাকৃতভাবে কমিটিতে নাম দিয়েছেন এবং তাদের কাছে এ বিষয়ে প্রমাণও রয়েছে।
ভিক্ষু প্রজ্ঞাবিনয় স্থবির বলেন, “আমার অজ্ঞাতেই এনসিপি রামু উপজেলা কমিটির তালিকায় আমার নাম যুক্ত করা হয়েছে। আমি একজন বৌদ্ধ ভিক্ষু। ধর্মীয় দায়িত্ব ও নৈতিকতার কারণে কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকা আমার জন্য মানানসই নয়। তাই আমি এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং দ্রুত কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ করছি আমার নামটি কমিটি থেকে বাদ দেওয়ার জন্য।”
ভিক্ষু আরও জানিয়েছেন, সম্প্রতি তিনি স্থানীয় বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধানের জন্য বিদ্যুৎ অফিসে গিয়েছিলেন। সেখানে এনসিপির কয়েকজন নেতার সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল। ধারণা করা হচ্ছে, সেই সূত্র ধরে তাঁকে ‘বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি’ হিসেবে কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
এদিকে এনসিপির রামু উপজেলার নতুন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক এম.এ.জে হাসান বলেছেন, “প্রজ্ঞাবিনয় স্থবির নিজের ইচ্ছেতেই এনসিপির সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। হঠাৎ করে ফেসবুকে এসে ‘আমি কিছুই জানি না’ বলে প্রচার করা অযুক্তি। তবে ভিক্ষু যদি চান যে কমিটিতে থাকবেন না, তাহলে আমরা যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করব।”
স্থানীয়রা বলছেন, এই বিতর্ক শুধু একটি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নয়, বরং ধর্মীয় দায়িত্ব এবং সামাজিক বিশ্বাসের সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় জনমনে বিভ্রান্তি তৈরি করেছে। অনেকেই মনে করছেন, ধর্মীয় নেতাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সরাসরি যুক্ত হওয়া উচিৎ নয়।
প্রকাশ বড়ুয়া নামে একজন মন্তব্য করেছেন, “ভোট দেওয়ার অধিকার অবশ্যই আছে, তবে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নেওয়া উচিৎ নয়। রাজনীতি করলে সমাজে বিভাজন সৃষ্টি হতে পারে এবং মানুষের মধ্যে ক্রোধ জন্মাতে পারে।”
ভিক্ষু তিষানন্দ মন্তব্য করেছে অনুমতি ছাড়া কারো নাম, ছবি বা ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার করা অনুচিত। অন্যদিকে, অর্প বলেন, “যদি ভুল হয়ে থাকে, পুরো দায়ভার এনসিপি’র এবং বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা উচিত।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, এই ঘটনা শুধু স্থানীয় রাজনীতি নয়, বরং ধর্মীয় ও সামাজিক দায়বদ্ধতার মধ্যে সঙ্কটের প্রতিফলন। তারা বলছেন, “ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব এবং রাজনৈতিক সংস্থা একসাথে থাকলে জনসাধারণের মধ্যে বিভ্রান্তি ও অবিশ্বাস সৃষ্টি হতে পারে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে উভয়পক্ষকেই সংযমী হতে হবে।”
এফপি/এমআই