নিউ ইয়র্ক সিটির ম্যানহাটনের ব্যস্ত পার্ক অ্যাভিনিউতে অবস্থিত একটি অফিস ভবনে সোমবার সন্ধ্যায় এক বন্দুকধারীর হামলায় পাঁচজন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে নিউ ইয়র্ক সিটি পুলিশের একজন কর্মকর্তা রয়েছেন। পরে হামলাকারী নিজেই আত্মহত্যা করেন বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশ।
স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা ২৮ মিনিটে ৩৪৫ পার্ক অ্যাভিনিউতে গুলির ঘটনা ঘটে। ভবনটিতে ব্ল্যাকস্টোন, ন্যাশনাল ফুটবল লিগ (NFL), এবং আয়ারল্যান্ডের কনসুলেটসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় রয়েছে। ঘটনার সময় অফিসে শতাধিক লোক উপস্থিত ছিলেন।
নিউ ইয়র্ক পুলিশ বিভাগের কমিশনার জেসিকা টিশ জানান, হামলাকারীর নাম শনাক্ত করা হয়েছে—শেন ডেভন তামুরা, বয়স ২৭। তিনি লাস ভেগাসের বাসিন্দা এবং বৈধ অস্ত্র বহনের অনুমতিপত্র ছিল তার কাছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, তামুরা একটি কালো গাড়ি থেকে নামার পর রাইফেল হাতে ভবনের লবিতে ঢুকে গুলি চালানো শুরু করেন। প্রথমেই তিনি ছুটিতে থাকা নিউ ইয়র্ক পুলিশ কর্মকর্তা দিদারুল ইসলামকে লক্ষ্য করে গুলি করেন, যিনি ভবনে নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন। এরপর আরও কয়েকজন কর্মীকে গুলি করেন, যাদের মধ্যে দু’জন পুরুষ ও একজন নারী ঘটনাস্থলেই মারা যান। এক ব্যক্তি গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি।
হামলাকারী পরে ৩৩ তলায় উঠে একজনকে হত্যা করেন এবং শেষে নিজেকে গুলি করে আত্মহত্যা করেন। ভবনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মানুষদের নিরাপদে বের করে আনা হয়। টেলিভিশন ফুটেজে অনেককে হাত উপরে তুলে বেরিয়ে যেতে দেখা গেছে।
পুলিশ জানিয়েছে, শেন তামুরার মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত পূর্ব ইতিহাস রয়েছে। তার বিরুদ্ধে অতীতে কোনো গুরুতর অপরাধের রেকর্ড ছিল না। তার সঙ্গে পাওয়া ব্যাকপ্যাকে অস্ত্রের গুলি, প্রেসক্রিপশন ও কনসিলড ক্যারি পারমিটের কাগজপত্র ছিল।
নিউ ইয়র্ক সিটির মেয়র এরিক অ্যাডামস এক ভিডিও বার্তায় জানান, ভবনের ভেতরে আটকে থাকা ব্যক্তিদের নিরাপদে সরিয়ে আনার কাজ চলমান ছিল। তিনি বলেন, “এটা শুধু আমাদের নিরাপত্তা নয়, আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দিকেও চোখ ফেরানোর সময়।”
এফবিআই-এর নিউ ইয়র্ক ফিল্ড অফিস এবং নিউ ইয়র্ক পুলিশ বিভাগ একযোগে তদন্ত শুরু করেছে। ভবনের সার্ভেইলেন্স ফুটেজ, তামুরার ফোন এবং তার গাড়িতে পাওয়া মালামাল পরীক্ষা করা হচ্ছে।
এ ঘটনায় পুরো মিডটাউন এলাকাজুড়ে যানজট সৃষ্টি হয় এবং নিকটবর্তী কয়েকটি রাস্তা সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়। অফিস ভবন এবং আশপাশের এলাকায় বাড়তি নিরাপত্তা মোতায়েন করা হয়েছে।
এ ঘটনায় গোটা শহরজুড়ে নিরাপত্তা ও মানসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। আইনপ্রণেতারা বলছেন, ভবিষ্যতে এমন হামলা প্রতিরোধে ত্বরিত ব্যবস্থা নিতে হবে।
এফপি/রাজ