দিনাজপুর জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলা ও আশপাশের এলাকায় গবাদি পশুর খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। এতে খামারিরা পড়েছেন চরম বিপাকে। উপজেলার উত্তর-পূর্ব পাশে বয়ে যাওয়া করতোয়া নদীর অববাহিকা বন্যায় তলিয়ে যাওয়া এবং ধান মাড়াইয়ে প্রযুক্তির অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে কাঁচা ঘাস ও খড়ের তীব্র ঘাটতি দেখা দিয়েছে।
নবাবগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের তথ্যমতে, উপজেলায় ৬৫৮টি ডেইরি ফার্ম ও ২,৪৫৯টি হৃষ্টপুষ্টকরণ খামার রয়েছে। মোট গবাদিপশুর সংখ্যা ২,৭৬,৯১৭টি। কিন্তু উন্নত জাতের ঘাসের প্লট রয়েছে মাত্র ২৭২টি, যার আয়তন মাত্র ১১২ একর জমি।
উপজেলার কৃষ্ণপুর গ্রামের “স্বচ্ছ ডেইরি ফার্ম” এর মালিক আজিজুল হক বলেন, “একটি গরু মোটাতাজা করতে প্রতিদিন প্রায় ১২ কেজি কাঁচা ঘাস, দেড় কেজি শুকনো দানাদার খাবার এবং ভুট্টা, ধান, গম ও খৈলের মিশ্রণ প্রয়োজন হয় ৪ কেজি। শুকনো খড় লাগে আরও ৫ কেজি। সব মিলিয়ে প্রতিদিন এক গরুর পেছনে খরচ হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা, যা দুই মাস আগেও ছিল মাত্র ১০০ থেকে ১২০ টাকা।” তিনি আরও বলেন, “দুগ্ধজাত গাভীর ক্ষেত্রে এই খরচ আরও বেশি।”
এদিকে সীমান্তবর্তী রংপুরের মিঠাপুকুর ও পীরগঞ্জ উপজেলায় সম্প্রতি কয়েকজন অ্যানথ্রাক্স রোগী শনাক্ত হওয়ায় নবাবগঞ্জেও এর প্রভাব পড়েছে। পীরগঞ্জের টুকুরিয়া এলাকায় যেখানে কিছুদিন আগেও গরুর মাংসের দাম ছিল ৭৫০ টাকা, বর্তমানে তা নেমে এসেছে ৫৫০ টাকায়, তবু ক্রেতা কম।
নবাবগঞ্জ উপজেলা সদরের মাংস ব্যবসায়ী আতিক জানান, “আগের তুলনায় গরুর মাংস বিক্রি অনেকটাই কমে গেছে।” গতকাল মঙ্গলবার উপজেলার এক সামাজিক অনুষ্ঠানে গরুর মাংসের পরিবর্তে শুধুমাত্র মুরগির মাংস ব্যবহার করা হয়। আয়োজক অধ্যাপক মনিরুজ্জামান বলেন, “অতিথিরা গরুর মাংস খাবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছিলেন, তাই মুরগি দিয়েই আয়োজন করতে হয়েছে।”
সরেজমিনে গত এক সপ্তাহে নবাবগঞ্জ ও আশপাশের হাটগুলো ঘুরে দেখা গেছে, গরু-মহিষের ক্রয়-বিক্রয় ব্যাপকভাবে কমে গেছে। আফতাবগঞ্জ হাটের ইজারাদার বেনজির আহমেদ বলেন, “এই হাট মূলত গরু-ছাগলের হাট। সাড়ে ছয় কোটি টাকা দিয়ে ইজারা নিয়েছি, কিন্তু বর্তমান অবস্থা চলতে থাকলে বিনিয়োগকৃত অর্থ উদ্ধার করা কঠিন হয়ে পড়বে।”
নবাবগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আসাদুজ্জামান বলেন, “উপজেলায় বর্তমানে মাত্র ২০ জন খামারি সাইলেজ প্রযুক্তি গ্রহণ করেছেন। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে পশুখাদ্য দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়। খামারিরা চাইলে এ প্রযুক্তি গ্রহণ করে সংকট অনেকটাই মোকাবিলা করতে পারবেন।”
অ্যানথ্রাক্স বিষয়ে তিনি আরও বলেন, “নবাবগঞ্জে এখনো কোনো অ্যানথ্রাক্স রোগী শনাক্ত হয়নি। তাই আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হওয়াই উত্তম।”
এফপি/অ