শিরোনাম: |
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর ভয়াবহ ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে মরদেহ উদ্ধারের কাজ শুরু হয়েছে। যুদ্ধবিরতি শুরুর পর থেকেই উদ্ধারকারীরা বিভিন্ন এলাকায় বোমাবর্ষণে ধসে পড়া ভবনগুলোয় অভিযান চালাচ্ছেন।
বার্তাসংস্থা ওয়াফা নিউজ জানায়, গতকাল গাজার বিভিন্ন হাসপাতালে ১৫৫টি মরদেহ আনা হয়। এর মধ্যে অন্তত ১৩৫টি ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে উদ্ধার করা হয়। ওয়াফার তথ্য অনুযায়ী, ৪৩টি মরদেহ পাঠানো হয়েছে গাজার আল-শিফা হাসপাতালে, ৬০টি আল-আহলি আরব হাসপাতালে, ১৬টি দেইর এল-বালার আল-আকসা শহীদ হাসপাতালে, ৩২টি খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালে এবং আরও কয়েকটি নুসেইরাতের আল-আওদা হাসপাতালে।
২০২৩ সাল থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি উপর্যুপরি হামলায় গাজার বহু বাড়িঘর বোমা ও গোলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ফলে নিজ নিজ বাড়ি ও ভিটেমাটি খুঁজে পেতে হিমশিম খাচ্ছেন ফিলিস্তিনিরা। তবুও অনেকে ফিরে যাচ্ছেন ধ্বংসস্তূপ্তেকারণ আর পালিয়ে বেড়াতে হবে না, নিজের মাটিতেই আবার দাঁড়ানোর আশায় তারা ফিরছেন। এটাই তাদের কাছে অসীম আনন্দের অনুভূতি নিয়ে এসেছে।
যুদ্ধবিরতি তদারকিতে ইসরাইলে মার্কিন সেনা দল: এদিকে, গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর রাখতে যুক্তরাষ্ট্র সেনা পাঠাচ্ছে ইসরায়েলে। এবিসি নিউজ জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন ঘাঁটি থেকে প্রায় ২০০ সেনা সদস্য এই সপ্তাহান্তে ইসরায়েলে পৌঁছাবেন। মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ডের (সেন্টকম) প্রধান অ্যাডমিরাল ব্র্যাড কুপার ইতোমধ্যে ইসরাইলে পৌঁছেছেন। তারা ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সঙ্গে যৌথ নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র গঠন করবেন এবং অন্যান্য দেশীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করবেন।
তবে মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কোনো মার্কিন সেনা গাজা উপত্যকায় প্রবেশ করবে না। এই তদারকি মিশনে মিশর, কাতার, তুরস্ক ও সম্ভবত সংযুক্ত আরব আমিরাতের সামরিক কর্মকর্তারাও থাকবেন। কেন্দ্রটি পরিচালিত হবে মিশর থেকেই।
এদিকে, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, শুক্রবার সকালে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর গাজার কিছু অংশ থেকে সেনা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তবে গাজার অর্ধেকের বেশি অংশ এখনও তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে বিবিসি জানিয়েছে।
ভিডিওচিত্রে দেখা গেছে, হাজারো ফিলিস্তিনি উত্তর গাজার দিকে ফিরে যাচ্ছেন। সামপ্রতিক মাসগুলোর ভয়াবহ বোমাবর্ষণের সাক্ষী এই এলাকা। ইসরায়েল জানিয়েছে, সেনাদের কিছুটা দূরে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
আইডিএফের এক বিবৃতিতে বলা হয়, তবে দক্ষিণ কমান্ডের সেনারা যে কোনো তাত্ক্ষণিক হুমকি মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকবে।” মার্কিন বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ বলেছেন, আইডিএফের সেনারা নির্ধারিত ‘হলুদ দাগ’ বরাবর সৈন্য সরিয়ে প্রথম ধাপের সেনা প্রত্যাহার সম্পন্ন করেছে।
এই যুদ্ধবিরতির আওতায় হামাসকে সোমবার স্থানীয় সময় দুপুর ১২টার মধ্যে ২০ জীবিত ও ২৮ মৃত ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দিতে হবে। এর বিনিময়ে ইসরায়েল দুই হাজার ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেবে।
ফিলিস্তিনিদের কষ্টের গৃহযাত্র : ইসরায়েলি বাহিনী কিছু এলাকা থেকে সরার পর গাজার বিভিন্ন শহরের বাসিন্দারা ঘরে ফিরতে শুরু করেছেন। অনেকে ২০ কিলোমিটারেরও বেশি পথ হেঁটে ফিরছেন।
স্কুলশিক্ষক আলা সালেহ বলেন, “রাস্তায় খাবার বা পানি কিছুই নেই। গাড়ি ভাড়া করতে চার হাজার শেকেল লাগে, যা আমাদের সাধ্যের বাইরে।” আরেক বাসিন্দা ওয়ায়েল আল-নাজার বলেন, “যদি ঘর ভেঙেও যায়, আমরা ফিরব- ধ্বংসস্তূপেই তাঁবু টানাবো, কিন্তু নিজেদের মাটিতেই থাকব।”
সোমবার জিম্মিদের মুক্তি: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, আগামী সোমবার গাজায় থাকা ২০ জন জীবিত ও ২৮ জন মৃত ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেবে হামাস। বিনিময়ে ইসরায়েলি কারাগারে থাকা দুই হাজার ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেওয়া হবে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আকস্মিক হামলায় ১,২০০ জন নিহত এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়। এর জবাবে ইসরায়েল গাজায় ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরু করে। হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, এ পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় গাজায় অন্তত ৬৭ হাজার ১৮৩ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ২০ হাজার ১৭৯ জন শিশু।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর ইসরায়েলি সেনারা জনবহুল এলাকা থেকে সরে যায়। এরপর থেকেই দলে দলে বাস্তুচ্যুত মানুষ নিজেদের বাড়ির পথে যাত্রা শুরু করেন। উপকূলবর্তী সড়কগুলোতে দেখা গেছে মানুষের ঢল। এই যুদ্ধবিরতি এসেছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায়। তাঁর প্রস্তাবিত পরিকল্পনায় ইসরায়েল ও হামাসের পাশাপাশি মিসর, কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
এফপি/অআ