রংপুরের পীরগাছা উপজেলার তিস্তা নদীর পানিয়ালের ঘাট থেকে উলিপুর উপজেলার থেতরাই ইউনিয়নের দুরত্ব প্রায় এক কিলোমিটার। কিন্তু তিস্তা নদী আলাদা করে রেখেছে দুই পারের লক্ষাধিক মানুষকে। উলিপুর উপজেলার মানুষকে রংপুর শহরে যেতে পাড়ি দিতে হয় ৫০ কিলোমিটার পথ। অথচ তিস্তা নদীর পানিয়ালের ঘাট থেকে থেতরাই পর্যন্ত একটি সেতু হলে কমে যাবে ২০ কিলোমিটার পথ। যা দুই পারের মানুষ দীর্ঘদিন থেকে দাবি করে আসলেও কোন সুরাহা হয়নি। অবশেষে দীর্ঘদিনের যোগাযোগ সংকট নিরসনে এবার নতুন স্বপ্নের হাতছানি দিচ্ছে একটি সেতুর অপেক্ষা। আবারো আশা জেগেছে দুই পারের মানুষের মনে।
সম্প্রতি তিস্তা নদীর উপর ওপর ১৪০০ মিটার দীর্ঘ পঞ্চম সেতু নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে পরিদর্শন করেছেন প্রকল্পের কর্মকর্তারা।
গত ১৭ জুলাই দুপুরে উপজেলার ছাওলা ইউনিয়নের পাওটানা পানিয়ালের ঘাট পরির্দশন করেন। পরিদর্শনে নেতৃত্ব দেন প্রকল্প পরিচালক শেখ আবু জাকির সিকান্দার।
এসময় নির্বাহী প্রকৌশলী ফখরুল ইসলাম, ডিজাইন ইউনিটের নির্বাহী প্রকৌশলী ভাস্কর ক্রান্তি চৌধুরী, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সহযোগী গবেষণা সংস্থা আইডাব্লিউএম-এর প্রতিনিধি আলিমুজ্জামান ও আবু হেনা মোস্তফা কামাল, উলিপুরের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান হায়দার আলী, উলিপুর উপজেলা প্রকৌশলী প্রদীপ কুমার, পীরগাছা উপজেলা প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান জেমি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। তারা গ্রামীণ সড়কে গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণ প্রকল্প ২-এর আওতায় তিস্তা নদীর ওপর ১৪০০ মিটার দীর্ঘ পঞ্চম সেতু নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাই করেন।
স্থানীয় লোকজন জানান, পীরগাছা উপজেলার ছাওলা ইউনিয়নের পানিয়ালের ঘাট দিয়ে প্রতিদিন হাজারো মানুষ খেয়া নৌকা দিয়ে উলিপুর উপজেলায় যাতায়াত করেন। শিশু থেকে বৃদ্ধ, সকলে ভরসা খেয়া নৌকা। বর্ষায় পানি বৃদ্ধি পেলে চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। এ নিয়ে স্থানীয় ভাবে অনেক বার আবেদন করেও কোন সাড়া মেলেনি। পালিত হয়েছে মানববন্ধন ও গণস্বাক্ষর কর্মসূচীও। এবার সেতু নির্মানে সম্ভাবতা যাচাইয়ে আশার আলো দেখছেন দুই পারের লক্ষাধিক মানুষ। ইতোপূর্বে সেতু এলাকা পরিদর্শন করে গেছেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভূইয়া।
উলিপুরর থেতরাই এলাকার বাসিন্দা রইচ উদ্দিন বলেন, আমাদের রংপুরে যেতে ৫০ কিলোমিটার পাড়ি দিতে হয়। অথচ এই সেতু হলে কমবে ২০ কিলোমিটার। সময়ও বাঁচবে, টাকাও বাঁচবে। আরেক কৃষক আজিজুল ইসলাম বলেন, কৃষি পণ্য শহরে নেওয়া কষ্টকর। তাই বাধ্য হয়ে এলাকায় কম দামে বিক্রি করতে হয়। সেতু হলে ভালো দাম পাওয়া যাবে। আশায় আছি, দেখি হয় কি না।
পীরগাছার পানিয়ালের ঘাট এলাকার বাসিন্দা আরিফ মিয়া বলেন, এখানে একটি সেতুর বিশেষ প্রয়োজন। সেতু হলে দুই উপজেলার লক্ষাধিক মানুষের যাতায়াত সমস্যার সমাধান হবে। এলাকার অনেক উন্নয়ন হবে।
স্থানীয় ছাওলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নাজির হোসেন বলেন, এই সেতু হলে আমাদের এলাকার জীবন-মানের অনেক উন্নয়ন হবে। দুই উপজেলার সেতু বন্ধনে পরিনত হবে। একটি সেতুই বদলে দিতে পারেন তিস্তা পারের মানুষের জীবনযাত্রা।
পীরগাছা উপজেলা প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান জেমি বলেন, এই সেতু নির্মাণ হলে পীরগাছা-উলিপুরের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হবে। এমনকি রংপুর-কুড়িগ্রাম বিকল্প রুট তৈরি হবে। এর ফলে যোগাযোগ ও বাণিজ্যে বিপ্লব ঘটবে।
প্রকল্প পরিচালক শেখ আবু জাকির সিকান্দার বলেন, উপদেষ্টা মহোদয়ের সরাসরি তত্ত্বাবধানে এই সেতু প্রকল্পের ডিপিপি প্রস্তুতির কাজ চলছে। আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে ডিপিপি ও নকশা চূড়ান্ত হবে। তাই আমরা বেস্ট লোকেশন নির্ধারণ এবং নদীর স্রোত ও স্থিতিশীলতা বিবেচনায় সরেজমিনে তথ্য সংগ্রহ করেছি।
এফপি/রাজ