জামালপুরের মাদারগঞ্জে মাদ্রাসায় না এসেও হাজিরা খাতায় সই দিয়ে নিয়মিত বেতন তুলে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে উপজেলার কড়ইচড়া ইউনিয়নের মিলনবাজার ভাংবাড়ী আলীম মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে।
অভিযুক্ত অধ্যক্ষ হলেন হলেন মাওলানা মোঃ আব্দুল ওয়াহেদ তিনি জামায়াতের বহিস্কৃত নেতা ও মাদারগঞ্জ আল আকাবা সমবায় সমিতির পরিচালক। জানা গেছে ,চলতি বছরের জানুয়ারীতে কয়েকশো কোটি টাকা আত্মসাৎ এর অভিযোগে মাদারগঞ্জ আল আকাবা সমিতির গ্রাহকরা ৮ পরিচালনা পর্ষদ সদস্যের বিরুদ্ধে মাদারগঞ্জ মডেল থানায় প্রতারণার মামলা করেন। এতে মামলার এজাহারে পরিচালক আব্দুল ওয়াহেদ নাম থাকায় গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে চলে যান তিনি। এরপর থেকে তিনি মাদ্রাসায় অনুপস্থিত।
বর্তমানে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি রয়েছে। কিন্তু পলাতক থেকেও তিনি হাজিরা খাতায় সাক্ষর দিয়ে বেতন-ভাতা তুলে নিচ্ছেন। রবিবার (২১ সেপ্টেম্বর) বিষয়টি জানতে সরেজমিনে গেলে অধ্যক্ষের অফিস কক্ষটি ফাকা দেখা যায়। সেই সাথে মাদ্রাসার হাজিরা খাতায় অধ্যক্ষের উপস্থিতির স্বাক্ষর দেখা যায়। এ বিষয়ে নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক মাদ্রাসার একাধিক শিক্ষক জানান,জানুয়ারী মাস থেকে অধ্যক্ষ আব্দুল ওয়াহেদ মাদ্রাসায় আসেন না। এরপরেও তিনি কিভাবে বেতন নিচ্ছেন। নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মোঃ রহমতুল্লাহ,আশিনুর,মিলন হাসানসহ কয়েক শিক্ষার্থীরা জানান,তাদের অধ্যক্ষ ৫-৬ মাস ধরে মাদ্রাসায় আসেন না।
স্থানীয় বাসিন্দা আবু বক্বর সিদ্দিক বলেন ,মাদ্রাসায় না এসেও কীভাবে তিনি বেতন উত্তোলন করেন? কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানাচ্ছি, বিষয়টি যেন তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করে। মাদ্রাসাটির উপাধ্যক্ষ মাওনানা মামুনুর রশীদ বলেন,অধ্যক্ষ মহোদয় মাদ্রাসা না এসেও বেতন তুলেন বিষয়টি তার জানা নেই। তবে তিনি (অধ্যক্ষ) এডহক কমিটির সভাপতির কাছ থেকে ৩ মাসের ছুটি নিয়েছেন। কিন্তু ৬ মাস ধরে না আসার বিষয়টি জানতে চাইলে কোন সদুত্তর দিতে পারেনি তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,অধ্যক্ষ আব্দুল ওয়াহেদের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। একসময় করতেন জামায়াতের সক্রিয় রাজনীতি, ছিলেন উপজেলা জামাতের আমীরও। তবে নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের কারণে দল তাকে বহিস্কার করে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মোঃ ফরহাদ হোসেন। জামায়াত থেকে বহিস্কার হবার পর অধ্যক্ষ আব্দুল ওয়াহেদ সে তৎকালীন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগে ভীড় করেন। ২০২৪ সালের ৫ আগষ্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মাদ্রাসার ৩ কর্মচারীর বেতন আটকে দেন।
এ নিয়ে জাতীয় ও স্থানীয় গনমাধ্যমে সংবাদও প্রকাশ হয়। অভিযোগ আছে মাদ্রাসার শিক্ষক কর্মচারীর উপর অতিরিক্ত খবরদারি করেন তিনি। প্রতিষ্ঠানটির অধিকাংশ শিক্ষক কর্মচারী তার কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ হলেও প্রকাশে মুখ খুলেননা কেউ। অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত অধ্যক্ষ আব্দুল ওয়াহেদের ব্যবহৃত মুঠোফোনে ফোন করা হলে নম্বরটি বন্ধ দেখায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাদির শাহ বলেন, মাদ্রাসায় না এসে হাজিরা খাতায় সই করে বেতন উত্তোলনের সুযোগ নেই। দ্রুত বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এফপি/অআ