কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের আশ্রয় শিবির থেকে বাইরে আসা নারী, পুরুষ ও শিশুসহ মোট ১৭১ জন রোহিঙ্গাকে আটক করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। আটকের পর বিজিবি সদস্যরা নিয়ম অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট ক্যাম্প কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে মাঝিদের জিম্মায় তাদের হস্তান্তর করে।
মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত এ অভিযান চালানো হয়।
সূত্রে জানা গেছে, আটক হওয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে ৮৮ জন পুরুষ, ৫০ জন নারী এবং ৩৩ জন শিশু রয়েছে। তারা সবাই কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বসবাস করছিলেন এবং প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে কাজের খোঁজে কিংবা ব্যক্তিগত প্রয়োজন নিয়ে ক্যাম্প থেকে বাইরে এসেছিলেন।
টেকনাফ ২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. আশিকুর রহমান বলেন, “রোহিঙ্গারা অবৈধভাবে ক্যাম্পের বাইরে চলে আসায় স্থানীয় এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ব্যাহত হচ্ছে। এর ফলে মানবপাচার, মাদক ব্যবসা, অপহরণ, চুরি, খুন-গুমসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেছে।” তিনি আরও বলেন, “স্থানীয় জনগণ আতঙ্কে থাকছে, সামাজিক স্থিতিশীলতাও বিঘ্নিত হচ্ছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় বিজিবি নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে এবং এ ধরনের তৎপরতা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।স্থানীয় ক্যাম্প প্রশাসনও রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পের বাইরে যাওয়ার প্রবণতা নিয়ে উদ্বিগ্ন।জাদিমুড়া ২৬ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাঝি ইসমাইল বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং, মিটিং ও সচেতনতা কার্যক্রমের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের বারবার জানানো হচ্ছে— তারা যেন ক্যাম্পের বাইরে না যায়। কিন্তু তারপরও কেউ চিকিৎসা, কেউ দিনমজুরির কাজ কিংবা মাছ ধরার মতো কারণে বাইরে চলে যায়। বিজিবি তাদের আটক করে আমাদের জিম্মায় দিয়ে দেয়।”
বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া প্রায় ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা এখন উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রয় শিবিরে বসবাস করছেন। ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে মিয়ানমারে জাতিগত নিপীড়নের শিকার হয়ে পালিয়ে আসা এই জনগোষ্ঠীর জন্য মানবিক সহায়তায় বিশ্ব সম্প্রদায়ের পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকারও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।
তবে সময়ের সাথে সাথে তাদের দীর্ঘস্থায়ী উপস্থিতি স্থানীয় অর্থনীতি, পরিবেশ, নিরাপত্তা এবং সামাজিক ভারসাম্যে নানা প্রভাব ফেলছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পেই সীমাবদ্ধ রাখার কঠোর নির্দেশনা থাকলেও বাস্তবে অনেকেই তা লঙ্ঘন করছেন। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, রোহিঙ্গারা ক্যাম্পের বাইরে এসে স্থানীয় বাজারে কাজ করছে, কৃষিজমিতে কাজ নিচ্ছে— এতে আমাদের শ্রম বাজারে চাপ বাড়ছে। পাশাপাশি চুরি, ছিনতাই ও অন্যান্য অপরাধে জড়ানোর ঘটনাও বাড়ছে।
বিজিবি ও প্রশাসনের একাধিক সূত্র জানায়, রোহিঙ্গাদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে ক্যাম্পের ভেতরে নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি বাইরের রাস্তায় চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। ক্যাম্পের বাইরে অবস্থান করা রোহিঙ্গাদের দ্রুত শনাক্ত করে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হস্তান্তর করা হচ্ছে।বিজিবি'র পক্ষ থেকে স্পষ্ট জানানো হয়েছে
আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে ক্যাম্প ছাড়ার চেষ্টা করলে বা বাইরে অবস্থান করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। এই অভিযান ভবিষ্যতেও নিয়মিত চলবে।
এফপি/অআ