Dhaka, Thursday | 2 October 2025
         
English Edition
   
Epaper | Thursday | 2 October 2025 | English
বৃষ্টি, বই আর এক কাপ কফি—আজ আন্তর্জাতিক কফি দিবস
২০২৬-এর শুরু থেকেই নতুন পে স্কেলে বেতন পাবেন সরকারি চাকরিজীবীরা
বিসিবি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন তামিম
ইলিশ চুরির অভিযোগ, হাত-পা বেঁধে দুই শিশুকে নির্যাতন
শিরোনাম:

কেশবপুরে অজ্ঞান পার্টির হানা, লুটপাটে গ্রামজুড়ে আতঙ্ক

প্রকাশ: সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ৬:১২ পিএম  (ভিজিটর : ৫৫)

যশোরের কেশবপুর উপজেলায় আবারো অজ্ঞান পার্টির তাণ্ডব। মাত্র ২৫ দিনের ব্যবধানে চারটি বড় লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে উপজেলার তিনটি গ্রামে। এতে গ্রামবাসীর মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। সর্বশেষ ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) গভীর রাতে আলতাপোল মিস্ত্রিপাড়া গ্রামে স্বর্ণকার সিদ্ধান্ত রায় মনির বাড়িতে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ওই রাতে পরিবারের খাদ্যে চেতনানাশক স্প্রে মিশিয়ে নগদ ৭ হাজার টাকা এবং অন্যান্য মালামাল লুট করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। এ সময় পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত থাকলেও তারা কিছু বুঝে উঠতে পারেননি। চেতনানাশক মিশ্রিত খাবার খাওয়ার পর সিদ্ধান্ত রায়ের মা স্বপ্নারায় (৬৫) এবং মেয়ে কেশবপুর কলেজের ইন্টারমিডিয়েট প্রথম বর্ষের ছাত্রী ঐশীরায় (১৭) সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ে। তাদের চিকিৎসা দিতে রাত ৩টার দিকে স্থানীয় গ্রাম্য চিকিৎসক শেখর রায় বাবলাকে ডাকা হয়।

ভুক্তভোগী সিদ্ধান্ত রায় সাংবাদিকদের জানান, ‘চোরেরা দিনের বেলায় কোন এক সময় ঘরের ভিতরে প্রবেশ করে খাটের তলে লুকিয়ে থাকে। রাত আনুমানিক তিনটার দিকে ঘরের সমস্ত মালামাল তছনছ করে। ড্রয়ার ভেঙে ৭ হাজার টাকা নিয়ে যায়। আমি বাইরে প্রসাব করতে বের হলে টের পাই। আমি চিৎকার করা মাত্রই তারা পালিয়ে যায়। পালানোর সময় জমির দলিলপত্র ঘরের পিছনে ফেলে রেখে যায়। এমনকি ব্যবহৃত একটি স্ক্রু ড্রাইভারও রেখে যায়।

ঘটনার খবর পেয়ে কেশবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ আনোয়ার হোসেন সকালে পুলিশ ঘটনাস্থলে পাঠান। 
তিনি বলেন, এ ধরনের ঘটনাকে আমরা অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখছি। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। দুর্বৃত্তদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

এ ঘটনায় পুরো গ্রামে চরম ভয় ও উৎকণ্ঠা ছগিয়ে পড়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, প্রায় প্রতিদিনই নতুন নতুন লুটপাটের খবর শুনতে হচ্ছে। হাসানপুর, ভালুকঘর ও আলতাপোল এই তিনটি গ্রামে গত ২৫ দিনে চারটি লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। সবচেয়ে বড় ঘটনাটি ঘটেছিল ১৬ সেপ্টেম্বর একই আলতাপোল গ্রামে, যখন মোঃ মিসাজুল ইসলাম মোড়লের বাড়িতে অজ্ঞান পার্টি হানা দেয়। সে সময় প্রায় ১০ লাখ টাকার স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট করে নিয়ে যায় দুর্বৃৃত্তরা।

গ্রামের সমাজ সেবক মো: রবিউল ইসলাম বলেন, গ্রাম এখন নিরাপত্তাহীন। আমরা রাতে ঘুমোতে ভয় পাই। ছোট ছোট মেয়েরা আতঙ্কে আছে। পুলিশ যদি রাতের টহল আরও বাড়ায় এবং চোরদের গ্রেপ্তার করে, তাহলে হয়তো আমরা আবার স্বস্তিতে ঘুমাতে পারব।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অজ্ঞান পার্টির এ ধরনের কার্যক্রম সাধারণ চুরির ঘটনা নয়, বরং সংগঠিত অপরাধ। তারা আগে থেকে টার্গেট করে, বাড়ির রুটিন জেনে, তারপর পরিকল্পিতভাবে হামলা চালায়। এতে একদিকে যেমন সম্পদের ক্ষতি হয়, তেমনি মানুষের জীবনের জন্যও হুমকি তৈরি হয়। চেতনানাশক মিশ্রিত খাবার খেলে মারাত্মক শারীরিক ক্ষতির আশঙ্কা থাকে।

এলাকাবাসী প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছেন, অবিলম্বে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। তারা বলছেন, পুলিশি টহল জোরদার করা, রাতে সন্দেহজনক চলাফেরা পর্যবেক্ষণ করা এবং গ্রামে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা জরুরি। তা না হলে এই প্রবণতা আরও বাড়িতে পারে এবং বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এটি সম্ভবত একই চক্রের কাজ। আমরা প্রযুক্তিগত সহায়তায় তাদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। স্থানীয়দের সতর্ক থাকতে অনুরোধ করা হচ্ছে। অপরিচিত কাউকে খাবার দেওয়ার আগে বা সন্দেহজনক কিছু দেখলেই যেন পুলিশকে জানানো হয়।

নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, কেশবপুরে ক্রমবর্ধমান এই ধরনের অপরাধ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। প্রশাসনকে দ্রুত দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে হবে। গ্রামে সচেতনতা সভা আয়োজন করা এবং গ্রামবাসীকে আত্মরক্ষার বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়াও জরুরি বলে তারা মনে করেন।

সবশেষে, এলাকাবাসী বলেন, আমরা চাই না আবারও কোন পরিবার এই ধরনের ঘটনার শিকার হোক। প্রশাসনকে অনুরোধ করছি এখনই ব্যবস্থা নিন।

এফপি/রাজ
সর্বশেষ সংবাদ  
সর্বাধিক পঠিত  
YOU MAY ALSO LIKE  
Editor & Publisher: S. M. Mesbah Uddin
Editorial, News and Commercial Offices: Akram Tower, 15/5, Bijoynagar (9th Floor), Ramna, Dhaka-1000
Call: 01713-180024, 01675-383357 & 01840-000044
E-mail: news@thefinancialpostbd.com, ad@thefinancialpostbd.com, hr@thefinancialpostbd.com
🔝