Dhaka, Monday | 18 August 2025
         
English Edition
   
Epaper | Monday | 18 August 2025 | English
পরিবেশবান্ধব চাষাবাদে মৎস্য খাতকে সমৃদ্ধ করা সম্ভব: প্রধান উপদেষ্টা
পাথর লুটে যোগসাজশ ছিল প্রশাসনের: রিজওয়ানা হাসান
পাবনা-৩ আসনে মনোনয়ন যুদ্ধ, মাঠ গরম সম্ভাব্য প্রার্থীদের প্রচারণা
বীর মুক্তিযোদ্ধা পুলিন কান্তি দে’র মৃত্যুতে প্রশাসনের শ্রদ্ধাঞ্জলি
শিরোনাম:

অস্তিত্ব সংকটে বানিশান্তার শতাধিক পরিবার

প্রকাশ: সোমবার, ১৮ আগস্ট, ২০২৫, ১০:৩৪ এএম আপডেট: ১৮.০৮.২০২৫ ১১:০২ এএম  (ভিজিটর : ১৯)

তীব্র নদীভাঙন, বারংবার প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বৈশ্বিক উষ্ণায়নের শিকার শতাধিক পরিবার অস্তিত্বের সংকটে পড়েছেন। অসংখ্যবার বাসস্থান স্থানান্তর করে নদী থেকে পেছনের দিকে সরে এলেও, আর কোনো উপায় নেই পরিবারগুলোর হাতে। বর্তমানে পশুর নদীর পাড়ে নির্মিত ভাঙা বাঁধেই আশ্রয় নিয়েছেন তারা। তবে চতুর্দিক থেকে ঘিরে আছে পানি। বলা যায় পানির উপর ভাসছে পরিবারগুলোর শতাধিক বাসস্থান। ফলে যেকোন সময় একটি বড় ঢেউ কিংবা প্রকৃতিক দুর্যোগের আঘাতে চিরতরে বিলীন হবার চরম ঝুঁকিতে রয়েছেন পাড়ার ৩৫০ জন বাসিন্দা।

মোংলা বন্দরের যাত্রাশুরুর সাথে সাথে ১৯৫৪ সালের দিকে জন্ম হয় বানিশান্তা যৌনপল্লির। এক সময় দেশের সবচেয়ে বড় যৌনপল্লি হিসেবে স্বীকৃত ছিল। কিন্তু একধিক দুর্যোগ আর নদী ভাঙনের শিকার হয়ে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে এ পাড়ার বাসিন্দা এবং যৌনকর্মীর সংখ্যা।

সর্বশেষ ২০২৪ সালের মে মাসে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয় বানিশান্তা যৌনপল্লির শতভাগ বাসস্থান। পর্যাপ্ত সহযোগিতা না পেলেও, ধার-দেনা করে কোনভাবে পুনরায় বাসস্থান স্থাপন করেছে পরিবারগুলো। কিন্তু একের পর এক বিপদ কিছুতেই স্বস্তিতে বাঁচতে দিচ্ছে না পল্লির বাসিন্দাদের।

বানিশান্তা যৌনপল্লির সভানেত্রী রাজিয়া বেগম রানী ১৯৮৬ সাল থেকে এই পাড়ায় বসবাস করছেন। তিনি জানান, একাধিকবার প্রকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করে তারা এখন সর্বশান্ত। নিয়তির বিধান মেনে নিয়ে নদীগর্ভে বিলিন হওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় দেখছেন না তিনি।

সভানেত্রী আরো জানান, এই পল্লীতে ১১৫ জন যৌনকর্মী বসবাস করেন। তবে পুরুষ, প্রবীণ এবং শিশুদের নিয়ে সর্বমোট বাসিন্দার সংখ্যা ৩৫০ জন। বাসিন্দাদের অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদে বিগত সরকারের সময় তিনি দিনরাত দৌড়ঝাপ মন্ত্রণালয় থেকে নদীর পাড়ে ব্লক স্থাপনের প্রজেক্ট পাশ করান। কিন্তু স্থানীয় একজন সংসদ সদস্য প্রজেক্টটিকে স্থানান্তর করে নিজের এলাকায় নিয়ে যান। এমন ঘটনার পর মনোবল হারিয়ে ফেলেন পল্লীর বাসিন্দারা।

সভানেত্রী রাজিয়া বেগমের মতে, দুর্যোগ মোকাবিলার ক্ষয়ক্ষতি যদি ঠেকানো যেতো, পতিতাবৃত্তি ছেড়ে এখানকার যৌনকর্মীরা অন্য পেশায় নিজেদের নিয়োজিত করতে পারতো। কিন্তু বারংবার বাসস্থান স্থানান্তর ও পুননির্মাণ করতে গিয়ে প্রায় সকল যৌনকর্মী ২ থেকে ৩ লাখ টাকার লোনের খপ্পরে পড়েছেন। লোনের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে ইচ্ছা না থাকলেও অনেকে পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য হচ্ছেন।

