কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সহিংসতা ও অপরাধ দিন দিন বেড়ে চলেছে। পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, গত আট বছরে এসব ক্যাম্পে ৩০০ জন রোহিঙ্গা খুন হয়েছেন। খুন হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন কমিউনিটি নেতা, স্বেচ্ছাসেবক ও সাধারণ বাসিন্দারা। হত্যাকাণ্ডের পাশাপাশি ক্যাম্পগুলো এখন মাদক, অপহরণ, চাঁদাবাজি ও মানবপাচারের বড় কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।
স্থানীয় ও পুলিশের তথ্যমতে, বর্তমানে ক্যাম্পগুলোতে অন্তত ১০টি সশস্ত্র রোহিঙ্গা গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে। এরা ইয়াবা ব্যবসা, চাঁদাবাজি, অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়সহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে। টেকনাফের “আবদুল হাকিম বাহিনী” সবচেয়ে বেশি তৎপর। তারা মানুষকে অপহরণ করে মুক্তিপণ না পেলে হত্যা ও গুম করছে।
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত ক্যাম্পে মোট ২৫০টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে হত্যা মামলা ১৮টি, মাদকের মামলা ১৫০টি এবং অপহরণের মামলা ৫০টি। একই সময়ে ধর্ষণের মামলা হয়েছে ১২টি। গত আট বছরে তিন শতাধিক হত্যাকাণ্ডে দায়ের হয়েছে ২৮৭টি মামলা।
কেবল গত এক বছরে শতাধিক নতুন মাদক বিক্রি ও সেবনের আখড়া গড়ে উঠেছে। বর্তমানে চার শতাধিক আখড়া থেকে মাদক বিক্রি হচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন ইয়াবা, ক্রিস্টাল মেথসহ নানা মাদক আসছে। কক্সবাজার এখন মাদকের অন্যতম রুটে পরিণত হয়েছে।
রোহিঙ্গা বাসিন্দারা বলছেন, আধিপত্য বিস্তার, মানবপাচার ও মাদক ব্যবসাকে কেন্দ্র করে হত্যাকাণ্ড ঘটছে। অপহরণের পর মুক্তিপণ আদায়ও বেড়েছে। লেদা ক্যাম্পের কালা মিয়া নামের এক রোহিঙ্গা জানান, চলতি বছরের মে মাসে তাকে অপহরণ করে ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। পরে ৩০ হাজার টাকা দিয়ে ছাড়া পান তিনি।
অস্ত্র ও মাদক ব্যবসায়ীরা সক্রিয় থাকলেও পুলিশ দাবি করছে, ক্যাম্পে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের তুলনায় নিয়ন্ত্রণে আছে। ৮-আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, “১৪ লাখ রোহিঙ্গার নিরাপত্তা দিতে আমাদের জনবল সীমিত। তারপরও টহল ও অভিযানের কারণে হত্যাকাণ্ড কমেছে।”
জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, মিয়ানমারে ফেরত যাওয়ার কোনো সুযোগ না থাকায় ক্যাম্পগুলোতে হতাশা বাড়ছে। এ অবস্থায় সহায়তা কমে যাওয়ায় শিক্ষা বন্ধ হচ্ছে, শিশুশ্রম ও বাল্যবিবাহ বেড়েছে। কক্সবাজারে প্রতিদিন নতুন রোহিঙ্গা প্রবেশের ঘটনাও উদ্বেগ বাড়াচ্ছে।
জাতিসংঘ মহাসচিব সম্প্রতি বলেছেন, রোহিঙ্গাদের জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তা কমানো “মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের শামিল”। বাংলাদেশ সরকারও বলছে, এত বিপুল সংখ্যক শরণার্থীর চাপ বহন করা ক্রমেই কঠিন হয়ে উঠছে।
এফপি/রাজ