কুষ্টিয়ার বিভিন্ন পূজামন্ডপে দুর্গা প্রতিমায় দাড়ি-গোঁফ লাগানো অসুরের মুখে গামছা দিয়ে বেঁধে রাখার বেশকিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে ছবি গুলো কুষ্টিয়ার বিভিন্ন পূজা মন্ডপের বলে দাবি করা হয়। তবে ঘটনাটি অপ্রচার বলে দাবি করেছেন জেলা প্রশাসক (ডিসি)।
সোমবার (২৯সেপ্টেম্বর) রাতে মন্দির পরিদর্শন কালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এমন দাবি করেছেন। এদিকে এই ঘটনায় জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের নেতারা বলছেন, সকলের সম্মিলিত সিদ্ধান্তেই এমন নিদের্শনা দেয়া হয়েছিল। এর আগে কেন্দ্রীয় কমিটি বিবৃতি দিয়েছে। তবে অসুরের মুখে দাড়ি-গোঁফ নিয়ে এমন বিতর্ক তোলা অযৌক্তিক মনে করেন তারা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রবিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) রাত থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বেশ কিছু মন্ডপে অসুরের মুখ গামছা ও লাল কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখার ছবি ছড়িয়ে পড়ে।
সোমবার সারাদিন এসব ছবির পক্ষে ও বিপক্ষে মন্তব্য করতেও দেখা যায়। রাতেই নিজ ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে এমন কিছু ছবি পোষ্ট করে কুষ্টিয়া জেলা পূজা উদযাপন ফ্রন্টের আহবায়ক দেবেশ চন্দ্র বিশ্বাস ক্যাপশনে লেখেন,“মুখে দাড়ি গোঁফ থাকার কারণে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন এবং পুলিশ প্রশাসন কুষ্টিয়া জেলার ৩৯ টি মন্দিরে অসুরের মুখ গামছা দিয়ে ঢেকে রেখে দিয়েছে”। যদিও রাতেই তিনি পোষ্টটি সরিয়ে ফেলেন।
রবিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে মিললাইন ফুল বাগান হরিজন মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক শুকলাল বলেন, রাতে স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়ির এক এসআই মন্দিরে এসে আমাকে ফাঁকে ডেকে বলে অসুরের মুখে যে দাড়ি আছে তা রাতেই সরিয়ে ফেলতে হবে। উপরের নির্দেশনা আছে। আপাতত কাপড় দিয়ে মুখটা ঢেকে রাখো। পরে আমি ছেলেকে বাড়ি থেকে গামছা এনে অসুরের মুখ ঢেকে রাখতে বলি। সকালে আবার মুখ খুলে দেই।
দেবেশ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, অসুরের মুখে দাড়ি-গোঁফ আঁকা শিল্পের বিষয়। একজন শিল্পী তার মন থেকে এটা করেন। এখানে কোন বাধ্যবাধকতা থাকার কথা না। হিন্দু শাস্ত্রে মনি-ঋষি,সাধকরাও দাড়ি রাখতেন। তাছাড়া অসুরের মুখে দাড়ি-নতুন কিছু নয়। আমি মনে করি সম্প্রীতি নষ্ট করার জন্য কোন গোষ্ঠী এই কাজটা করিয়েছে। ফেসবুক থেকে পোষ্ট সড়িয়ে নেয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, বাধ্য হয়েছি পোষ্ট সরিয়ে নিতে। কুষ্টিয়া জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. জয়দেব বিশ্বাস বলেন, সারাদেশে কিছু প্রতিমায় অসুরকে বিকৃতভাবে উপস্থাপনের ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে কেন্দ্রিয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক।
বিবৃতিতে সামাজিক উত্তেজনা তৈরি হতে পারে জানিয়ে দাড়ি অবমুক্ত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়। এরপরেই মুলত জেলার ৩৯ মন্দিরে অসুরের মুখ থেকে দাড়ি অবমুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। জেলা প্রশাসন,পুলিশ প্রশাসন ও পূজা উদযাপন পরিষদ এতে সহায়তা করে।
তিনি আরো বলেন, এটা হাজার বছরের ইতিহাস। তাছাড়া শাস্ত্রে যতটুকু জানি অসুর মরার আগে চুল দাড়ি কাটেনি। আর অসুরের মুখে দাড়ি-গোঁফ আঁকানো নতুন কিছু নয়। এটা আগের থেকেই হয়ে আসছে। তাহলে এটা নিয়ে বিতর্ক কেন সেটাই বুঝতে পারছিনা।
যোগাযোগ করা হলে রাতে কুষ্টিয়া জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফয়সাল মাহমুদ বলেন,‘এটা জেলা প্রশাসন সম্মলিতভাবে কাজ করে। আমরা (পুলিশ) একসাথেই কাজ করেছি। কোন ধরনের সামাজিক সম্প্রীতিতে যাতে বিভেদ সৃষ্টি না হয় সেটার জন্য বিভিন্ন পুজা মন্ডপে (৩৯টি) গিয়ে যে বিতকির্ত ইস্যু হতে পারে সেটার ব্যাপারে তাদেরকে সুপরামর্শ দিয়েছি।’ডিসি আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফিন বলেন, প্রতিমা নিয়ে একটা সম্পূর্ণ অপপ্রচার করা হয়েছিল। এটা নিয়ে কিছু মানুষের মনেও দ্বিধাদ্বন্দ সৃষ্টি হয়েছিল।
পরে আপনারা দেখেছেন যে, অথবা পেয়ে থাকবেন যে, পূজা উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন। এধরনের কোনো বিষয় যদি প্রতিমায় পরিলক্ষিত হয় তার সেটা অপসারণ বা সংশোধন করার জন্য উনারা ( পূজা উদযাপন পরিষদ) নিজেরায় নির্দেশ দিয়েছেন। সেই অনুয়ায়ী আমাদের পূজা উদযাপন কমিটি প্রতিটি মন্ডপে স্থানীয় জনসাধারণ, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, সুশীলসমাজ সকলের সাথে পরামর্শক্রমে এবং সকলকেই আস্থায় নিয়ে সংশোধন করেছে এবং নিষ্পত্তি করেছে।
এফপি/অআ