২০১৩ সালে পশুর নদীর পাড়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্তাবধনে চায়না কোম্পানির মাধ্যমে বেড়িবাঁধ দেয়া হয় কিন্ত এটি ২০১৭ সালের দিকে ভাঙ্গন শুরু হলে পুনরায় সংস্কারের কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। ২০১৮ সালের জুনের দিকে বেড়িবাঁধটি ভেঙ্গে প্রায় কয়েকটি গ্রাম তলিয়ে যায় আর পানিবন্দি হয়ে পড়ে প্রায় ৫ সহস্রাধিক বাসিন্দা।

পাড়ায় প্রায় ৫০ শিশুর বসবাস। যাদের অনেকেই স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করে। সভানেত্রী রাজিয়া বেগম শিশুদের পড়াশুনার তাগিদে ডিসির কাছে স্কুল ও শেল্টার হোমের জন্য আবেদন করেন। তিনি জানান, “আবেদনটি পাশ হলে, মন্ত্রণালয় থেকে সচিব এসে স্কুল ও শেল্টার হোমের উদ্বোধনও করা হয়। কিন্তু স্থানীয় মেম্বার ও সংসদ সদস্যকে দাওয়াত না দেওয়ায় প্রকল্পটি বাতিল করা হয়।”

বানিশান্তার যৌনকর্মীদের স্বাস্থ্য-সুরক্ষায় কাজ করছে পিএসটিসি নামের একটি এনজিও। নিয়মিত যৌনকর্মীদের এইচআইভি টেস্টসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছে সংস্থাটি। এছাড়া, স্যানিটারি ন্যাপকিন, প্রাথমিক চিকিৎসা, কনডম ও জরুরি ঔষধ নিশ্চিৎ করছে পিএসটিসি।

সংস্থাটির পক্ষ থেকে বানিশান্তার যৌনকর্মীদের স্বাস্থ্য-সুরক্ষায় কাজে নিয়োজিত আছেন ডা. ডলি সরকার। তিনি জানান, কিছুদিন আগেই আমরা সকল যৌনকর্মীর এইচআইভি চেকআপ করেছিলাম। রেজাল্ট ‘জিরো’। এছাড়া এখানের শতভাগ যৌনকর্মী কনডম ও স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহারে অভ্যস্ত।

ডা. ডলি সরকার আরো জানান, স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য এই পাড়ায় একটি কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। কেউ অসুস্থ বোধ করলে কিংবা স্বাস্থ্য বিষয়ক পরামর্শ নিতে এখানে আসেন।

সভানেত্রী রাজিয়া বেগম রানী জানান, আগে-পরে যতো সরকার ক্ষমতায় ছিলো তারা যথেষ্ঠ সহযোগিতা করেছে। বর্তমানেও সরকারি বিভিন্ন সহযোগিতা পাচ্ছি। এছাড়া এনজিওগুলো আমাদের পাশে আছে। শুধু একটি সমস্যাই আমাদের স্বাস্তিতে বাঁচতে দিচ্ছে না। আমাদের পুরো পাড়া নদীতে তলিয়ে যাচ্ছে। যেকোন রাতে পাড় ভেঙে আমরা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবো।

সভানেত্রীর দাবি, ব্লকের একটি বাঁধই পারে বানিশান্তা যৌনপল্লির শতাধিক পরিবারের ঘর, জীবন এবং অস্তিত্বকে রক্ষা করতে। ব্লক বসানো হলে প্রতিবছর দুই থেকে তিন বার বাসস্থান স্থানান্তরের খরচ থেকেও রক্ষা পাওয়া যাবে। এতে করে, অনেক যৌনকর্মী সমাজে সম্মানজনক পেশায় নিয়োজিত হতে পারবে।

খুলনা পানি উন্নয়ন বিভাগ-২ নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আশরাফুল আলম জানান, এমন পরিস্থিতির বিষয়ে আমার কাছে তথ্য নেই। আমি খোঁজ নিয়ে দেখবো কি করা যায়।

একদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের থাবা, অন্যদিকে সমাজের রক্তচক্ষু, এই দুইয়ের মাঝে যেন বন্দি পশুর নদীর তীরে মংলা বন্দরের কোল ঘেষে গড়ে ওঠা বানিশান্তা যৌনপল্লীর শেকড়ছেঁড়া, বাস্তুহীন নারীদের জীবন। নদীভাঙনের ফলে সৃষ্ট সংকটের দ্রুত সমাধান করা না গেলে, চিরতরে ইতিহাসের অংশে পরিণত হতে পারে বানিশান্তা যৌনপল্লির নাম।

এফপি/রাজ

সর্বশেষ সংবাদ  
সর্বাধিক পঠিত  
YOU MAY ALSO LIKE  
Editor & Publisher: S. M. Mesbah Uddin
Editorial, News and Commercial Offices: Akram Tower, 15/5, Bijoynagar (9th Floor), Ramna, Dhaka-1000
Call: 01713-180024, 01675-383357 & 01840-000044
E-mail: news@thefinancialpostbd.com, ad@thefinancialpostbd.com, hr@thefinancialpostbd.com
🔝