Dhaka, Wednesday | 29 October 2025
         
English Edition
   
Epaper | Wednesday | 29 October 2025 | English
অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সালিশি আদালতে এস আলমের অভিযোগ
টানা ৫ দিন ভারি বর্ষণের আভাস
ডিসেম্বরের শুরুতে পদত্যাগ করতে পারেন মাহফুজ ও আসিফ
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফেরাতে আপিলের ৫ম দিনের শুনানি চলছে
শিরোনাম:

আবর্জনায় ভরা পর্যটন শহর

প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ৩:০০ পিএম  (ভিজিটর : ৯৮)

পর্যটন নগরী কক্সবাজার। শুধু সমুদ্র সৈকতকে ঘিরে এই পর্যটন নগরী নয়। যারা কক্সবাজারে বেড়াতে আসেন তারা পুরো কক্সবাজারকে পর্যটন শহর  মনে করেন। ঠিক সেইভাবে শহরের গোলদীঘিরপাড়, লাল দিঘীর পাড়, খুরুশকুল ব্রীজ এলাকা, বার্মিজ মার্কেটসহ বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে দেখেন পর্যটকগণ। বিশ্ববাসির নানার বাড়ি হিসাবে পরিচিতি লাভ করলেও এই পর্যটন শহর এখন দূষণ কবলে রয়েছে।

কয়েকশত কোটি টাকা ব্যয়ে করা হয়েছে খুরুশকুল সড়ক ও ব্রীজ । সেই ব্রীজের পাশে রয়েছে বিশাল আকারের আবর্জনার স্তুপ। ঠিক সেইভাবে কক্সবাজার শহরের প্রতিটি কোনায় কোনায় পড়ে থাকে ময়লা আর্বজনা । যা থেকে দূর্গন্ধ আসার কারণে নাক চেপে চলতে হয় । বিশেষ করে বার্মিজ মাকেট এলাকার বামির্জ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে ময়লার স্তুপ পড়ে থাকে । পৌরসভার পরিছন্নকর্মীরা তাদের ইচ্ছেমতো আর্বজনা তুলেন।

এদিকে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের শহর কক্সবাজার আজ ভয়াবহ পরিবেশ দূষণ ও অপরিকল্পিত স্থাপনার চাপে বিপর্যস্ত। পর্যটকদের আবাসনের জন্য গড়ে ওঠা পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেল-কটেজের মধ্যে স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (এসটিপি) আছে হাতেগোনা কয়েকটি তারকা মানের হোটেলে। বাকি হোটেল-মোটেলগুলোতে এই গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোর অভাবে ভয়াবহ পরিবেশ দূষণ সৃষ্টি হচ্ছে। সম্প্রতি কোন ধরনের আইনের তোয়াক্কা না করে একটি সিন্ডিকেট সরাসরি বালিয়াডিতে দোকান করা শুরু করে দিয়েছে যা পরিবেশ অধিদপ্তর অপসারণের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বলে জানা গেছে।

এদিকে খুরুশকুল সেতুর পাশে আবর্জনার স্তূপ একটি পরিচিত সমস্যা, যা কক্সবাজারের স্থানীয় বাসিন্দা এবং পর্যটকদের জন্য একটি অস্বস্তিকর পরিবেশ সৃষ্টি করে, বিশেষত বৃষ্টির সময়ে যা দুর্গন্ধ বাড়িয়ে দেয়। এই অপরিকল্পিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কারণে পরিবেশগত দূষণ এবং জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। তা সরানো দরকার বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

পরিবেশ রক্ষার জন্য ১৯৯৯ সালে সমুদ্র তীরবর্তী এলাকাকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা করা হয়। এই গেজেট অনুযায়ী, সৈকতের বেলাভূমিতে স্থাপনা নির্মাণ নিষিদ্ধ। পরবর্তীতে, ২০১৭ সালে পরিবেশ আইনবিষয়ক সংস্থা ‘বেলা’রিট দায়ের করলে আদালত ইসিএ এলাকায় স্থাপনা নির্মাণ বন্ধের নির্দেশ দেন। তবে বাস্তবতা হলো, প্রশাসনের নজরদারির অভাব এবং নিয়ম লঙ্ঘনের প্রবণতায় ইসিএ আইন কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হয়নি। বরং কক্সবাজারের কলাতলী, লাবণী পয়েন্টসহ বিভিন্ন স্থানে অপরিকল্পিতভাবে হোটেল-মোটেল ও রেস্তোরাঁ গড়ে উঠেছে। এসব স্থাপনার বেশিরভাগই এসটিপি ছাড়াই চালু রয়েছে, যা ভয়াবহ পরিবেশ দূষণের কারণ হয়ে উঠেছে।

দূষণ রোধে কার্যকর উদ্যোগ নেই
পরিবেশবাদী সংগঠন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপা সভাপতি এইচএম এরশাদ  জানান, দেশি-বিদেশি পর্যটকরা প্রকৃতির নির্মল পরিবেশ উপভোগ করতে কক্সবাজারে আসেন। কিন্তু পরিবেশ দূষণ এবং অপরিকল্পিত স্থাপনার কারণে পর্যটন শহরের প্রকৃতি তার আকর্ষণ হারাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, যে হোটেলগুলো দুই দশক আগে নির্মিত, সেগুলোতে এসটিপি নেই। কিন্তু নতুনভাবে গড়ে উঠা হোটেল-মোটেলেও এসটিপি স্থাপনের কোনো উদ্যোগ নেই। ফলে, পুরো শহরই ধীরে ধীরে দূষণের কবলে পড়েছে। উই ক্যান কক্সবাজার-এর অভিযোগ, কলাতলী জোনে ডিভাইন ইকো-রিসোর্টের পূর্বাংশ এবং মধ্য কলাতলীতে নির্মিত বেশ কয়েকটি নতুন স্থাপনায়ও পরিবেশবান্ধব কোনো ব্যবস্থা নেই। এসব ভবন থেকে সৃষ্ট বর্জ্য সরাসরি নালা হয়ে বাঁকখালী নদীতে গিয়ে মিশছে। বাঁকখালী নদী দূষিত হয়ে বঙ্গোপসাগরেও দূষণ ছড়াচ্ছে।

