ঢাকার মেট্রোরেল এমআরটি লাইন-১-এর প্যাকেজ- ৮ নিয়ে নতুন বিতর্ক তৈরি হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, দরপত্রের কারিগরি শর্ত এমনভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে, যাতে জাপানি ছাড়া অন্য ঠিকাদার- বিশেষ করে চীনের কোম্পানি ‘অযোগ্য ঘোষিত হয়’। এতে প্রতিযোগিতা সীমিত হয়ে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) এমআরটি লাইন-১ প্রকল্পকে ১২টি প্যাকেজে ভাগ করেছে। এর মধ্যে আটটিতে প্রাকযোগ্যতা যাচাই সম্পন্ন হলেও প্রায় সব ক্ষেত্রেই জাপানি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। প্যাকেজ-৮-এ একমাত্র চীনা ঠিকাদার চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন করপোরেশন (সিসিইসিসি) যোগ্যতার তালিকায় আসে। এর সঙ্গে বাংলাদেশি আবদুল মোনেম লিমিটেড ও চায়না রেলওয়ে ব্রিজ কনস্ট্রাকশন ব্যুরোও যুক্ত। জাপানি কজিমা করপোরেশন ও তাইসি করপোরেশনও এই প্যাকেজে দরপত্র জমা দিয়েছে।
অভিযোগ অনুযায়ী, প্যাকেজ-৮-এ বালু নদীর ওপর ১৭২ মিটার দীর্ঘ একটি স্টিল সেতু নির্মাণে শুধুমাত্র বিশেষ ধরনের জাপানি স্টিল ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, যা জাপানের তিনটি কোম্পানি উৎপাদন করে। একই মানের অন্য দেশের স্টিল ব্যবহার করতে চাইলে জাপানি রোড অ্যাসোসিয়েশনের অনুমোদন নিতে হবে। চীনা ঠিকাদার সিসিইসিসি জাপানি সরবরাহকারী শিনচো করপোরেশনের সনদ দিলেও মূল্যায়নের সময় নির্মাতা প্রতিষ্ঠান কোবে স্টিলের সনদ চাওয়া হয়। অথচ দরপত্র দলিলে সরবরাহকারীর সনদই যথেষ্ট বলা হয়েছিল।
ডিএমটিসিএল সূত্র জানায়, এপ্রিল মাসে তিন ঠিকাদারই কারিগরি ও আর্থিক প্রস্তাব জমা দেয়। বর্তমানে কারিগরি মূল্যায়ন চলছে। সাধারণ নিয়মে সর্বনিম্ন দরদাতাই কাজ পাবে, তবে অভিযোগ আছে যে আর্থিক প্রস্তাব খোলার আগেই চীনা ঠিকাদারকে অযোগ্য ঘোষণার চেষ্টা হচ্ছে।
ইতিমধ্যে এমআরটি লাইন–১-এর মূল চারটি প্যাকেজে দর জাপানি ঠিকাদারদের কাছ থেকে এসেছে, যা প্রাক্কলনের তুলনায় গড়ে ১২৫ শতাংশ বেশি। এতে প্রায় ১৯ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয়ের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
ডিএমটিসিএল-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক আহমেদ বলেন, ‘আমরা অভিযোগ পেয়েছি। কারও প্রতি অন্যায় করা হবে না।’ প্রকল্প পরিচালক আবুল কাশেম জানান, সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট ইউনিটের মতামত চাওয়া হয়েছে এবং প্রতিযোগিতা ঠিক রাখার চেষ্টা করা হবে।
সরকারি সূত্র জানায়, জাপানি ঋণ ও প্রযুক্তিগত শর্তের কারণে প্রতিযোগিতায় জাপানি প্রতিষ্ঠান এগিয়ে থাকে। তবে অতিরিক্ত ব্যয় ঠেকাতে এবং শর্ত শিথিল করতে জাইকার সঙ্গে আলোচনা চলছে।
ঢাকায় ছয়টি মেট্রোরেল লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। প্রথম লাইন এমআরটি–৬ আংশিক চালু হলেও এমআরটি–১ ও এমআরটি–৫ (উত্তর) নির্মাণ পর্যায়ে রয়েছে। নতুন এই প্রকল্পগুলিতে কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় তিন হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এফপি/রাজ