বরিশালের গৌরনদীতে কৃষকদের জন্য বরাদ্দকৃত সরকারি ডিএপি সার রাতের অন্ধকারে পাচারকালে স্থানীয় জনতা একটি ভ্যানসহ সার জব্দ করলেও রহস্যজনক কারণে শেষ পর্যন্ত পাচারকারীরা পার পেয়ে গেছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার নীরবতা এবং ঘটনাস্থলে উপস্থিত না হওয়াকে ঘিরে স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
শনিবার (১৯ জুলাই) রাত ৮টার দিকে গৌরনদী উপজেলার টরকী বন্দর সংলগ্ন বড় ব্রিজ এলাকা থেকে ভ্যানে করে পাচারকালে সারসহ গাড়িটি আটক করে স্থানীয় জনতা।
প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, টরকী বন্দরের ‘মেসার্স শিশির এন্টারপ্রাইজ’ নামের একটি সার বিক্রয় প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরেই নিয়মিতভাবে সরকারি বরাদ্দের সার কালোবাজারে বিক্রি করে আসছে।
সেদিন রাতেও পাচারের সময় স্থানীয়দের সন্দেহ হলে তারা ভ্যানটি থামিয়ে চালক শাহিনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
জবাবে তিনি জানান, ভ্যানে থাকা সারগুলো মাদারীপুর জেলার কালকিনি উপজেলার দক্ষিণ রমজানপুর গ্রামের সিদ্দিক বেপারীর জন্য নিয়ে যাচ্ছেন। তবে এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ সরকারি মালামাল পরিবহনের সময় চালকের কাছে কোনও বৈধ কাগজপত্র, চালান, ক্যাশ মেমো কিংবা ক্রেতার পরিচয়পত্র ছিল না।
স্থানীয়রা তৎক্ষণাৎ গৌরনদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সেকেন্দার শেখকে ফোনে অবহিত করলে তিনি বরিশালে অবস্থানের কথা জানিয়ে ঘটনাস্থলে না যাওয়ার কথা জানান।
অভিযোগ রয়েছে, তিনি কোনও প্রতিনিধি পাঠাননি এবং বিষয়টি দেখেও দেখেননি।
পরে ভ্যানে ক্রয়কৃত সারের মালিক সিদ্দিক বেপারী স্বীকার করেন, তিনি শিশির কুন্ডুর দোকান থেকে প্রতি বস্তা ১,৭০০ টাকা দরে ১০ বস্তা ডিএপি সার কিনেছেন। অথচ সরকারি নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী প্রতিটি বস্তা ১,১৬০ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা। ফলে প্রতি বস্তায় ৫৪০ টাকা করে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হয়েছে, যা সরাসরি সরকারি ভর্তুকি আত্মসাৎ এবং কৃষকদের সঙ্গে প্রতারণার শামিল বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
এ ব্যাপারে শিশির কুন্ডুর কর্মচারী নাসির সাংবাদিকদের জানান, পরিচয়পত্র কিংবা মেমো ছাড়াই তারা নিয়মিত এভাবে সার বিক্রি করে থাকেন।
মালিক শিশির কুন্ডুও বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, “ভোটার আইডি যাচাই করার বিষয়টি আমার জানা নেই।”
অথচ সরকারি নীতিমালায় স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, কৃষি উপকরণ বিক্রির সময় কৃষকের পরিচয়পত্র যাচাই ও ক্যাশ মেমো প্রদান বাধ্যতামূলক।
সার পাচারের বিষয়ে জানতে গৌরনদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সেকেন্দার শেখের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। যারা এ ধরনের অভিযোগ করেছে তাদেরকে প্রমাণসহ আমার কাছে পাঠিয়ে দিন। এত গুরুতর ঘটনা হলে তারা সারারাত ভ্যানটি আটক রাখলো না কেন? উল্টো এই প্রশ্নও রাখেন তিনি।
তবে গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রিফাত আরা মৌরি বলেন, বিষয়টি আপনাদের কাছ থেকেই প্রথম জানলাম। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, শিশির কুন্ডুর বিরুদ্ধে এর আগেও একাধিকবার সরকারি সার পাচারের অভিযোগ উঠলেও প্রতিবারই কৃষি অফিস রহস্যজনকভাবে নীরব থেকেছে। ফলে একই সিন্ডিকেট দিনের পর দিন দুর্নীতি চালিয়ে যেতে সাহস পাচ্ছে।
সরকারি ভর্তুকির কোটি কোটি টাকার কৃষি উপকরণ যাতে কৃষকের হাতে পৌঁছায়, তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সচেতন মহল।
এফপি/রাজ