Dhaka, Sunday | 17 August 2025
         
English Edition
   
Epaper | Sunday | 17 August 2025 | English
কিশোরগঞ্জে জন্মাষ্টমী উপলক্ষে শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত
পাকিস্তানে ভয়াবহ বন্যা ও ভূমিধসে ৩০৭ জনের মৃত্যু
পাবনায় বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে প্রচারণায় সাংবাদিক এম এ আজিজ
এ দেশ সবার, এখানে কোনো ভেদাভেদ থাকবে না: সেনাপ্রধান
শিরোনাম:

বস্তায় আদা চাষে সাফল্যের পথে কাইছার

প্রকাশ: শনিবার, ১৬ আগস্ট, ২০২৫, ৫:৪২ পিএম  (ভিজিটর : ১৮)

গত করোনায় বাবার অসুস্থতাকে কেন্দ্র করে ডাক্তারে পরামর্শে গ্রামেই জীবনধারণের পরিকল্পনা করেন চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি ইউনিয়নের মিয়া বাড়ি এলাকার কাইছার খান সিদ্দিকী (৪৫) নামে এক ব্যক্তি।

শহর থেকে গ্রামে জীবনধারণের জন্য স্বপ্ন বুনতে থাকেন কাইছার। সম্ভাবনা খুঁজে পান ৮ বছর ধরে পরিত্যক্ত একটি বিস্তীর্ণ মাঠে। কিন্তু সেই মাটিতে ছিল না কোন উর্বরতা। মাঠের এক কোণায় কয়েক বছর আগে গড়ে উঠেছে একটি জৈব সারের কারখানা। কারখানার সাথে লাগোয়া ১৫ শতক জায়গায় তৈরি হয়েছে একটি কলাবাগান। রোপন করা হয়েছে মেহের সাগর ও অগ্নিশ্বর জাতের ১৫০টি কলা গাছ।

সেই কলাবাগানের ফাঁকে ফাঁকে বস্তায় আদা চাষ করেছেন কাইছার খান সিদ্দিকী। সিমেন্টের পরিত্যক্ত ৩৭০টি বস্তায় আদা চাষ করে লাখ টাকা আয়ের আশা তার।

কাইছার চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি ইউনিয়নের মিয়া বাড়ি এলাকার বাসিন্দা। উচ্চ শিক্ষিত এই ব্যক্তি এক সময় চট্টগ্রাম শহরে ভালো বেতনে বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। দেশে করোনা মহামারি শুরু হলে চিকিৎসকের পরামর্শে তার অসুস্থ বাবাকে নিয়ে গ্রামে চলে আসেন এবং পরিবারসহ গ্রামেই স্থায়ীভাবে বসবাসের সিদ্ধান্ত নেন। জীবিকার তাগিদে সরকারি ও বেসরকারি প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ নিয়ে লোহাগাড়ায় গড়ে তুলছেন একের পর এক কৃষি খামার। পাচ্ছেন সফলতা।

সর্বশেষ চলতি বছরের মে মাসে ১৫ শতক আয়তনের তার কলাবাগানের ফাঁকা অংশে বস্তায় আদা চাষ করেছেন। কাইছারের বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দক্ষিণে গোয়ালটি মুরার বড়তলী এলাকায় কলাবাগানটির অবস্থান।

লোহাগাড়া উপজেলা সদর থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক হয়ে ৭ কিলোমিটার দক্ষিণে গেলেই চুনতি শাহ সাহেব গেট। সেখান থেকে চুনতি ইসহাক মিয়া সড়ক হয়ে ৩০০ মিটার পূর্বে ঢুকলেই হাতের ডানে কলাবাগানটির দেখা মেলে।

রোববার বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পরিত্যক্ত মাঠের লাল বেলেমাটিতে কলাবাগানটির গাছগুলো সুস্থ-সবল হয়ে বেড়ে উঠেছে। কলাগাছের ফাঁকে ফাঁকে ৩৭০টি বস্তায় আদা চাষ করা হয়েছে। প্রতি বস্তায় গজিয়েছে ১০ থেকে ২০টি গাছ। প্রতিটি গাছের উচ্চতা প্রায় ৩ ফুট। ক্ষতিকর পোকামাকড় দমনে বসানো হয়েছে ফেরোমেন ফাঁদ।

বাগানে আদার বস্তা থেকে আগাছা পরিষ্কার করছিলেন কাইছার। কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি জানান, এ বছর মার্চ মাসে ঠাকুরগাঁওয়ে ‘গ্লোবাল গ্যাপ’ কৃষি প্রশিক্ষণে গিয়েছিলেন কাইছার। আগ্রহ থেকেই প্রশিক্ষণ নিতে যাওয়ার পথে বগুড়া বাংলাদেশ মশলা গবেষণা কেন্দ্র ঘুরে দেখেন। সেখানে একজন কৃষি বিজ্ঞানী তাকে বস্তায় আদা চাষের উপর একদিনের প্রশিক্ষণ দেন। তখন সিদ্ধান্ত নেন বস্তায় আদা চাষ করার। সেখান থেকে বীজ আদা কিনে চলতি বছরের মে মাসে লোহাগাড়ায় নিজের জৈব সার কারখানার পাশে বস্তায় আদার চাষ করেন।

