শিরোনাম: |
কাহারোলে হাইব্রীড ধানের কারণে ২৭ জাতের আদি ধান দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে এই উপজেলা থেকে। দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলার মাঠগুলোতে হেমন্তের হাওয়ায় ভেসে যেত ধানের সুগন্ধ। গ্রামের পথে-ঘাটে মিশে থাকতো কৃষকের হাঁসি, আর ফসলের আনন্দ। সেই মাঠে একসময় ফুটতো ২৭ জাতের আদি ধান মালসারা, মাগুর শাইল, কলম, নাজির শাইল, সাপাহার, কাঠারি ভোগ, কালো-সরু, সাদা সরু, সিঁদুর কাটওয়া, ভাদই, চেংগা, কাকুয়া, পারিজাত, বিন্নি ধান শুধু খাদ্য নয় দিনাজপুরের এই কাহারোল উপজেলার মানুষের সংস্কৃতির অমিল অংশ।
কিন্তু আজ সেই সোনালী মাঠ নীরব। উচ্চ ফলনশীল হাইব্রীড ধানের দাপটে হারিয়ে যেতে বসেছে আদি ধানের স্বাদ, ঘ্রান, ঐতিহ্য। বীজগুলো এখন সংরক্ষণাগারে নীরবে কালের সাক্ষী হয়ে জানাচ্ছে ঐতিহ্যের গল্প। উপজেলার তাড়গাঁও ইউনিয়নের বাইশপুর গ্রামের কৃষক মোঃ মজিবর জানান ,আগের ধানের ভাতে মুখে লেগে থাকতো এবং থাকতো মিষ্টি ঘ্রাণ। এখন তা আর নেই। পিঠাপুলি, পায়েস সবই অন্যরকম। একই ইউনিয়নের বুলিয়া বাজার এলাকার কৃষক নির্মল চন্দ্র রায়ও জানান, এক সময় বছরে দুই মৌসুমে এই ধান চাষ হতো। হেমন্ত ঋতুতে ঘরে উঠতো নানা রং এর ধান, যা আশ্বিন কার্তিক মাসে খাদ্য এবং উৎসবের আনন্দকে সমৃদ্ধ করতো। এখন কৃষকেরা বছরে তিন মৌসুমে হাইব্রীড ধান চাষাবাদ করছেন।
একসময় বৃষ্টির উপর ভরসা করলেও এখন বিজ্ঞানীর উদ্বাবনী পদ্ধতিতে ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার করে ফসল উৎপাদন বাড়ানো হচ্ছে অত্র উপজেলায়। চাষাবাদের এই পরিবর্তনের সাথে হারিয়ে যাচ্ছে ধানের সাথে জড়িত মানুষের গল্প, স্মৃতি এবং সংস্কৃতি। উপজেলার রসুলপুর ইউনিয়নের বনড়া গ্রামের কৃষক নকুল চন্দ্র রায় বলেন, আগের ধানগুলো যাচাই-বাছাই করে মাঠ পর্যায়ে নতুন করে চাষাবাদে কৃষকদের উৎসাহিত করতে হবে সংশ্লিষ্ট কৃষি বিভাগকে। তাহলে আদি জাতের ধানগুলো পুনরায় ফিরে আসবে এই উপজেলায়।
এদিকে উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মল্লিকা রানি সেহানবীশ এই প্রতিনিধিকে জানান, হাইব্রীড ধানের ফলন বেশী হওয়ায় কৃষকেরা সেইদিকে ঝুঁকেছেন। তবে আমরা সচেতনতা বাড়াচ্ছি এবং জাতীয় পর্যায়ে বীজ সংরক্ষণের সাথে সমন্বয় করে কাজ করছি।
এফপি/অআ