বাংলাদেশে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে অনিশ্চয়তা আরও ঘনীভূত হচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকার বারবার আশ্বস্ত করছে, আগামী ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ভোট অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো- বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী এবং নতুন উদীয়মান জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)- এর মধ্যে মতভেদ ক্রমশ তীব্র হয়ে উঠেছে। ফলে ভোট হবে কি না, হলেও সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে কি না- তা নিয়ে বিশ্লেষকদের মধ্যে শঙ্কা বাড়ছে।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, “নির্বাচন ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।” তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, অবাধ, সুষ্ঠু এবং উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন আয়োজন করা হবে। রোববার বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির সঙ্গে আলাদা বৈঠক করে তিনি তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছেন। তবে বৈঠক শেষে বৈরী অবস্থানই স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
বিএনপি যেকোনো পরিস্থিতিতে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে সরাসরি ভোটের মাধ্যমে জাতীয় নির্বাচন চায়। তাদের অভিযোগ, জামায়াত ও এনসিপি নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র করছে।
জামায়াত জানিয়েছে, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি নিশ্চিত না হলে এবং সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) ব্যবস্থা না আনলে তারা ভোটে যাবে না।
এনসিপি বলছে, আগে গণপরিষদ নির্বাচন হতে হবে এবং সেই পরিষদ নতুন সংবিধান প্রণয়ন করবে। অন্যথায় তারা নির্বাচনে অংশ নেবে না।
দল দুটি অভিযোগ করেছে, বিএনপি এখন আওয়ামী লীগের পরিবর্তে জামায়াত ও এনসিপিকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বানাচ্ছে। তাদের দাবি, বিএনপির বিদেশি মিত্ররা এতে প্রভাব ফেলছে।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইপিএসএস–এর প্রেসিডেন্ট মেজর জেনারেল (অব.) আ ন ম মুনীরুজ্জামান মনে করেন, পরিস্থিতি সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেই। তৃণমূলে শক্ত শেকড় না থাকায় সরকার শক্ত হাতে পরিস্থিতি সামলাতে পারছে না। তার মতে, নির্বাচিত সরকারের হাতে দ্রুত ক্ষমতা হস্তান্তর ছাড়া স্থিতিশীলতা ফিরবে না।
এদিকে, দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় অস্থির হয়ে উঠেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। এতে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার ওপর সাধারণ মানুষের আস্থা আরও কমছে।
আন্তর্জাতিক মহলও পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। এপি নিউজ ও রয়টার্স জানিয়েছে, এক বছর আগে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর যে পরিবর্তনের সূচনা হয়েছিল, তা এখনও স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধানে পৌঁছায়নি। দ্য ডেইলি স্টার সতর্ক করেছে, ফেব্রুয়ারির নির্বাচন গণতন্ত্রের জন্য এক “আগুনের পরীক্ষা” হতে চলেছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচনের সময় নির্ধারণ করা হলেও রাজনৈতিক দলগুলোর পরস্পরবিরোধী অবস্থান ভোটের ভবিষ্যৎকে অনিশ্চিত করে তুলেছে। পর্যবেক্ষকদের মতে, এখনই সর্বদলীয় সংলাপ ও সমঝোতা না হলে নির্বাচন ব্যাহত হতে পারে, যার ফলে দেশ আবারও দীর্ঘমেয়াদি অস্থিরতার মুখে পড়বে।
এফপি/রাজ