কাইছার খোলা কাগজকে জানান, দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত মাঠের বেলেমাটির উর্বরতা শক্তি ছিল না। মাটির সাথে জৈব সার, কেমিক্যাল, চুন ও রাসায়নিক সারের মিশ্রণ করে ১ সপ্তাহ পর প্রতি বস্তায় ২০ কেজি মিশ্রণে ৬০ গ্রাম আদার বীজ বপন করা হয়। পরিচর্যা হিসেবে প্রথম দুই সপ্তাহে ২ বার পানি, আড়াই মাস পর বস্তাপতি ১০০ গ্রাম সার ও দুইবার কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়। তাছাড়া মাঝে মাঝে বস্তা থেকে আগাছা পরিষ্কার করতে হয়। ৩৭০ বস্তায় আদা চাষ করতে মোট খরচ হয়েছে ১২ হাজার টাকা। রোপনের ৮মাস পর আগামী ডিসেম্বর মাসের শেষ দিকে আদা বিক্রির উপযোগী হবে। প্রতি বস্তা থেকে ৭০০ থেকে ১৫০০ গ্রাম আদা উৎপাদন হবে বলে আশা করছেন কাইছার। আদার গড় বাজার মূল্য ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা। সেই হিসেবে ৩৭০ বস্তার আদা বিক্রি করে ১ লাখ টাকার কাছাকাছি আয় হবে বলে প্রত্যাশা তার।

কাইছার আরো বলেন, কলাগাছের ছায়া আদাগাছকে সূর্যের তীব্র তাপ থেকে রক্ষা করবে। বস্তায় আদা চাষে সুবিধা বেশি এবং খরচ অনেক কম। বস্তায় পানি জমে না। রোগে আক্রান্ত বস্তাটি সহজেই অন্যত্র সরিয়ে ফেলা যায় বলে রোগের বিস্তার হতে পারে না। তাছাড়া এই পদ্ধতিতে আদা চাষে সারের অপচয় হয় না বলে খরচও অনেক কম। কৃষিজমি নেই এমন পরিবারও বাড়ির উঠানে, ছাদে অথবা বাড়ির পাশের পরিত্যাক্ত ছোট জায়গায় মাত্র তিন থেকে পাঁচটি বস্তায় আদা চাষ করে পরিবারের সারা বছরের আদার চাহিদা মেটাতে পারেন। এক্ষেত্রে আমি সব ধরনের সহযোগিতা করব।

লোহাগাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কাজী শফিউল ইসলাম বলেন, বস্তায় আদা চাষ বর্তমানে গ্রামীণ কৃষিতে ব্যাপক এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে। এ পদ্ধতি বাংলাদেশকে নতুন স্বপ্ন দেখাচ্ছে। একদিকে উৎপাদন বাড়ছে, অন্যদিকে কমছে আদার আমদানি। এটা খারাপ জমিতে এমনকি বাড়ির আঙিনায়ও করা যায়। আগামী কয়েক বছর যদি এভাবে উৎপাদন বাড়ে, তবে আমরা আদায় স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারব। এতে ডলার সাশ্রয় হবে।

কাজী শফিউল ইসলাম বলেন, ২০২৩ সালের শেষের দিকে লোহাগাড়ায় প্রথম বস্তায় আদা চাষ শুরু হয়। আমরা পারিবারিক পুষ্টি বাগান প্রকল্প'র আওতায় উপজেলায় ২০ জন উদ্যোক্তাকে ৩০টি করে বস্তা, জৈব সার ও বীজ আদা দিয়েছি। চলতি বছর ৩০ জন উদ্যোক্তা আদা চাষ করেছেন। তবে বড় পরিসরে যে কয়েকজন আদা চাষ করেছেন, কাইছার খান সিদ্দিকী তাদের মধ্যে অন্যতম। নতুনভাবে কেউ বস্তায় আদা চাষ করতে চাইলে আমরা সব ধরনের সহযোগিতা দিব।

এফপি/রাজ
সর্বশেষ সংবাদ  
সর্বাধিক পঠিত  
YOU MAY ALSO LIKE  
Editor & Publisher: S. M. Mesbah Uddin
Editorial, News and Commercial Offices: Akram Tower, 15/5, Bijoynagar (9th Floor), Ramna, Dhaka-1000
Call: 01713-180024, 01675-383357 & 01840-000044
E-mail: news@thefinancialpostbd.com, ad@thefinancialpostbd.com, hr@thefinancialpostbd.com
🔝