বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) এর জাতীয় দিবস উদযাপন কমিটির তত্ত্বাবধানে যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের সাথে 'জুলাই শহিদ দিবস' পালিত হয়েছে।
আজ বুধবার (১৬ জুলাই) সকাল দশটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবন সংলগ্ন করিডোর থেকে একটি শোক র্যালি ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়ার নেতৃত্বে যাত্রা শুরু করে টিএসসি-কোষাধ্যক্ষ ভবন এবং বোটানিক্যাল গার্ডেনের সামনের রাস্তা প্রদক্ষিণ করে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন মিলনায়তনে এসে শেষ হয়।
এসময়ে র্যালীতে অংশগ্রহণকারীরা কালো ব্যাজ ধারণ করে। সকাল ১০ টা ২০ মিনিটে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন মিলনায়তনে মূল অনুষ্ঠান শুরু হয়।
ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মো. শহীদুল হক এর সভাপতিত্বে এবং সহযোগী ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ’র সঞ্চালনায় প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া। এছাড়াও মঞ্চে উপবিষ্ট ছিলেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. মো: রফিকুল ইসলাম সরদার এবং জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে ময়মনসিংহ অঞ্চলের তিনজন শহীদের নিকটাত্মীয় শহিদ রেদোয়ান হোসেন সাগরের পিতা মো: আসাদুজ্জামান আসাদ, শহিদ সাদেকুর রহমানের ভাই মো: সাদ্দাম হোসেন এবং শহিদ আছির এম.টি শারাল হকের পিতা এইচ.এম. এনামুল হক।
অনুষ্ঠানের শুরুতে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে নিহত-আহতদের স্মরণে বিশেষ দোয়া পরিচালনা করা হয়। জনসংযোগ ও প্রকাশনা দফতরের পরিচালক জুলাই আন্দোলনের উপর তিনটি ভিডিও ক্লিপস প্রদর্শন করেন।
জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে সরাসরি অংশগ্রহণকারী বাকৃবির ছাত্র মাহমুদুল হাসান রাজু, সঞ্জয় রায়, মেজবাউল হক মিজু, তানিউল করিম জীম, মো: আজিজুল হক, নিশাত তাঞ্জুম মিথিলা, পুস্পিতা ভট্টাচার্য, বাকৃবি শাখা ছাত্রদলের আহবায়ক মো: আতিকুর রহমান আতিক, সদস্য-সচিব মো: শফিকুল ইসলাম শফিক, বাকৃবি শাখা ছাত্র শিবিরের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মঈন এবং বাকৃবি সাংবাদিক সমিতির সভাপতি মো: হাবিবুর রহমান রনি আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। এছাড়াও কর্মচারীদের পক্ষে মো: হেলাল উদ্দীন এবং কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে সক্রিয় অংশগ্রহণকারী বাকৃবির ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. মো: হেলাল উদ্দীন বক্তব্য রাখেন। শিক্ষকদের মধ্য থেকে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে সক্রিয় অংশগ্রহণকারী প্রফেসর ড. মো: আবুল কালাম আজাদ, প্রফেসর ড. মো: আলী রেজা ফারুক, ভেটেরিনারি অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মো: বাহানুর রহমান তাদের মূল্যবান বক্তব্য প্রদান করেন।
উপস্থিত শহিদ পরিবারের ব্যক্তিবর্গ জুলাই-আগস্টের গণহত্যায় জড়িতদের বিচার দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিশ্চিত করা এবং অন্তর্বর্তী সরকার ঘোষিত জুলাই সনদ ঘোষণার বাস্তবায়ন নিশ্চিতের আহবান জানান। এসময়ে ভাইস-চ্যান্সেলর তিনটি শহীদ পরিবারের নিকট স্মারক উপহার প্রদান করেন।
প্রধান পৃষ্ঠপোষকের বক্তব্যে ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া উপস্থিত তিনটি শহীদ পরিবারের প্রতি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতা ও উপস্থিত সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ১৬ জুলাই একটি শোকের দিন, একটি অনুপ্রেরণার দিন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ১৬ জুলাই একটি অবিস্মরণীয় দিন। তিনি যেসমস্ত ছাত্র-জনতা দেশের প্রয়োজনে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে অকাতরে রক্ত দিয়ে আমাদের ঋণী করে গেছেন তাদেরকে আমরা সশ্রদ্ধ চিত্তে স্মরণ করি, তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।
যারা আহত হয়েছেন, পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন তাদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা তোমাদের ভুলিনি, ভুলবোনা কোনদিন। ২০২৪ সনে জুলাই-আগস্টে দেশ যেভাবে উত্তাল হয়েছিলো তার ঢেউ বাকৃবিতেও আছড়ে পড়েছিল, তিনি বাকৃবির শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী, ছাত্র-ছাত্রী যারা তদানিন্তন শাসকগোষ্ঠীর রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে সক্রিয় ছিলেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। ফ্যাসিস্স্টের দোসরদের বিচার বিষয়ে বিভিন্ন বক্তার জোড়ালো দাবির প্রেক্ষিতে ভাইস চ্যান্সেলর জানান- বাকৃবিতে গঠিত তদন্ত কমিশনের রিপোর্ট ও সিন্ডিকেটের সুপারিশ অনুযায়ী শীঘ্রই তা দৃশ্যমান হবে। বাকৃবিতে সংঘটিত সকল অন্যায়ের বিচার হবে বলে তিনি আশ্বস্ত করেন। বৈষম্যহীন এবং গণতান্ত্রিক সমাজ বিনির্মাণে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী নারীদের এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের ভূমিকা তিনি সশ্রদ্ধ চিত্তে স্মরণ করেন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মাঝে আরও উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন অনুষদের ডিন, সিনিয়র শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং ছাত্র -ছাত্রীবৃন্দ।
উল্লেখ্য, বাকৃবিতে জুলাই-আগস্ট ২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থান উপলক্ষে ১৫ই জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত নানাবিধ কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে।
এফপি/এমআই