বান্দরবানের বিভিন্ন উপজেলায় সেতুর অভাবে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন অন্তত ২ লাখ মানুষ। দীর্ঘদিন ধরে এই সমস্যা চললেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় প্রতিদিনই শিক্ষা, চিকিৎসা, কৃষি ও ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডে ভোগান্তি বাড়ছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জেলার সদর, রোয়াংছড়ি, রুমা, থানচি, লামা, আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রামীণ জনপদে স্থায়ী সেতুর অভাব সবচেয়ে বেশি প্রকট। বান্দরবান পাহাড়ি জেলা হওয়ায় ঝিরি ও ছোট ছোট খালের সংখ্যা অধিক।শুকনো মৌসুমে চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ি ঢল বা হরকা বাণের কারনে এসময় ঝুকিপূর্ণ হয়ে উঠে চলাচল। এর মধ্যে কয়েকটি স্থানে বাঁশের সাঁকো থাকলেও অধিকাংশে তাও নেই। বর্ষা মৌসুমে এসব এলাকার শিক্ষার্থীরা ঝুঁকি নিয়ে বিদ্যালয়ে যেতে গিয়ে খাল পারাপারের সময় ঢলের পানিতে তলিয়ে মৃত্যুর সংখ্যাও কম নয়।
এসব এলাকার অসুস্থ রোগী ও প্রসুতি মায়েদের সময়মতো চিকিৎসা সেবা পেতেও বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে। এছাড়াও অন্তত অর্ধলক্ষ হেক্টর জমির উৎপাদিত ফসল বাজারে পৌঁছাতে গিয়ে মারাত্মক সমস্যায় পড়তে হচ্ছে কৃষকদের। এতে স্থানীয় অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।
বারবার সেতু নির্মাণের আবেদন জানানো হলেও এখনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। দ্রুত স্থায়ী সেতু নির্মাণ করে ভোগান্তি দূর করার জোর দাবি তুলেছেন তারা।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বান্দরবান-লামা সড়ক দিয়ে তিনটি উপজেলার কয়েক লাখ মানুষের সহজ যাতায়তের একমাত্র অবলম্বন এটি। অতি বৃষ্টিতে সড়কটির বেশ কিছু এলাকায় ভাঙন সৃষ্টি হলেও ২২০০ মিটার চেইনেজ এলাকায় বেশ ঝুকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।মঞ্জয় পাড়া-নাচালং সড়কের ১৪৩৭০ চেইনেজ এলাকা,আলীকদমের ওবাইদুলহাকিম পাড়া সড়কের বাসস্টেন্ড হিন্দু পাড়া এলাকা,কলারঝিড়ি সড়ক, লামার গাইন্ধ্যা-চিন্তাবা পাড়া সড়কের বমু খাল এলাকা,ফাইতং চিউবতলী পোলাও পাড়া খাল এলাকা, নাইক্ষ্যংছড়ি সাপের গাড়া এলাকার কাগজি খোলা খাল এলাকা,কম্বনিয়া পাড়া, মিরঝিরি পাড়া এলাকা, রোয়াংছড়ির ব্যাংছড়ি খাল, থানচি বলিপাড়ার সোনাইছড়ি খান, তিন্দু খাল,রুমার হানারাম পাড়া,রুমার গ্যালেংগা খালসহ বেশ কিছু এলাকায় কোথাও সেতু নেই আবার কোথাও ৩০-৫০ বছরের ছোট আকারের ভাঙা পুরোনো সেতু। যা চলাচলের সম্পূর্ণ অনুপযোগী হয়ে গেছে। ভাঙা সেতু দিয়ে কোন রকমে কিছু এলাকার মানুষ পারাপার হতে পারলেও সাপেরগাড়া, চিন্তাবা পাড়া, ব্যংছড়িসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ ঝিরি বা খাল পার হয় পায়ে হেঁটে। এছাড়া বর্ষা মৌসুমে স্বাস্থ্যসেবা, কৃষি পন্য পরিবহনসহ শিক্ষা গ্রহনও ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।
সাপের গাড়া এলাকার বাসিন্দা জেবুল হক ও জসীম উদ্দীন বলেন, সাপের গাড়া- কাগজিখোলা এলাকায় অন্তত ২৫- ৩০ হাজার লোকের বসবাস। গত ২০ বছর ধরে এই এলাকায় বসবাস গড়ে উঠলেও একটি সেতুর অভাবে বর্ষাকালে শিক্ষার্থীদের স্কুলে যাতায়ত স্বাস্থ্যসেবা,কৃষি পন্য পরিবহনসহ ব্যহত হয় স্থানীয় ব্যবসা বানিজ্য। এছাড়া বর্ষাকালে স্কুলে যেতে গিয়ে ঢলের পানিতে ভেসে গিয়ে কয়েক জন শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে।ফলে এই এলাকায় অতি দ্রুত সেতু নির্মাণের দাবি জানান তারা।
গজালিয়া ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান বাথোয়াই চিং মারমা বলেন, চিন্তাবর ,বাইশফারি ,ঢেকিছড়া,তুলাতলি ,বটতলি, হামায় চর পাড়া এলাকায় ৮-৯ হাজার মানুষের বসবাস।বমু খালের উপর একটি সেতুর অভাবে কয়েক দশক ধরে যাতায়াতে ভোগান্তি হচ্ছে তাদের।এই এলাকায় স্কুল,কলেজ থাকলেও বর্ষা মৌসুমে অধিকাংশ ছাত্র-ছাত্রীরা স্কুলে যেতে পারেনা খালের পানিতে প্রবল স্রোতের কারনে।এছাড়া অন্যান্য অসুবিধাতো আছেই। ফলে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে সেতুটি অতিদ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানান তিনি।
বান্দরবান স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ তাসাউর বলেন, জেলার ৭ টি উপজেলায় জনগণের চাহিদা ও প্রয়োজনীয়তা স্বাপেক্ষে অতি প্রয়োজনীয় আন্ডার হানড্রেড মিটারের ৪১ টি সেতু নির্মাণের জন্য উর্ধতন কতৃপক্ষের নিকট আবেদন পাঠানো হয়েছে।অনুমোদন স্বপেক্ষে সেতু গুলো নির্মাণ কাজ চালু করা হবে বলে জানান তিনি।
এফপি/অআ