পদ্মানদীর কারণে কুষ্টিয়া জেলা ও কুমারখালী উপজেলা শহর থেকে বিচ্ছিন্ন চরসাদিপুর ইউনিয়ন। উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় এখানকার মানুষের জীবনমান ততটা উন্নত নয়। তবুও শান্তিতে বসবাস করছেন চরাঞ্চলের মানুষ। কিন্তু একটি চক্র ব্যক্তিগত স্বার্থে চরসাদিপুরকে লাগোয়া পাবনা জেলার সঙ্গে সংযুক্ত করতে চায়।
এজন্য বুধবার (১৩ আগষ্ট) সকাল ১১টায় চরসাদিপুর পরিদর্শনে আসার কথা ছিল পাবনা জেলা প্রশাসনের একটি প্রতিনিধি দলের। এর প্রতিবাদে সকালে এলাকাবাসী মানববন্ধনের আয়োজন করে।
এ সময় পাবনা থেকে আসা কিছু দুর্বৃত্তরা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মানববন্ধনে হামলা করে সমাবেশ স্থলের চেয়ার টেবিল ভাঙচুর করেছে। হামলায় আহত হয়েছেন ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গোলাম আজম।
বুধবার (১৩ আগস্ট) সকাল ১০টার দিকে উপজেলার চরসাদিপুর ইউনিয়ন পরিষদ মাঠে এ ঘটনা ঘটে। এছাড়াও এ ঘটনায় পরিষদ চত্বরে কয়েকদফা পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। পরে দুপুর ১২টার দিকে ‘মা, মাটি, মোহনা, আমরা পাবনা যাবো না’ শ্লোগানে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
স্থানান্তর নয়, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার দাবি জানিয়ে আহত বিএনপি নেতা গোলাম আজম বলেন, বুধবার পাবনার প্রশাসন স্থানান্তরের বিষয়ে পরিদর্শনে আসার কথা ছিল। এর প্রতিবাদে আমরা হাজারো এলাকাবাসী মানববন্ধন ও সমাবেশের আয়োজন করি। কিন্তু হঠাৎ পাবনার একদল দুর্বৃত্ত মোটরসাইকেল বহর নিয়ে হামলা ও ভাঙচুর চালিয়েছে।
তার ভাষ্য, স্থানান্তরের আগেই পাবনার সন্ত্রাসীরা হামলা করেছে। স্থানান্তরের পরে তারা নানাভাবে হয়রানি করবে।
স্থানীয়রা জানায়, পদ্মা নদীর তীর ঘেঁষে প্রায় ২৫ বর্গমাইল আয়তন নিয়ে ১৯৯৮ সালে গঠিত চরসাদীপুর ইউনিয়ন। সেখানে ৯ টি গ্রামে প্রায় ৩০ হাজার মানুষের বসবাস। এটি উপজেলা শহর থেকে প্রায় ১৭ কিলোমটার এবং জেলা শহর থেকে প্রায় ২৯ কিলোমটার দূরে। যাঁর উত্তর ও পশ্চিমে রয়েছে পাবনার হেমায়েতপুর ও দৌগাছি ইউনিয়ন। ১৯৬২ সালের আগ পর্যন্ত এটি পাবনা সদরের সঙ্গে যুক্ত ছিল।
জানা গেছে, প্রায় ৬ কিলোমিটার পদ্মা নদীর বুকের ওপর দিয়ে জেলা ও উপজেলা শহরের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেন চরসাদিপুরের বাসিন্দারা। ভরা বর্ষা মৌসুমে যাতায়াতের একমাত্র বাহন ইঞ্জিনচালিত নৌকা। আর শুষ্ক মৌসুমে নদীর অধিকাংশ জুড়ে চর জাগে। তখন পানিতে নৌকা ও চরে ইজিবাইক, বাইসাইকেল, মোটরসাইকেল এবং পাঁয়ে হেঁটে যাতায়াত করেন তাঁরা। এতে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় ও সময় অপচয়ের সঙ্গে পাল্লা দেয় চরম ভোগান্তি।
সব নিয়ে বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে সম্প্রতি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে স্থানান্তরের বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, পরিষদ চত্বরে উত্তেজিত হাজারো জনতা। পরিষদ ভবনের সামনে সমাবেশ স্থলে পড়ে আছে অগোছালো চেয়ার। তাতে ভাঙচুরের ক্ষত। পাবনার কিছু বিএনপির নেতাকর্মীরা চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনা করছেন। চেয়ারম্যান কক্ষের বাইরে স্থানীয় দুইটি পক্ষ হাতাহাতি করছে।
স্থানীয় কৃষক হামিদ সরদার বলেন, পদ্মানদীর কারণে আমাদের কপাল পুড়েছে। তবুও আমার বাপ দাদারা বাস করেছে কুমারখালী উপজেলায়। আমরাও বাস করতে চাই। আমাদের চলাচলের ভোগান্তি হলেও শান্তিতে আছি।
তবে এঘটনায় জড়িত পাবনা এলাকার মানুষের নাম ঠিকানা পাওয়া যায়নি। তারা কেউ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি।
চরসাদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেছের আলী খাঁ বলেন, হট্টগোল হয়েছে পরিষদ চত্বরে। পাবনার প্রশাসন আজ আর আসবেনা। এর বেশি কিছু বলতে পারছিনা। হামলা ও
ভাঙচুরের ঘটনা নিশ্চিত করে কুমারখালী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) হুমাউন কবির বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। এখন পরিস্থিতি শান্ত আছে।
কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম মিকাইল ইসলাম বলেন, সাদিপুরকে পাবনার সঙ্গে সংযুক্ত করা যায় কি না? এই মর্মে পাবনার প্রশাসন পরিদর্শনে আসতে চেয়েছিলেন। কিন্তু স্থানীয়দের হট্টগোলের কারনে তারা আসেননি। পরবর্তী বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এফপি/রাজ