গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশকে কেন্দ্র করে সহিংসতা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের পর জেলাজুড়ে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
বুধবার (১৬ জুলাই) রাত ৮টা থেকে বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ২২ ঘণ্টার কারফিউ জারি করেছে জেলা প্রশাসন।
বুধবার দিনভর এনসিপির “জুলাই পদযাত্রা” কর্মসূচি ঘিরে গোপালগঞ্জ শহরের পৌর পার্ক এলাকায় দফায় দফায় হামলা, সংঘর্ষ ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের তথ্যে জানা যায়, বিকেল ৫টার দিকে হঠাৎ করে একদল দুর্বৃত্ত এনসিপির মঞ্চ ও আশপাশে থাকা গাড়িতে হামলা চালায়। এতে অন্তত চারজন নিহত ও ৫০ জনের বেশি আহত হন। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন দীপ্ত সাহা (২৫), রমজান কাজী (১৮), সোহেল মোল্লা (৪১) ও ইমন তালুকদার (২৪)।
সংঘর্ষের সময় পুলিশ ও সেনাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালায়। কয়েক দফা লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল ও ফাঁকা গুলির শব্দে শহরজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে রাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়।
এনসিপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, আওয়ামী লীগ এবং ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে সমাবেশে হামলা চালিয়েছে। হামলার মুখে দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা গোপালগঞ্জের পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আশ্রয় নেন এবং পরে সেনাবাহিনীর সহায়তায় শহর ছাড়েন।
এ অবস্থায় রাতেই জেলা প্রশাসন গোপালগঞ্জে ১৪৪ ধারা জারি করে এবং পরবর্তী সময়ে কারফিউ ঘোষণা করে। প্রশাসনের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত কারফিউ বহাল থাকবে।
বৃহস্পতিবার সকালে শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সড়ক ফাঁকা, অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ। ঘোনাপাড়া, এলজিইডি মোড়, হাসপাতাল, কোর্ট চত্বর, লঞ্চঘাট, পুলিশ লাইনস মোড়সহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে কোনও চেকপোস্ট বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য দেখা যায়নি। তবে জরুরি প্রয়োজনে কিছু মানুষ সড়কে চলাচল করছেন।
এদিকে, এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম এক ভিডিও বার্তায় দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, “আওয়ামী সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করতে প্রস্তুত হোন।” দলটি আগামীকাল ফরিদপুরসহ অন্যান্য জেলা শহরে বিক্ষোভ কর্মসূচিরও ঘোষণা দিয়েছে।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে বিএনপি ও এনসিপির পক্ষ থেকে সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
এফপি/রাজ