চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়েছে গুণীজন সংবর্ধনা ও কৃতি শিক্ষার্থীদের সম্মাননা ও শুভেচ্ছা অনুষ্ঠান। মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে দৈনিক বাংলাদেশের খবর ও দ্য ফিন্যান্সিয়াল পোস্ট-এর চট্টগ্রাম ব্যুরো।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, আজকের কৃতি শিক্ষার্থীরাই আগামী বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেবে। এমন আয়োজন শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করে, তাদের মধ্যে দায়িত্ববোধ ও দেশপ্রেম জাগিয়ে তোলে।
তিনি দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়েও স্পষ্ট বক্তব্য দেন। বলেন, গত ১৬ বছরে ফ্যাসিস্ট শাসনের ফলে জাতি আজও নৈতিকভাবে সুসংহত হতে পারেনি। রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাট ও বিদেশে অর্থপাচার করে দেশকে দুর্বল করে দেওয়া হয়েছে। এ অবস্থায় কোনো ধরনের চুরি, ডাকাতি, অর্থপাচার বা রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপ আর সহ্য করা হবে না।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, 'চট্টগ্রাম প্রতিদিন' নামের কিছু ভূইফোঁড় অনলাইন গণমাধ্যম বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। এসব অপসাংবাদিকতার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মেয়র শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, তোমরা শুধু কৃতিত্ব অর্জন করছো বলে গর্বিত নও, বরং আগামী দিনের বাংলাদেশ গড়ার গুরুদায়িত্বও তোমাদের কাঁধে। সৎ, সাহসী ও সচেতন নাগরিক হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে হবে।
প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সদস্য সচিব ও দৈনিক আমার দেশ-এর আরবিক সম্পাদক জাহিদুল করিম কচি। তিনি বলেন, আজকের দিনটি বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি গৌরবময় দিন, যেদিন জাতি দ্বিতীয়বারের মতো ফ্যাসিস্ট শাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে গণজাগরণ ঘটিয়েছে। এই অর্জন কেবল রাজনৈতিক নয়, বরং জনগণের সাহস, গণতন্ত্রের প্রতি অঙ্গীকার ও স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধার বহিঃপ্রকাশ। তিনি সাংবাদিকতা পেশাকে কলঙ্কিতকারী ভুয়া সাংবাদিকদের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, কিছু ব্যক্তি 'চট্টগ্রাম প্রতিদিন'-এর মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে অপেশাদার ও অনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষের কাছ থেকে চাঁদা দাবি করা হচ্ছে, যা পুরো সাংবাদিকতা পেশার জন্য লজ্জার বিষয়। প্রশাসনের কাছে আহ্বান জানান, এদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য ও জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম মহানগরের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য আলহাজ্ব শাহজাহান চৌধুরী। তিনি বলেন, যে জাতি তার গুণীজন ও মেধাবীদের সম্মান দিতে জানে, সে জাতিই সামনের দিকে এগিয়ে যায়। এই আয়োজন তারই প্রতিফলন।
দ্য ফিন্যান্সিয়াল পোস্ট-এর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্বপ্ন দেখার সাহস ও তা বাস্তবায়নের প্রেরণা জাগাতে এমন আয়োজন সময়োপযোগী এবং প্রয়োজনীয়।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন দৈনিক বাংলাদেশের খবর ও দ্য ফিন্যান্সিয়াল পোস্ট-এর চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান আ ন ম সানাউল্লাহ। তিনি বলেন, এ আয়োজন শুধু একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং কৃতিত্ব ও গুণের প্রতি দায়বদ্ধতার প্রকাশ। আমরা চাই এই আয়োজন প্রতিবছর নিয়মিত হোক।
অনুষ্ঠানে চট্টগ্রামের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কৃতি শিক্ষার্থীদের সম্মাননা সনদ ও শুভেচ্ছা উপহার প্রদান করা হয়। একইসাথে সাংবাদিকতা, শিক্ষা, সমাজসেবা ও সাহিত্য-সংস্কৃতির ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখা গুণীজনদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে চট্টগ্রামের বিশিষ্ট সাংবাদিক, শিক্ষক, রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
এই আয়োজন কেবল একটি অনুষ্ঠান নয়, এটি ভবিষ্যতের বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কৃতি ও গুণী মানুষদের সম্মান প্রদর্শনের মাধ্যমে জাতিকে অনুপ্রাণিত করার এক বলিষ্ঠ প্রয়াস।
এফপি/এমআই