কয়েক বছর আগে দায়মুক্তি পেলেও শেষ রক্ষা হলো না চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইউনুছ ও তার স্ত্রীর। নতুন করে তাদের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন এবং সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে আবারও অনুসন্ধানে নামছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদকের বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, নগরের ফিরিঙ্গি বাজার এলাকার বাসিন্দা আবু আক্তার নামে এক নাগরিক সম্প্রতি দুদক চেয়ারম্যান, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং বিভাগীয় কমিশনার বরাবর লিখিত অভিযোগ জমা দেন। তিনি অভিযোগে উল্লেখ করেন, ২০২২ সালে দুদকের পক্ষ থেকে দেওয়া দায়মুক্তির প্রক্রিয়া ছিল পক্ষপাতদুষ্ট ও অসম্পূর্ণ।
দুদকের আগের অনুসন্ধান অনুযায়ী, মোহাম্মদ ইউনুছ ১৯৮৮ সালে পিয়ন পদে চাকরি শুরু করলেও বর্তমানে তিনি প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত। তার মাসিক বেতন সর্বসাকুল্যে ৩৬ হাজার ৮৩৮ টাকা। অথচ তার নামে রয়েছে চট্টগ্রাম শহরের অভিজাত এলাকায় একাধিক ফ্ল্যাট ও দোকান, গ্রামের বাড়িতে রয়েছে জমি, খামার ও বাগানবাড়ি।
অভিযোগ রয়েছে, তার এক সন্তান ব্যারিস্টারি পড়তে গেছে ইংল্যান্ডে, আরেক সন্তানের বিয়ের আয়োজন হয়েছে নগরের অভিজাত ক্লাবে। এসব ব্যয়ের সঙ্গে তার ঘোষিত আয়ের কোনো সামঞ্জস্য নেই বলেই অভিযোগে বলা হয়েছে।
২০২২ সালের দায়মুক্তির সময় এসব তথ্য উপস্থাপন করা হয়নি বলেও অভিযোগ রয়েছে। অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা লুৎফুল কবীর চন্দনের বিরুদ্ধেও অভিযোগ উঠেছে, তিনি ঘুষের বিনিময়ে 'পরিসমাপ্তি প্রতিবেদন' তৈরি করেন এবং আয় ও সম্পদের অসঙ্গতি ইচ্ছাকৃতভাবে এড়িয়ে যান।
দুদকের হালনাগাদ হিসাবে, মোহাম্মদ ইউনুছের ঘোষিত নিট সম্পদের পরিমাণ ৭৬ লাখ ৭৭ হাজার ৪২০ টাকা এবং তার স্ত্রীর ৯৩ লাখ ৬২ হাজার ৫৫৯ টাকা। তবে তাদের জীবনযাত্রার মান, ব্যয়, বিদেশ ভ্রমণ ও জমি ক্রয়সহ নানা কর্মকাণ্ডের সঙ্গে এই সম্পদের মিল নেই বলে মনে করছে কমিশন।
মোহাম্মদ ইউনুছ দাবি করেছেন, তার ছেলে যুক্তরাজ্যে পড়াশোনা শেষে নিজেই ব্যবসা করছে এবং যে দোকানটি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে তা মূলত তার ছেলের মালিকানাধীন। ক্লাব সদস্যপদের জন্যও নাকি কোনো অর্থ খরচ হয়নি বলেও তিনি দাবি করেন।
অন্যদিকে দুদকের কয়েকজন কর্মকর্তা মনে করছেন, আগের অনুসন্ধান রাজনৈতিক প্রভাবিত ও অপেশাদার ছিল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, “সাবেক এক প্রভাবশালী মন্ত্রীর ছত্রছায়ায় থেকেই ইউনুছ দায়মুক্তি আদায় করেছিলেন। এটি ছিল আইনের অপব্যবহার।”
দুদকের চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক সুকো আহমেদ বলেন, “কমিশনের পক্ষ থেকে নির্দেশনা এলেই আমরা নতুন অনুসন্ধান শুরু করব।”
মোহাম্মদ ইউনুছ এখনো তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন। তবে দুদক নিরপেক্ষ ও পেশাদার তদন্ত চালাতে পারলে এটি দেশের প্রশাসনিক দুর্নীতির বিরুদ্ধে একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
এফপি/রাজ