পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে ফের বাড়ছে ম্যালেরিয়ার সংক্রমণ। চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসেই (জানুয়ারি–মে) জেলায় আক্রান্ত হয়েছেন ৬৬১ জন। গত বছরের একই সময়ে এ সংখ্যা ছিল ৯৪৫ জন। তবে মে মাসে সংক্রমণের হার হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়েছে।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, মৃত্যুও হয়েছে ১ জনের, যদিও সেটি ঘটেছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, ফলে তা জেলার হিসেবে যুক্ত হয়নি।
রাঙামাটি সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত আক্রান্ত ছিলেন ৩০৮ জন। মে মাসেই নতুন করে ৩৫৩ জন রোগী শনাক্ত হয়েছেন। আক্রান্তদের ৮৩ শতাংশই জেলার চার দুর্গম উপজেলা—জুরাছড়ি, বিলাইছড়ি, বরকল ও বাঘাইছড়িতে বসবাস করেন। এককভাবে সবচেয়ে বেশি রোগী মিলেছে জুরাছড়িতে—২০৮ জন।
উপজেলা ভিত্তিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী: জুরাছড়ি: ২০৮, বিলাইছড়ি: ১৫৬, বাঘাইছড়ি: ৯৯, বরকল: ৮৪, রাজস্থলী: ৬৩, কাপ্তাই: ২৯, লংগদু: ৭, নানিয়াচর: ৩, কাউখালী: ১, জেলা সদর: ১১
স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, পাহাড়ি দুর্গম অঞ্চলে চিকিৎসা সেবা পৌঁছানো কঠিন হওয়ায় এসব এলাকায় ম্যালেরিয়া পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে না। এ ছাড়া সীমান্তঘেঁষা এসব উপজেলায় ভারতের পার্শ্ববর্তী অঞ্চল থেকে ম্যালেরিয়ার বাহক মশার আনাগোনাও সংক্রমণ বাড়িয়ে দিচ্ছে।
জুরাছড়ির মৈদং ও দুমদুম্যা ইউনিয়নের গ্রামগুলোতে সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে মৈদংয়ের আমতলা, ভুয়াতলিছড়া, বাদলহাটছড়া, কাটালতলি ও জামেরছড়ি এবং দুমদুম্যার গবাখালি, লাম্বাবাগছড়া, হরিণহাটছড়া, করইদিয়া, ঘন্ডাছড়া, দুলুছড়ি, আদিয়াবছড়া, কান্দারাছড়া, এটছড়ি, কলাবনছড়ায় একাধিক মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন।
জেলার সিভিল সার্জন ডা. নূয়েন খীসা বলেন, “বর্ষা মৌসুমে ম্যালেরিয়া সংক্রমণ বাড়তে থাকে। জুন ও জুলাইয়ে বৃষ্টিপাত বাড়বে, রোগীর সংখ্যাও বাড়বে। এজন্য সব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকদের সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।”
এদিকে ব্র্যাক জানিয়েছে, তারা সর্বশেষ ২০২৩ সালে রাঙামাটিতে ৫ লাখ ৭৪ হাজারের বেশি মশারি বিতরণ করেছে। এরপর থেকে আর নতুন করে মশারি বিতরণ করা হয়নি। স্থানীয়দের অভিযোগ, রাতে মশারি টানালেও দিনে জুমের মাঠে কাজ করার সময় মশার কামড়ে আক্রান্ত হচ্ছেন তারা।
জুরাছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. অনন্যা চাকমা বলেন, “আগে শুধু বর্ষায় রোগী পাওয়া যেত, এখন সারা বছরই রোগী আসছে। ভারতের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে তেমন উদ্যোগ নেই, ফলে ওই এলাকা থেকে সংক্রমণ ঠেকানো যাচ্ছে না।”
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, ২০৩০ সালের মধ্যে দেশে ম্যালেরিয়া নির্মূলের লক্ষ্য থাকলেও পার্বত্য জেলাগুলোর চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। ২০২৫ সালের প্রথম পাঁচ মাসে সারা দেশে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত ৬৪১ জনের মধ্যে রাঙামাটিতেই আক্রান্ত ৬৬১ জন—যা থেকে বোঝা যায় জেলার একক অবস্থান কতটা সংকটজনক।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, দুর্গম এলাকাগুলোতে স্বাস্থ্যসেবা জোরদার, জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং নিয়মিত মশারি বিতরণ না হলে পাহাড়ে ম্যালেরিয়া রোধ করা সম্ভব নয়। সময়মতো পদক্ষেপ না নিলে ২০৩০ সালের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনও প্রশ্নের মুখে পড়বে।
এফপি/রাজ