কুমিল্লার হোমনায় পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি নিষিদ্ধ গাইড বই কিনতে বাধ্য হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। আর এতে লাভবান হচ্ছেন এক শ্রেণির শিক্ষক। মোটা অংকের কমিশন বাণিজ্য যাচ্ছে তাদের পকেটে।
শিক্ষকদের পছন্দের প্রকাশনীর বই কিনতে নানাভাবে চাপ দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কিছু অসাধু শিক্ষক কমিশনের লোভে গাইড বইয়ের লিস্ট ধরিয়ে দিয়ে নির্ধারিত প্রকাশনীর এ নিষিদ্ধ গাইড বই কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে।
হোমনা উপজেলায় ২৭টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসা রয়েছে। সরকারিভাবে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা হয়। কিন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক নির্ধারণ করে দিচ্ছে কোন শ্রেণিতে কোন প্রকাশনীর গাইড বই কিনতে হবে। বইয়ের গুণগত মান যাই হউক না কেন প্রকাশনী সংস্থার ডোনেশনের ওপর ভিত্তি করে গাইড বই পাঠ্য করার ফলে বইয়ের গায়ের মূল্যে শিক্ষার্থীরা বই কিনতে হচ্ছে। এতে কমিশন বানিজ্যে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে শিক্ষক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবক।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,কিছু বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের সাথে সমন্বয় করে বড় অঙ্কের কমিশনের বিনিময়ে বিভিন্ন প্রকাশনী সিলেবাস ছাপিয়ে বিদ্যালয়ে সরবরাহ করা হয়। পরবর্তীতে তাদের সিলেবাস থেকেই পরীক্ষায় প্রশ্ন করা হয় এবং তাদের গাইড বইয়ের সাথে প্রশ্ন মিলে যায়। যাতে বাধ্যতামূলক ঐ প্রকাশনীর বই কিনতে আগ্রহী হয় শিক্ষার্থীরা।
এ দিকে যে কোন লাইব্রেরিতে গেলে বিদ্যালয়ের নাম শুনলেই বলে দিতে পারে কোন স্কুলে কোন ক্লাসের কি গাইড বই পাঠ্য। হোমনা বাজারের মায়ের দোয়া লাইব্রেরিতে গিয়ে জানা গেছে এমন তথ্য। লাইব্রেরির মালিক জানান,শিক্ষার্থীরা স্কুলের স্লিপ নিয়ে এসে বই নিয়ে যায়। আমরা প্রকাশনীর বই বিক্রি করি মাত্র। কমিশনের কথা আমরা বলতে পারবো না।
এ ছাড়া বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, ক্লাসে বুকলিস্ট দিয়ে নির্দিষ্ট প্রকাশনীর নোট, গাইড, গ্রামার ও ব্যাকরণ বই কিনতে বলা হয়। ফলে তাদের কিছু করার থাকে না। বই না কিনলে বকাঝকা করে তাই বাধ্য হয়েই তা কিনতে হয়।
এ দিকে গাইড বইয়ের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা ধ্বংস করা হচ্ছে। শুধু তাই নয় অনেক শিক্ষক অভিজ্ঞ না হওয়ায়, তারা নোট ও গাইড বইয়ের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ায় শিক্ষার মানোন্নয়ন বাধাগ্রস্থ হচ্ছে।
এদিকে সরকারি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে প্রকাশনীর বিক্রয় প্রতিনিধিরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কতিপয় প্রধান শিক্ষককের যোগসাজসে শিক্ষার্থীদের এসব নিষিদ্ধ গাইড বই কিনতে বাধ্য করা হলেও রহস্যজনক কারনে তা বন্ধে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি প্রশাসনকে।
হোমনা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গাইড বই পাঠ্যের বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, পাঠ্যবইয়ে আনসিন প্রশ্নের কারণে সহায়ক বইয়ের সুবিধা নিতে হয়। তবে আমরা নিষিদ্ধ গাইড বই পাঠ্য করার পক্ষে নই। তবে অভিভাবকদেরও সচেতন থাকতে হবে। অন্যদিকে প্রশাসনের তদারকি খুব জরুরি বলে মনে করেন তিনি।
এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের একাডেমিক সুপারভাইজার মো. রাশেদুল ইসলাম জানান, সরকারের নির্ধারিত বই ছাড়া অন্য বই পড়ানোর সুযোগ নেই। কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে যদি শিক্ষার্থীদের গাইড বই কিনতে বাধ্য করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এফপি/রাজ