অপরিকল্পিত নির্মাণে বিপন্ন পরিবেশ
কক্সবাজার নাগরিক ফোরামের সভাপতি আ ন ম হেলাল উদ্দিন জানান, ভরা মৌসুমে প্রতিদিন গড়ে লাখো পর্যটক কক্সবাজারে অবস্থান করেন। কিন্তু এসটিপি না থাকায় তাদের ব্যবহৃত বর্জ্য সাধারণ টয়লেট রিংয়ে জমা হয়। সেখান থেকে তা নালার মাধ্যমে সরাসরি নদীতে চলে যাচ্ছে। ফলে পরিবেশের পাশাপাশি সমুদ্রের জীববৈচিত্র্যও হুমকির মুখে পড়ছে। পরিবেশ বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, দীর্ঘ সময় ধরে এ ধরনের বর্জ্য নিঃসরণের ফলে বঙ্গোপসাগরের পানির গুণগত মান মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

এতে কেবল সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্যই নষ্ট হচ্ছে না, পর্যটকদের কাছে কক্সবাজারের জনপ্রিয়তাও কমে যাচ্ছে। কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের কর্মকর্তা দীপক শর্মা দিপু বলেন, ইসিএ এলাকায় স্থাপনা নির্মাণে আইনি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবে প্রশাসনিক নজরদারির অভাবে দখলদাররা ইচ্ছেমতো স্থাপনা গড়ে তুলছে। বেশিরভাগ ভবনে পরিবেশবান্ধব নকশা বা এসটিপি ব্যবস্থা নেই। ফলে পুরো শহরই বাসযোগ্যতা হারাতে বসেছে। তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে গড়ে ওঠা স্থাপনাগুলোতে পরিবেশবান্ধব সংস্কার ও এসটিপি স্থাপন বাধ্যতামূলক করা উচিত। এ ছাড়া, ভবিষ্যতে পরিবেশ ছাড়পত্র ছাড়া কোনো ভবন নির্মাণে বাধা দিতে হবে।

প্রশাসনের উদ্যোগ ও সীমাবদ্ধতা
পরিবেশ অধিদপ্তরের কক্সবাজার কার্যালয়ের পরিচালক জমির উদ্দিন জানিয়েছেন, সাড়ে তিন শতাধিক আবাসিক হোটেল-মোটেলকে এসটিপি স্থাপনের নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তবে জায়গার অভাবে অনেক হোটেলেই এটি স্থাপন করা সম্ভব নয়। এসটিপি স্থাপনের জায়গার সংকট মোকাবিলায় জেলা প্রশাসন ও পৌরসভার সমন্বয়ে সেন্ট্রাল এসটিপি নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে পৌর পরিষদের বিলুপ্তির কারণে এ প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব হচ্ছে।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (পর্যটন সেল) আজিম খান জানান,বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়টা পৌরসভা দেখেন । এসটিপি কাদের লাগবে আর কাদের লাগবে না সে বিষয়ে খবর নিয়ে যাদের প্রয়োজন কিন্তু এসটিপি করেননি তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বেসরকারি বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় তারকা মানের হোটেলগুলোকে এসটিপি স্থাপনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। 

সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ইসিএ এলাকায় স্থাপনা নির্মাণ এবং উচ্ছেদের প্রক্রিয়া অনেকটা ‘টম অ্যান্ড জেরি’ কার্টুনের মতো। প্রশাসন উচ্ছেদ করে, আবার অন্যরা নতুন করে স্থাপনা গড়ে তোলে। জমি দখল এবং পরিবেশ দূষণ রোধে আরও কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। কক্সবাজারে পর্যটন প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং পরিবেশ সুরক্ষায় সুপরিকল্পিত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

পর্যটন শহর রক্ষায় করণীয়
কক্সবাজারের নবাগত জেলা প্রশাসক আঃ মান্নান জানিয়েছেন, পরিবেশ রক্ষায় ইসিএ আইন কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা হবে। মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী ভবিষ্যতে সব নির্মাণ কাজ হবে। দূষণমুক্ত পর্যটন নগরী গড়তে এসটিপি স্থাপন বাধ্যতামূলক করা হবে। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের শহর কক্সবাজারকে রক্ষায় অপরিকল্পিত স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ এবং সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি। পরিবেশ দূষণ রোধে প্রশাসন, পরিবেশবিদ এবং নাগরিক সমাজকে একযোগে কাজ করতে হবে।


এফপি/অআ
সর্বশেষ সংবাদ  
সর্বাধিক পঠিত  
YOU MAY ALSO LIKE  
Editor & Publisher: S. M. Mesbah Uddin
Editorial, News and Commercial Offices: Akram Tower, 15/5, Bijoynagar (9th Floor), Ramna, Dhaka-1000
Call: 01713-180024, 01675-383357 & 01840-000044
E-mail: news@thefinancialpostbd.com, ad@thefinancialpostbd.com, hr@thefinancialpostbd.com
🔝